আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব
বিগত ৫৩ বছরে সরকারি অফিসগুলোতে ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া ঘুষ দুর্নীতি যেভাবে চলমান আছে, সে অবস্থা তো একদিনে নিরসন করা যাবে না। এ অচলায়তন ভাঙবে কীভাবে? এক বিশাল সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এখনও এধরণের কাজে ব্যস্ত। যাদের সকলেরই আকাঙ্ক্ষা এমন, আমি কিভাবে সম্পদশালী হবো। এবং ন্যায়-নীতি বুঝিনা, যে কোনোভাবেই হোক, আমাকে টাকা উপার্জন করতে হবে।
দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ১৫ লাখ, এর বৃহত্তর অংশ বলতে গেলে পুরোটাই দুর্নীতিগ্রস্ত, যদিও গুটিকয়েক মানুষ এখনো তাদের ন্যায়নীতি ধরে রেখেছেন। তাদের কথা উদাহরণ হতে পারে না, কেননা ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণ হয় না। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্রজনতার গন-অভ্যুত্থানে এ সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে কিছুটা হলেও চির ধরেছে ।
চলমান পরিস্থিতিতে যে সংস্কারের চিন্তাভাবনা চলছে, অচলায়তন তৈরিকারীদের জন্য তা এক বড় ধাক্কা। জনসম্মুখে কিছু প্রকাশ না করলেও দুষ্কর্মকারী লোকজন ভেতরে ভেতরে ঠিকই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আছে। স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা নিজেদের চলমান কাজ বাস্তবায়ন ধরে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট আছে এবং থাকবে।
তাহলে কী এ অচলায়তন ভাঙ্গা যাবে না? অবশ্যই যাবে। যদি বাংলাদেশের আপামর সাধারন জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং মনেপ্রাণে সত্যিকারের ভালো কিছু চায়, তাহলে অবশ্যই এ অচলায়তন চলমান থাকবে না। অচলায়তন ভাঙ্গার এখন ই মোক্ষম সময়, এটি ভেঙে তছনছ করে দিতে হবে। এখনই সময়, এখনই করতে হবে, তা না হলে জাতির জন্য সামনে গভীর অন্ধকার অধ্যায় অপেক্ষা করছে।
প্রথমেই নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট কর্ম চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। এটি কিভাবে সম্ভব? রাজনৈতিক দলগুলির অভ্যন্তরে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করতে হবে, সৎ ও যোগ্য লোককে নেতৃত্ব পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। যেহেতু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই ভবিষ্যতের সরকারের চালকের আসনে থাকবে, তাই তারা যদি নিজেদের মধ্যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান না রাখে, তাহলে তো আর সরকারে গিয়েও গণতান্ত্রিক থাকা যাবে না বরং ক্ষমতার দম্ভে তারা স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে । যা হবে জাতির জন্য অতি নিকট অতীত সময়ের মতোই অকল্যাণকর। স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আবারও সে একইরকম পদলেহনকারী কর্মকর্তা কর্মচারী তৈরি হবে, যারা জাতির কল্যাণের কথা চিন্তা না করে সর্বাগ্রে নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিবে। ফলশ্রুতিতে ঘুরেফিরে একই অবস্থা চলতে থাকবে যুগের পর যুগ।
রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে তার নিজের ভেতর সংস্কার আনতে হবে, তা না হলে কোন লাভ হবে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে ন্যায় নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলেই আমরা পাব সত্যিকারে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, সুন্দর বাংলাদেশ যা আমাদের সকলেরই লালিত স্বপ্ন।
লেখক:
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।