Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৭:০০, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

চাকরির লড়াইয়ে চিন্তার মৃত্যু কি অনিবার্য?

চাকরির লড়াইয়ে চিন্তার মৃত্যু কি অনিবার্য?
ছবি: সবার দেশ

সম্প্রতি দেখলাম বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১০ম গ্রেডে চাকরিতে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। সাধারণত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রীধারি শিক্ষার্থীরা সাধারণত ৯ম গ্রেডে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অন্যদিকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে তাদের কর্মজীবন শুরু করেন। 

আমি আশ্চর্য হচ্ছি এটা ভেবে যে, সাধারণত নিচের দিকে ডিগ্রিধারীদের নজর থাকে উপরের দিকে পদপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে তার বিপরীত, উপরের পদে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিচের দিকের পদপ্রাপ্তির জন্য আন্দোলন করছে।  বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষার মান যে অনেক নিচে নেমে গেছে, এ অবস্থা তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

‘আমার পোস্টের বিপরীতে বুয়েটের কতিপয় স্নেহাস্পদ শিক্ষার্থীর বক্তব্য আরও হতাশা ও দূর্ভাগ্যজনক। অনেক ডিপ্লোমাধারীই ছিলেন আমার সুযোগ্য বস, এখনও ডিপ্লোমারাই স্পন্দন’। 

-না এ বক্তব্য আমার নয়, এটি ‘Momin Mozibul Haque Shamaji’ যিনি ছিলেন BUET এর সাবেক শিক্ষার্থী এবং LGED এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তার।

সমাজী স্যারের এফবি প্রোফাইল লিংক https://www.facebook.com/share/1AKK8TJv3D/ 
(কেউ চাইলে প্রোফাইলে ঢুকে তার বক্তব্য টি শুনতে পারেন।)

আরও পড়ুন <<>> পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ 

সবাই পুরোটা দেখবেন, এড়িয়ে যাবেন না। অত্যন্ত দামী কথা, বিশেষ করে যারা ইঞ্জিনিয়ার। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার অথবা গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ার বা কারিগরি শিক্ষায় তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী, সবাই দেখুন। শ্রদ্ধা এ স্যারের প্রতি, তার কথাগুলো অত্যন্ত বাস্তব এবং যৌক্তিক।

তার বক্তব্যের কিছু চুম্বক অংশ আপনাদের জন্য সন্নিবেশ করছি:

  • আমাদের মানসিক দৈন্যতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।
  • এলজিইডি র ওপরের দিক থেকে কমপক্ষে ২০ জন ইঞ্জিনিয়ার আমাদের সকলকে জীবনের কোন না কোন সময় সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার যারা ডিপ্লোমা হোল্ডার তাদের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতে হয়েছে। আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি জনাব মাহফুজ স্যারকে, তিনি ছিলেন ডিপ্লোমা ডিগ্রি হোল্ডার এলজিইডি এর একজন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। আমি ওনার অধীনস্থ হিসাবে এলজিইডি তে জয়েন করেছিলাম। তখন কিন্তু আমার একেবারেই মনে হয়নি আমি কেন তার অধীনে কাজ করবো, যদিও আমি বুয়েট থেকে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া একজন ইঞ্জিনিয়ার, ইন্টারমিডিয়েটে স্টার পাওয়া একজন ছাত্র ছিলাম। তিনি আমার বস ছিলেন, স্যারের আন্ডারে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে কোন হীনমন্যতা কাজ করেনি। 
  • এলজিইডি গভীরভাবে স্মরণ করবে জনাব গোফরান স্যারকে, যিনি নিজে একজন ডিপ্লোমা হোল্ডার ছিলেন এবং বাংলাদেশের বায়োগ্যাস প্রকল্প টিকে এলজিইডির সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব কামরুল ইসলাম স্যারের মাধ্যমে প্রমোট করেছিলেন।
  • ২০২০ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি প্রকল্প এলজিইডি কিছুতে উঠাতে পারছিল না। ইতিমধ্যে করোনা মহামারী চলে এসেছিলো। আমি তখন দুইজন  ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে একটি প্রকল্প সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করি, যার সুফল বর্তমানে এবং আগামীতে এলজিইডির সকল ইঞ্জিনিয়ার সাহেবেরাই ভোগ করবেন। যা অন্তরালে থাকলেও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কিন্তু ঠিকই জানে, তাদের কাছে কিন্তু ঠিকই রেকর্ড আছে এখানে কার কার অবদান ছিলো। তাই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ছোট করে দেখার কোনই কারণ নেই, যে যার জায়গায় সে সে মহান।
  • বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মেধাবী, তারা তাদের মেধাকে শানিত করে আরো উপরের দিকে যাবে । তারা কেন বিসিএস দিয়ে চাকরি করতে আসবে। তারা তো একেক জন উজ্জ্বল নক্ষত্র। কই রবীন্দ্রনাথ নজরুল তো তাদের কীর্তি লিপিবদ্ধ করার সময় অন্য কোন লেখককে থ্রেড মনে করেননি। বরং তারা তাদের উদ্ভাবনি জ্ঞান ব্যবহার করে বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে রয়ে গেছেন। একজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, আরেকজন বিদ্রোহী কবি হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।

ঠিক তেমনটি বুয়েটের শিক্ষার্থী বা ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ার, তারা কেন নিজেদের মেধা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশকে নতুন নতুন আবিষ্কার দিতে পারছে না। তারা কেন এমআইটি, নাসা বা সেরকম বড় বড় গবেষণা কেন্দ্রে কাজ না করে চাকরির জন্য হন্য হয়ে অবশেষে তাদের কাঙ্ক্ষিত  গ্রেডের নিচে এসে চাকরি খুঁজতে যাবে, তাদের কেন এরকম অবস্থা হবে, শিক্ষার এমন দৈন্যতা কেন এ দেশে! (চলবে,,,)

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: