রাজনীতির ফুটপাত ব্যবসা জাতির অভিশাপ
বহু বেকারের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বেকাররা কি-ই-বা করবে? আয়ের কোনও ব্যবস্থা নাই বিধায় জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে তার ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন।
ইদানিং রাজধানীর ফুটপাতে দোকানের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে । এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ফুটপাতের দোকান উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন ভাবে কাজ শুরু করেছিলো । এমনকি সেনাবাহিনীকেও দেখা গেছে নিউমার্কেটে গিয়ে অগ্রিম ঘোষণা করতে যে, অমুক দিন থেকে আপনারা বসতে পারবেন না। যদি বসেন তাহলে এখানে আমরা থাকতে দিবো না। কেননা, সাধারণ জনতার ভোগান্তির কারণ ঘটিয়ে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসা করতে পারেন না।
কারওয়ান বাজারের রাস্তার বৃহৎ একটি অংশ দখল করে যে তরকারির দোকানগুলো বসতো, সে দোকানগুলো তারা সরিয়ে দিলেন সেনাবাহিনী। কিন্তু কিছুদিন পর আবার আগের মতোই দোকানীরা নিজেদের দোকান আবার পুরোদ্দমে সাজিয়ে বসলেন।
বিগত দিনের সরকারগুলো বেকারত্ব নিরসনে অনেকবার জনগণের আই ওয়াশ করলেও এমতাবস্থা নিরসনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা করতে করেনি। যা করেছে, তা হলো বেকার যুবকদের তারা নিজ নিজ দলের রাজনৈতিক কর্মী বানিয়েছে। আর স্ব স্ব কর্মীদের নিজেদের শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বড় বড় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে নিজেরা বিত্তশালী হয়েছে।
দেশের আপামর জনসাধারণের এবং বেকারদের জন্য রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় নিজেদের চিন্তা ভাবনার কথা বিশাল জনসমাবেশে মাইকের সামনে বললেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। সেজন্যই ফুটপাত মুক্ত করার মহতি উদ্যোগ কখনও সফল হতে পারেনি।
ফুটপাতের দোকান এবং ইদানিংকালে গলির মধ্যে ভ্যান গাড়িতে সবজির ব্যবসা উচ্ছেদকরণ কাজে কখনোই সফল হওয়া যাবে না, যতক্ষণ না রাজনৈতিক নেতারা তাদের চাঁদাবাজি করা বন্ধ করবেন।
জুলাই-আগস্ট'২০২৪ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে যদিও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে, কিন্তু বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারের নেতা পাতি নেতারা ফুটপাত থেকে যে চাঁদা আদায় করতো, অনেক স্থানে হাতবদল হয়ে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে নতুন মুখ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পতিত ফ্যাসিস্টের দোসররা ভোল পাল্টে নতুন খাতায় নাম লিখিয়ে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিগত দিনের চাঁদাবাজি।
কিছুদিন আগে বর্তমান ডিএমপি কমিশনার সাহেব এসে প্রথম বললেন, ফুটপাতে এখন আর কাউকে দোকান করতে দেয়া হবে না। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই তিনি আবার বললেন, ফুটপাতে কেউ দোকান করলে তাদেরকে তো এভাবে হুট করে উঠিয়ে দেয়া যায় না। এ কথা সবার কানে যাওয়ার পর কেন জানি ফুটপাতের দোকানের সংখ্যা আরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। আগে যারা ছিল এখন তাদের সাথে সংযুক্ত হয়েছে আর নতুন কিছু ফুট ব্যবসায়ী।
আমরা সাধারণ মানুষ বিভিন্ন এলাকাতে যারা বাস করি, তারা ঘর থেকে বের হলে দেখি গলির মাঝে ভ্যানে করে তরকারিওয়ালারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, আবার ফুটপাতে দেখা যায় একই অবস্থা।
তাহলে মুক্তকরনের উপায় কি ?
রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের সঠিক প্রয়োগ, জনগণের নিজস্ব উদ্যোগে নিজকে সংস্কার করার প্রবণতা, বেকারত্ব বিমোচন ইত্যাদি কাজগুলো করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশকে এ ধরনের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যায় ।
আশা করি সংশ্লিষ্টরা বিষযটি ভেবে দেখবেন এবং জাতিকে মুক্ত করবেন ইনশাল্লাহ।
লেখক:
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।