Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ফৌজিয়া আক্তার রুবি

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৪:৪৯, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

‘বারডেম’, এক মৃত্যুকুপের নাম!

‘বারডেম’, এক মৃত্যুকুপের নাম!
ছবি: সবার দেশ

হাসপাতাল বা চিকিৎসালয়ে অসুস্থ মানুষ আসে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আশায়। কিন্তু, সেখানে মানুষদের ফিরতে হচ্ছে অর্ধমৃত নয়তো লাশ হয়ে। যেনো মৃত্যুর প্রবেশদ্বার হয়ে অন্ধকার মায়াজাল ছড়িয়ে জরুরিসেবা বা ইমার্জেন্সী প্রবেশ পথ হা করে বসে আছে। 

খুবই জটিল অবস্থা নিয়ে আসা রোগী এক থেকে দেড় ঘন্টা নিথর হয়ে পরে থাকে ফর্মালিটি নামক গ্যাড়াকলে। কেনো রোগী এসেছে, কোথায় তার কষ্ট, নেই কোন আগ্রহ চিকিৎসক নামক প্রাণীর। রোগী ভর্তি করাতে হবে, ওয়ার্ড না কেবিন, টাকা কত ঢালবে এ নিয়ে চলে ক্যানভাসিং। স্বনামধন্য হাসপাতাল এলাম নাকি ফুটপাতের ক্যানভাসারের খপ্পরে পরলাম বুঝা মুশকিল। 

রোগীর জান যায় যায় , সাথে থাকা লোকজনেরও আত্মা বেরুলো প্রায়। সন্ধান চলে এর থেকে মুক্তির উপায়। যদিও মোটা অঙ্কের টাকা ঢালা হয়ে গেছে নির্দ্বিধায়, কিন্ত  সিনিয়র চিকিৎসকের দেখামেলা ভার। কুতকুত খেলে রোগীকে নিয়ে ফেলা হলো কেবিন বা ওয়ার্ডে। আরও সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, যেনো রোগী চিকিৎসা নিতে নয় হাডুডু বা গল্প-আড্ডা দিতে এসেছে। 

রোগীর অবস্থা যখন জটিল থেকে জটিলতর, রোগীর আত্মীয়দের হাহাকার-চিৎকারে যে ক’জন এলেন, দেখে উপায় নেই উনারা ডাক্তার নাকি নার্স! একজন আরেকজনকে দেখছে, কি দেখবে আর কি করবে ভাবছে। অদ্ভুত এক দৃশ্য। এ নিজের চোখে না দেখলে কেউ বুঝবে না জমের বাড়ি কেমন! তারপর শুরু হলো জমরাজের জেরা। রোগীর কথা জড়িয়ে আসছে , শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার ব্যবস্থা নেই। অথচ জেরা চলছে তো চলছেই। 

জেরার মুখে এক পর্যায় উনাদের মনে হলে রোগীর অবস্থা জটিল আইসিইউ লাগবে, লাইফ সাপোর্ট লাগবে। কিন্ত সে ব্যবস্থা তো উনাদের নেই। ইমার্জেন্সী পরিস্থিতিতে ঔষধ নেই, সে আরেক নাটক। যদি এসব কিছু না-ই থাকবে, জটিল রোগী দশতলা বারোতলা উঠানো কেনো! গেইট থেকেই বিদায় দেয়া উচিত। 

এতবড়ো হাসপাতাল এ্যম্বুলেন্স ব্যবস্থা আরও জটিল। রোগীর সাথের লোকজন এসেও যেন পাপ করেছেন। এবার শুরু হলো আরেক দর কষাকষি। সাথের লোকজন যতই বলুক, রোগীকে সুস্থ দেখাই তাদের একমাত্র কাম্য। ততই অপশনের পর অপশন বেরিয়ে আসে। অমুক প্রাইভেট এ্যম্বুলেন্স আছে, তমুকের এ সুবিধা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেসব গুছিয়ে মৃত্যুপুরী থেকে যেই বের হয়ে অন্য হাসপাতাল শিফট করবেন, এবার নানারকম বায়না শুরু। ইনি ট্রলি ধরেছেন, তিনি ইঞ্জেকশন পুশ করেছেন টিপস চাই। রোগী যে তাদের কোন সেবাই পেলো না, তার কোন কষ্ট যে মোচন হলো না, সে ব্যাপারে বিন্দু পরিমাণ অনুতাপ বা লজ্জাবোধ নেই। এটা কি স্বনামধন্য হাসপাতাল, নাকি মৃত্যুকুপ!

লেখক: কবি ও সংগঠক

সম্পর্কিত বিষয়: