যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন: একটি প্রস্তাবনা ও সম্ভাবনা
‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’। একটি বহুল চর্চিত ও চর্বিত শ্লোগান বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে নির্বাচন কনিশন, সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলসহ কোনো স্টেকহোল্ডারদেরই তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। চব্বিশের বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় এবং সুযোগ সামনে এসেছে, সেক্ষেত্রে নির্বাচনী আইন সংশোধন করে ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ সফল করা ছাড়া দেশ এগিয়ে নেয়ার বিকল্প নেই।
বিভিন্ন সমস্যাসঙ্কুল বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনারও একটি দেশ। এ সম্ভাবনার সর্বোচ্চ অর্জন করতে হলে আমাদেরকে বাস্তবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে জনগণের ক্ষমতায়ন, সুশিক্ষা, সচেতনা বৃদ্ধি ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা। বিগত দেড় দশকের পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতে টাকা পাচার বন্ধ করাও নতুন বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম প্রধান কাজ। তবে আজকের প্রস্তাবনা শুধু নির্বাচনে ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে।
‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ প্রস্তাবনায় দুদক, এনবিআর ও নির্বাচন কমিশনকে সৎ, কর্মঠ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন করে ঢেলে সাজাতে হবে। তাদের দিতে হবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা:
র্বিাচন কমিশনের আইন যুগোপযোগী ও প্রায়োগিক করতে হবে। কমিশন পুনর্গঠন করে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সাবমিট করার পর প্রায় ১২০ দিন সময় নিয়ে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা যেতে পারে।
১. নির্বাচন কমিশন সকল প্রার্থীর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরনী সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিবে। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী কিংবা নির্বাচনী এলাকার ভোটার বা তার সম্পর্কে যারা ভালো জানেন, তারা প্রার্থীর সম্পদের সঠিক তথ্য দিতে পারবে। কেউ মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে কিংবা তথ্য গোপন করলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের যে কেউ তথ্যসহ নির্দিষ্ট প্রার্থীর সঠিক তথ্য কমিশনকে অবহিত করবে।
২. সম্পদ বিবরণীর এক কপি দুদকে পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত দুদক আইন ও পুনর্গঠিত দুদক সকল প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করবে কোনো সম্পদ গোপন করা হয়েছে কি-না। যাচাই-বাছাই করবে সম্পদের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য সোর্স অব ইনকাম দেখাতে পেরেছে কি-না।
৩. প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণীর এক কপি পাঠানো হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। সম্পদ এবং সোর্স অব ইনকাম সঠিক হলেও, ট্যাক্স দিয়েছে কিনা সেটা যাচাই করবে তারা? প্রয়োজনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আইন যুগোপযোগী ও প্রায়োগিক করতে হবে।
উপরোক্ত ত্রৈমাত্রিক ছাকনির যে কোনো একটায় অসামঞ্জস্য দেখা দিলেই তার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
অতপর যোগ্যতর ওসি, এসপি ও ডিসি পদায়ন করে, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচ ও প্রচারণা কমিশনের তত্ত¡াবধানে নিয়ে আসতে হবে।
আলোচ্য প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করলে তখন সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য লোকদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। বর্তমানে প্রেক্ষাপটে অনাগ্রহী সৎ ও যোগ্য প্রার্থী তখন নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখাবে। অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন তত্বাবধানে সেনাবাহিনী, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশ পাবে নতুন বাংলাদেশ উপযোগী একটি পরিশীলিত সংসদ ও যোগ্য মন্ত্রীসভা। এমন কঠিন ছাকনির মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষেও তাদের একইভাবে হিসাব প্রদান বাধ্যতামূলক করা হবে।
জনগণ দ্বারা নির্বাচিত একটা ভালো সংসদ ও মন্ত্রীসভা তাদের উপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করবেন। পাশাপাশি দুদক ও এনবিআর এর মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমুহের কর্তাব্যক্তিদের জন্যও বাস্তবায়ন একই নিয়ম বাস্তবায়ন করবেন। তাহলেই দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ কিছুটা বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে দেশের জনগণের স্বার্থে এটা করা যেতেই পারে। তবুও দুদক ও এনবিআর'কে ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ ও কালো-টাকার মালিকদের প্রার্থিতা বাতিলের ব্যবস্থা রাখতে হবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। পুলিশসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঢেলে সাজিয়ে, আর্মির সহযোগিতায় পেশী-শক্তি বিহীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তখন হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘প্রার্থী হবেন? প্রার্থী?’ বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এগিয়ে আসবে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী। যোগ্য সংসদ ও মন্ত্রীসভা গঠিত হলে তারা দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। তথাকথিত সংস্কারও হয়ে যাবে অটোমেটিক।
লেখক: কবি, গীতিকার ও সংবাদকর্মী