নষ্ট শিক্ষা
শিক্ষা একটা বৃহৎ প্রক্রিয়া। ক্রমাগত সাধনায় কোন একটা বিষয়কে আয়ত্তে আনার নামই শিক্ষা। কিন্তু শিক্ষা বলতে পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানার্জনকেই বুঝায়। বিদ্যালয় হলো তার সূতিকাগার। তবে এটাকে অক্ষরজ্ঞান বলাই উচিৎ। এর বিচারে নিরক্ষর মানুষ আছে কিন্তু অশিক্ষিত মানুষ নেই। একজন মানুষ পড়তে পারে না, তবে কৃষিকাজ ভালো জানে। কেউ হয়তোবা ট্রাক চালেতে পারে কিন্তু পড়তে পারে না। সমাজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলো সনদধারী তৈরি করে, মানবিক মানুষ তৈরি করে না। এর মূল কারণ হলো,"পুথিগত জ্ঞানার্জন।"
শিক্ষা বলতে যদি এই বিদ্যাকে বুঝি তাহলে বলতে এই শিক্ষার উপরই বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে। সবার সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয়েছে, তারা যে শিক্ষা নিয়েছে তা ভুল ছিল! সত্যিকার অর্থে শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে গেছে রেজাল্ট নির্ভর। এখন কোয়ানটিটি আছে, কোয়ালিটি নেই। গোল্ডেন জিপিএ প্রাপ্তও জিপিএ মিনিং জানে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে না! ইদানিং ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। টাকা ইনকাম করছে। কিন্তু কতটুকু বিদ্বান করছে তা বিতর্কিত বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তার গৌরব হারিয়েছে। কোন প্রতিকার নেই। ধীরে ধীরে তলানিতে যাচ্ছে শিক্ষা।
যে যায় লঙ্কা সে হয় রাবণ! শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। যেথায় যা দেখে তাই প্রয়োগ করে। পরিবেশ নেই, জনবল নেই; শিক্ষক নেই। কিন্তু বিষয় আছে। আজব এক দেশ! একদিন অনার্স-মাস্টার্সের ক্লাস করেনি। অথচ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ। বিশেষ গাইড, বাজারে কেনা সিলেবাস হলেই হলো। বহু বহু উদাহরণ আছে। কে দিচ্ছে এ রেজাল্ট? অবশ্যই শিক্ষক! সরকার নয়? সরকার কে? যে যতই বলুক সরকার করছে! আসলে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকরাই এগুলো করছে। কতগুলো তৈলবাজ ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করছে। মনে হয় তাদের বিকল্প নেই। কিন্তু তারাও মরে; তখনও শিক্ষা চলে!
শিক্ষায় এখন প্রাণ নেই। শিক্ষা এখন বাজারের পণ্য যেন। বড় বড় বিষয়! গরীবের সন্তানের শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। কী সমাজ! ফেল করে ঘেরাও করে পাশ করিয়ে দেয়ার জন্য। লজ্জা নেই এখন!
কী আজব বিষয়। গত সরকারের আমলে ডাক্তার হলেন শিক্ষামন্ত্রি। স্বাস্থ্যের দায়িত্বে ডাক্তার নন এ যেন গাড়ি কেনা, ঘোড়ার আগে! শিক্ষা সেই পুরনো সিলেবাস আনা দরকার। গাইড থাকবে না বাজারে, কোচিংও না। জানি বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? আমরাই তো ভালো নই!
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার