শিমলা চুক্তি বাতিল: কাশ্মীরের সম্ভাবনা, বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা

সম্প্রতি পাকিস্তান ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বিশেষত কাশ্মীর ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। এ নিয়ে নানা আলোচনার মাঝেও এখন প্রয়োজন ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টি পর্যালোচনা করা।
১. শিমলা চুক্তির প্রেক্ষাপট
১৯৭১ সালে দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ভারত ও মুক্তিবাহিনীর কাছে, আর ভারত প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরে রাখে। এ পটভূমিতে ১৯৭২ সালে ভারত ও পাকিস্তান শিমলা চুক্তিতে উপনীত হয়।
চুক্তির মূল দুটি দিক ছিলো, তা হলো- ভারত পাকিস্তানি বন্দিদের ফেরত দেবে, আর বিনিময়ে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুকে দ্বিপাক্ষিক পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলবে না। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়, বাংলাদেশের ভূমি ও আত্মত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে হলেও এ চুক্তিতে বাংলাদেশের কোনও উপস্থিতি ছিলো না, ঠিক যেমন ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্বসমর্পনের মুহূর্তটির মতো।
২. বাংলাদেশের অনুপস্থিতি: এক নিঃশব্দ স্বাক্ষর
যুদ্ধ হয়েছিলো বাংলাদেশের মাটিতে, বিজয় এসেছিল লাখো শহীদের রক্তে, অথচ সে যুদ্ধ-পরবর্তী কূটনীতিতে বাংলাদেশ ছিলো অনুপস্থিত। ভারত-পাকিস্তান নিজেদের স্বার্থে আলোচনায় বসে, বন্দি সেনাদের বিনিময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে সুবিধা আদায় করে নেয়। বাংলাদেশের ভূমিকা যেন থেকে যায় একপাক্ষিক ইতিহাসের পাতায়।
আরও পড়ুন <<>> ওয়াকফ আইন-পেহেলগাম হামলা কী পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত?
৩. চুক্তি বাতিলের তাৎপর্য
পাকিস্তান এখন শিমলা চুক্তিকে বাতিল করে কাশ্মীর ইস্যু আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলতে পারবে। এটা কাশ্মীর নিয়ে নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে পারে। তবে বাংলাদেশের জন্য এতে বাস্তবিক কোনও হুমকি নেই। পাকিস্তান নতুন করে বাংলাদেশ নিয়ে দাবিদাওয়া তুলবে এমন আশঙ্কার বাস্তব ভিত্তি নেই।
৪. ইতিহাসের শিক্ষাঃ স্বার্থই মুখ্য
এ চুক্তি ও তার বাতিল আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় যে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ন্যায়ের চেয়ে স্বার্থ বড়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো ন্যায় ও মানবাধিকারের লড়াই, কিন্তু সে চেতনা প্রথমেই ব্যবহৃত হয়েছে বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে।
আজ আমাদের প্রয়োজন ইতিহাসকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করা। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ আমাদের সংগ্রাম, রক্ত ও আত্মত্যাগকে নিজেদের কৌশলে ব্যবহার করতে না পারে।
লেখক:
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক।