আইএমএফ’র চাপে আরোপিত কর, সাধারণ জনতার প্রত্যাশা
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়িয়ে তাদেরকে টাকা দিচ্ছেন আর জনগণের কাছে বাড়তি কর আদায় করছেন, এ কেমন বৈপরীত্য ? এতে তো বড় বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই বৈষম্যবিরোধী আন্দলনের ফসল এ অন্তর্বর্তী সরকারে আপনারা। শহীদদের রক্তেরর দাগ না শুকাতেই আপনারা ষৈম্য করছেন।
সাধারণ জনতা কি সবসময়ই এরকম গেড়াকলে পড়ে থাকবে? আবারও বাংলা সে প্রবাদ মনে করিয়ে দিবে যে, ‘পাটা-পুতায় ঘষাঘষি মরিচের জীবন শেষ’। সাধারণ জনতা কি আপনাদের খাবারের উপাদেয় মরিচ?
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এ মরিচরূপী সাধারণ জনতা মরিচরূপে যদি ফুটে ওঠে, কারো চোখে লাগে, তখন চোখ কিন্তু আর বাঁচানো যায় না। যার প্রমাণ আমরা নিকট অতীতে ২৪ এর জুলাই আগস্টে দেখতে পেয়েছি। তাই যারাই যখন সরকারে থাকেন, তাদের অনেক বেশি বিবেচনা করা দরকার এ বিষয়গুলো।
সাংবাদ মাধ্যমে দেখতে পেলাম প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী কর বিদ্যমান, যার বৃহৎ অংশ ফাঁকি দিয়েছে দেশের বড় বড় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী বা এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু যখন কর আরোপিত হয়, তখন সেটার চাপ পুরোপুরি গিয়ে পড়ে সাধারণ জনতার ওপর। আর বিগত দিনগুলোতে আপামর সাধারণ জনতাই সব সময় এরকম ভাবে পিষ্ট হয়ে এসেছে ।
এবার ভেবেছিলাম যেহেতু বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছে, তাদের কোন রাজনৈতিক উচ্চাশা বা অভিলাস নেই। তারা জনতার বন্ধু হবেন। বাস্তবতা বলে দিচ্ছি ভিন্ন কথা! সরকার কর্তৃক জনসাধারণের উপর বর্তমানে বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দেয়ায় বোঝা গেল যে, তারাও বর্তমান ফ্যাসিস্টদের দোসর আমলাদের দ্বারাই প্রভাবিত হচ্ছেন। সে আমলাতন্ত্র তাদেরকে দিয়ে এ কাজগুলি করিয়ে নিচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনেক রাঘব-বোয়ালরাই তো টাকা মেরে দিয়ে চলে গেছেন। সম্প্রতি ছাগল কাণ্ডে মতিউর সাহেবের নাম দেখতে পেয়েছি। সে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে বসুন্ধরা থেকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে তার স্ত্রী সহ। দ্রুত তার বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মতিউর সাহেবদের মত ব্যক্তিবর্গ যাদের কাছে এরকম অনৈতিকভাবে অর্জিত সম্পদ বা টাকাকড়ি আছে। তা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজে লাগানো উচিত। এতে করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব আয়ের একটি ব্যালেন্স তৈরি হবে ।
এছাড়াও বিভিন্ন ঋণ খেলাপিদের ঋণ আদায় করে, নতুন করে যারা ঋণ খেলাপি হতে পারেন তাদেরকে ঋণ না দিয়ে রাষ্ট্রের কোষাগারকে নিরাপদ রেখে জনগণকে বাড়তি করের চাপের আশঙ্কা থেকে নিরাপদ রাখা যেতে পারে।
আই এম এফ এর চাপে সাধারণ জনতার উপর শুল্কের হার বাড়িয়ে দেয়া কোন ক্রমেই জনবান্ধব হতে পারে না। তাতে সামাজিক অস্থিরতা প্রকট হয়ে ফুটে উঠবে এবং সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা বাড়বে।
আমাদের রাজনীতিবিদ এবং সরকার যারা চালান, তারা তো যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী বলেই আমরা জানি। যারা দেশ চালান বিশেষ করে বহুবিধ জ্ঞানের অধিকারী চৌকষ আমলারা যারা আছেন, তারা তো অনেক মেধাবী, বুদ্ধিমান, মার্জিত, উচ্চশিক্ষিত, জ্ঞানী-গুণী মানুষ। সরকারী অর্থে দেশ-বিদেশে তাদের দক্ষতার ট্রেইনিং দেয়া হয়। তাহলে তারা দেশ চালাতে গিয়ে কেনো নিজ দেশের গরীব সাধারণ জনতার দুর্ভোগের কথা স্মরণে রাখেন না। আমার তো মনে হয় তারা নিজেরা ভালো আছেন এবং নিজেকে ভালো রাখার জন্য বাড়তি কোন ঝামেলা নিতে চান না।
তাই গতানুগতিকভাবে তাদের ওপরে যারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের মাথার উপরে আছেন, তাদেরকে পরামর্শ দেন যে, স্যার এইভাবে করেন তাহলে দ্রুততম সময়ে রাজস্ব অর্জিত হবে এবং সরকার চালাতে কোন বাড়তি বেগ পেতে হবে না। ব্যাপারটি এমন আই এম এফ যদি পাটা হয় এবং আমাদের চিন্তাবিদ আমলা-রাজনীতিবিদেরা যদি পুতা হন; তাদের যাতাকলে আমরা 'জনগণ' মরিচের মত ঘষাঘষি খেয়ে মানে কর দিয়ে মরিচের জীবন শেষ।
আরও পড়ুন>> নতুন ভাবে ভ্যাট বাড়ানোর ঘোষণা এবং জনতার ভাবনা
আমরা যেমন আছি চিরদিনই কি তেমনিই থাকবো? এ জাতি মুক্তি পাবে কবে, কিভাবে? কবে আসবে সেই ভাবুক মহামানব দেশপ্রেমিক সত্যিকারের জনবান্ধব সরকার, সত্যিকারের জনগণের বন্ধু?
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার এখন অধিষ্ঠিত আছে এবং যে মহাবীরেরা জীবিত আছেন, আশা করছি তারা সহ আপামর সাধারণ জনতা সবাই মিলে বর্তমান অবস্থার অবশ্যই একটি সুরাহা করবেন। অথবা সামনে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা এ বিষয়গুলো খেয়াল করে বিগত দিনের সরকারগুলোর মত শুধু নতুন নতুন আশার বাণী আর বুলি আওড়াবেন না। বরং সত্যিকারের জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত নেবেন, জনকল্যাণের চিন্তা করবেন এবং জনতার আশার প্রতিফলন ঘটিয়ে জনগণকে সত্যিকারে স্বস্তির বাংলাদেশ উপহার দিবেন। আগামী দিনের নেতৃত্বের কাছে করের বোঝার চাপহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় আছে সাধারণ জনগণ।
লেখক:
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।