‘সাময়িক বরখাস্ত’ আইনের ফাঁকে গলে যায় সব অপরাধ
নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের বিকল্প নেই, আইন সংস্কার করতেই হবে। নো আল্টিমেটাম! জরুরী অধ্যাদেশ দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে হবে যে কোনও মূল্যে।
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে গ্রেফতারকৃত ওসির পলায়ন, যদিও সে থানায় দায়িত্বে বর্তমানে একজন ওসি কর্মরত আছেন। দায়িত্বে অবহেলার জন্য একজন এসআই কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এরকম সাময়িক বরখাস্তের নিয়ম জানা থাকার সাহসেই দায়িত্বরত ব্যক্তিরা নিজেদের দায়িত্বে ফাঁকি দেন। নিজ দায়িত্ব-কর্মে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত না হয়ে যদি চূড়ান্ত বরখাস্ত হওয়ার নিয়ম থাকতো, তাহলে ফল অন্য রকম হতো হয়তো।
বিজ্ঞজনেরা মনে করেন, ওই এসআইকে বরখাস্ত না করে দায়িত্বে কর্মরত যে ওসি সাহেব আছেন তাকেই বরখাস্ত করা উচিত ছিল, কেননা স্টেশনের মূল দায়িত্ব তো তার। আরও যুক্তিযুক্ত হতো যদি এ ধরনের অপরাধের জন্য স্বয়ং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাই জনগণকে সঠিক সেবা দিতে না পারার ব্যর্থতায় স্বেচ্ছায় সরে যেতেন। কেননা পুরো পুলিশ বাহিনীর সর্বপ্রথম দায় তার। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এরকম অপরাধের জন্য দায়িত্বরত মন্ত্রী বা ওরকম পদমর্যাদার ব্যক্তিরা নিজেরাই সরে যান নিজেদের পদ থেকে ।
অরও পড়ুন>> রাজনীতির ফুটপাত ব্যবসা জাতির অভিশাপ
কেউ কেউ হয়তো এ ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলবেন যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে সকল উপদেষ্টারা দায়িত্বরত আছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার জন্য তারা যদি সরে যান তাহলে তো বারবারই সরে যেতে হবে, কেননা এ ধরনের ঘটনাতো বারবার আমাদের দেশে ঘটতে থাকে। সেজন্যেই, মূল স্টেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে তাকেই সরাসরি বরখাস্ত করা উচিত। তাহলে অনান্য সবার কাছে অন্ততঃ এ বার্তা পৌঁছবে যে, কারও কাজে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। তার স্বীয় কর্তব্যকর্মে অবহেলার জন্য তার চাকরি চলে যেতে পারে। তাই চাকরি হারানোর ভয়ে তিনি কর্তব্য কাজে অবহেলা করবেন না ।
এখন প্রশ্ন হলো যে, আমাদের বিদ্যমান আইনে-ই তো সরাসরি বরখাস্তের নিয়ম নেই । বলাই বাহুল্য, সাময়িক বরখাস্তের নিয়ম আসলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল। এটি সরকারি কর্মচারীদের এক প্রকার আইনি সুরক্ষা দেয় এবং এরকম সুযোগের জন্য কর্মচারীরা অপরাধ-কর্ম করতে সাহসী হয়ে ওঠে।
ওসি সাহেব তো পালিয়েছেন। তিনি তো এখন পর্যন্ত দেশের সীমানার ভেতরেই আছেন। জুলাই-আগস্ট '২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে অন্যান্য যারা পালিয়েছেন তারা তো চলে গিয়েছেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। তাদের মতো যেন সে পগারপার হতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা দরকার । তা না করে আমরা সবাই যদি ব্যস্ত থাকি যে উনি কেন পালালো, কিভাবে পালালো এরকম এলোমেলো ভাবনা নিয়ে, তাহলে তো আর সমাধান মিলবে না। এ মুহূর্তে এগুলো চিন্তা করার চেয়ে প্রথম দরকার তাকে যে কোনও ভাবেই হোক পুনরায় গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা।
লেখক:
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।