Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. মোহাম্মদ জহিরুল হুদা জালাল


প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২১ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১৬:১৪, ২১ মার্চ ২০২৫

কোন আওয়ামী লীগ পুনর্জন্ম নেবে? 

সাবের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে কোন আওয়ামী লীগ ফিরবে? ভাসানী- শামসুল হকের আওয়ামী লীগ? স্বাধীনতা পূর্ব শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ? স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ না-কি বাকশাল? না-কি শেখ হাসিনার প্রবর্তিত শেখ পরিবার লীগ তথা বাংলাদেশ জানোয়ার লীগ?

কোন আওয়ামী লীগ পুনর্জন্ম নেবে? 
ছবি: সবার দেশ

মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে মুসলিম লীগ নেতা শওকত আলীর নির্দেশনা ও প্রযোজনায় ১৯৪৯ সালে শামসুল হক এর পূর্ব পাকিস্তান কর্মী শিবির বিলুপ্ত করে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ জন্ম হয়। 

পরবর্তীতে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী কর্তৃক আরেক আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। এ দুই আওয়ামী লীগের জন্মের পর ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি করে আরেকটা ভিন্ন চরিত্রের আওয়ামী লীগ জন্ম নেয়। 

বাস্তবতা হলো, শেখ মুজিবের হাতেই ‘আওয়ামী লীগ’ ১৯৭৫ সালে মারা যায়। নতুন নাম হয় — বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বা.ক.শা.ল)। এ বাকশালী আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোস্তাক এর জারী করা মার্সাল ল/ সামরিক শাসনের সময় আবার মারা যায়। 

পরবর্তীকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় রাজনীতির খোলা দরজা দিয়ে মুচলেকা প্রদানপূর্বক আবারও আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম  হয়। একইসাথে বাকশালেরও পুনর্জন্ম হয়। এ বাকশাল এর একটা শ্লোগান আমার কানে প্রতিধ্বনি করে। শ্লোগানটি ছিলো- ‘জাতির পিতার রক্তে লাল, বাকশাল বাকশাল।’

একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে আমৃত্যু রাষ্ট্র পরিচালনার সুপ্ত বাসনায় সৃষ্ট বাকশাল এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বার জন্ম হলে একদা দেশে এসে বাবার বাকশালের দায়িত্ব না নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন মিসেস হাচিনা বেগম। তার রাজকীয় নাম হয়— শেখ হাসিনা। 

হাচিনা বেগমের আওয়ামী লীগের ধীরে ধীরে সাংগঠনিক বিস্তৃতি হয়, বিপরীতে বাকশাল ক্ষয়িষ্ণু হয়ে মারা যায়। 

বাংলাদেশে চলমান বাঙালি সনাতন জাতীয়তাবাদের রক্ষক ও পরিচালক ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মদদে চলা আওয়ামী লীগের বিপরীতে বাংলাদেশী বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদের সহায়ক শক্তি জামাতে ইসলামীর অপরাধমূলক রাজনীতির ফসল হিসেবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী শক্তি দেশের শাসন ভার গ্রহণ করে। 

আওয়ামী শাসন জারী হবার পরপরই দেশের মানুষ আওয়ামী দৈত্যের অপশাসন টের পায়। পাঁচ বছর আওয়ামী শাসনের দ্বারা টের পাওয়া মানুষেরা ২০০১ সালে শাসকের পরিবর্তন করে। পরিবর্তন হবার পরপর আমাদের প্রতিবেশীরা বিশাল বাজেটের প্রকল্প হাতে নেয়। আমেরিকার ও পশ্চিমা বিশ্বের কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তথা ইসলামভীতির যুদ্ধে সদ্য শাসন ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ নিজস্ব ও বিদেশি অর্থায়নে নতুন পথে হাঁটতে শুরু করে। 

এরাই আমাদের দেশের নির্বোধ হুজুরদের প্রলুব্দ করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম এর স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের ভিতর বাংলা ভাই সৃষ্টি করে। এরাই প্রতিবেশীর আার্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশের ভিতর ৬৩ জেলায় সিরিজ হামলা করে, রমনা বটমূলে বোমা হামলা করায়। এরাই দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার কারিগর। এরাই হওয়া ভবন এর উদ্ভাবক। এরা গ্রেনেড হামলার নেপথ্যের নায়ক। কিবরিয়া হত্যা, বৃটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার পিছনে থাকা নায়ক। 

আর এগুলো ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি হতে চারদলীয়জোটকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে বিচ্ছিন্ন করে লগি-বইঠা তাণ্ডব করে দেশের পরিস্থিতি নাজুক করে ওয়ান ইলেভেনের জন্ম দেয়। 

ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগকে আর পেছনে ফিরতে হয় নাই। দেশে চলে আসে শেখ পরিবার লীগের চিরস্থায়ী শাসন ব্যবস্থা। শেখ পরিবার লীগের ভয়ংকর দুঃশাসন শেষ হতে হতে আবার তাদের পুনর্বাসন কাজ শুরু হয়।

ওদের পুনর্বাসন কাজের কথা প্রকাশ হলে জানতে পারি সাবের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ওরা আবার ফিরে আসবে। তাই ভাবতেছিলাম ওনার নেতৃত্বে কোন আওয়ামী লীগ ফিরবে? ভাসানী- শামসুল হকের আওয়ামী লীগ? স্বাধীনতা পূর্ব শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ? স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ না-কি বাকশাল? না-কি শেখ হাসিনার প্রবর্তিত শেখ পরিবার লীগ তথা বাংলাদেশ জানোয়ার লীগ? 

উল্লেখ্য, সাবের হোসেন চৌধুরী কেমন মানুষ তা তিনি না জানলেও আমরা জানি। উনি যখন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তখন আমি এ মন্ত্রণালয়ের একটা অধিদফতরে চাকরি করতাম। সে সময় পাট আইন, ২০১৭ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সেজন্য তার সাথে আমার বৈঠকে বসা, টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ ছিলো। সেকারণেই তার কমান্ড আমি জানি। ও হ্যাঁ ভালো কথা , আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের রফতানি ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হয়। পাট রফতানি খাতেও ঐ প্রণোদনা দেয়া হয়। এ প্রণোদনার নামে যে হরিলুট হয় তা কিন্তু তার অজানা নয়। প্রণোদনার নামে দুর্নীতির এ চমৎকার খাত সম্পর্কে স্যার অনেক জ্ঞান রাখেন।

লেখক: সরকারি কর্মকর্তা ও গবেষক