না বুঝে পঠিত পুস্তকেরই এত ক্ষমতা! আর বুঝে পড়লে আপনিই সেরা

আচ্ছা আপনার দ্বারা এমন কি কখনও হয়েছে, যেমন একটি পুস্তক যা আপনি বুঝতে পারেন না, কিন্তু সে পুরো পুস্তকটি আপনি শুরু থেকে শেষ অবধি পড়েছেন? কিন্তু বিশ্বাস না হলেও সত্যি যে, এরকম একটি গ্রন্থ আছে যা এ পৃথিবীর হাজার নয়, কোটি কোটি মানুষ না বুঝেই পড়ে থাকেন। বলতে পারবেন সেটি কোন পুস্তিকা?
সেটিই হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মানুষের কাছে প্রেরিত ১০৪টি আসমানী কিতাবের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব কোর'আনুল কারীম। পৃথিবীতে সর্বাধিক পঠিত এ গ্রন্থটি নাযিল হয়েছিলো আমাদের প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর ওপর। এ পবিত্র গ্রন্থটি কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে, যার ঘোষণা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন এ গ্রন্থের মাধ্যমেই।
পবিত্র এ মহাগ্রন্থটি শুধু মুসলিমদের জন্য নয় বরং এটি সমগ্র মানব জাহানের জন্য প্রেরিত একটি গ্রন্থ যা মানব জীবনের গাইডলাইন হিসেবে সারা জাহানের সকল মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছে। অর্থাৎ এটি সকল মানবের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। যারা এটা পড়বে এবং তদানুসারে আমল করবে তারা মুসলিম বা মুমিন হিসেবে চিহ্নিত হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এবং পরকালে তারা জান্নাতুল ফেরদৌস বা চির শান্তির জায়গায় স্থান পাবে আমাদের বিশ্বাস।
পৃথিবীর অনেক মানুষই ইচ্ছে করে এটা তরজমাসহ নিজ ভাষায় পড়ে থাকেন। আবার অনেকে না বুঝেও প্রতিদিন তেলাওয়াত করেন। যদিও শুধু তেলাওয়াতেও সওয়াব হয়ে থাকে। কিন্তু একটা জিনিস আমি পড়লাম কিন্তু তা বুঝতে পারলাম না, সেটা তো চোখ থাকতেও অন্ধের মতই কাজ হলো, তাই না?
এ গ্রন্থটি অনেক অমুসলিম মানুষও গবেষণার জন্য পড়ে থাকেন। পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে, অনেক মানুষ যিনি মুসলিম নন তিনি এ গ্রন্থটি অর্থ সহ বুঝে পড়ে মুসলিম হয়ে গিয়েছেন এবং এরকম ঘটনা অহরহই কোন না কোন জায়গায় ঘটছে, সামনেও ঘটতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। সৃষ্টিকর্তার থেকে এটি একপ্রকার অপার লীলা বিশেষ।
পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন অর্থসহ বুঝে পড়ে আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগে সে মরুভূমি আরবের সবচেয়ে খারাপ কাজ করতো এমন মানুষেরা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন, যা ইতিহাস হয়ে আছে। পরশপাথরসম এ মহাগ্রন্থের স্পর্শে শুধু মরুভূমি আরবের লোকেরাই নয়, আজ পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সাত সমুদ্র তের নদীর এপার ওপার সব জায়গার মানুষই কমবেশি সোনার মানুষ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। কি জাদু আছে এ গ্রন্থটিতে, কোন মানুষ যদি মন দিয়ে তা পড়ে, বুঝে এবং সেরকম আমল বা কাজকর্ম করে, তাহলে নিশ্চিত সে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে নিজে চিহ্নিত হবে তার সমাজে।
উদাহরণস্বরূপ আমরা খোলাফায়ে রাশেদিনের জমানা বা সময়ের দিকে তাকালে ইতিহাস থেকে দেখতে পাই যে, তখন সবচেয়ে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করেছিল সৌদি আরব এবং তার আশেপাশের মরুভূমি এলাকা গুলোতে।
আরও পড়ুন <<>> ভদ্র ব্যবহার সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার
বর্তমান পৃথিবীতেও কোন এলাকাকে যদি মডেল হিসেবে গ্রহণ করে সেখানের মানুষগুলোকে অর্থসহ কোরআন পাঠে উদ্বুদ্ধ করা যায়, আপনি নিশ্চিত থাকুন সে এলাকায় ধনাত্মক পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি সেখানে কোন খারাপ কাজ সংগঠিত হতে দেখা যাবে না। অর্থাৎ সে মডেল এলাকার শান্তির এলাকা হিসেবে রূপান্তরিত হবে। তাই এ মহাগ্রন্থটি সবারই উচিত অর্থসহ বুঝে পড়ে নিজেকে তৈরি করা।
প্রিয় পাঠক, দেখুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুখের জন্য, অন্য লোকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো থাকার জন্য আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় ডিগ্রি হাসিল করতে গিয়ে কত হাজার হাজার বাক্য পড়ে থাকি। অর্থ বুঝে পড়া তো দূরের কথা আমাদের অনেকেরই এমন হয়েছে যে, এ গ্রন্থটির ৬৬৬৬ টি বাক্য পুরোপুরি এখনও পাঠ করা হয়নি। অথচ যে পড়ায় আমাদের বিশ্বাস মতে পরকালে কোন ফায়দা হবে না, সেটি আমরা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি আমাদের জীবনের কমপক্ষে প্রথম ২৫ বছর। আর যেটি আমাদের পরকাল তথা অনন্তকাল ফায়দা দিবে, সেটি আমাদের অনেকেরই অপঠিত রয়ে গেছে।
তাই যারা মুসলিম আছেন, তারা আসুন এ গ্রন্থটি অন্তত জীবনে একবার হলেও অর্থসহ বুঝে পড়ি এবং তদানুযায়ী আমল করি । তাহলে নিশ্চিত আমরা পরকালে চির সুখে থাকতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
আর সম্মানিত অমুসলিম পাঠক, যারা এ মুহূর্তে আমার এ লিখাটি পড়ছেন, তাদের প্রতি আহ্বান রইলো- আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, যেহেতু সৃষ্টিকর্তা প্রেরণ করেছেন, মানেন আর নাই বা মানেন, প্রথমে অন্তত এটি একবার পড়ুন । এমনও তো হতে পারে আপনার নসিবে থাকলে আপনিও মহান স্রষ্টার পছন্দের একজন হয়ে যেতে পারেন। পরিশেষে মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করি যে, তিনি আমাদের কবুল করুন এবং তাঁর বান্দা হিসাবে আমাদের গ্রহণ করুন, আমীন।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।