Advertisement

ড. মোহাম্মদ জহিরুল হুদা জালাল


প্রকাশিত: ১৪:০৬, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৬:০২, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

যুগসূচনাকারী ওই সময়ে ইতিহাস জিয়াউর রহমানকে জন্ম দিয়েছে

জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম শপথবিহীন রাষ্ট্রপতি

জিয়া হলেন ইতিহাসের সেই সন্তান যিনি স্ব-কণ্ঠে পাকিস্তানের অখণ্ডতা খণ্ডের ঘোষণা করে ‘দেশাদ্রোহী’ হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি হয়েছিলেন।

জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম শপথবিহীন রাষ্ট্রপতি
ছবি: সবার দেশ

১৯৭১ সালের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে একজন রাজনৈতিক নেতার নাম আমাদের নিতে হয়, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। সময় তাকে বাংলাদেশের স্থপতি করেছেন। তাকে বাদ দিয়ে ইতিহাসের এ সময়ের কথা লেখা যায় না। তাই তিনি অবিসংবাদিত হয়েছেন। 

স্বাধীন বাংলাদেশের কথা লিখতে গেলে শেখ মুজিব এর নাম আসবে। কিন্তু তিনি আসবেন রাজনৈতিক নেতার আসনে। তিনি রাজনীতি করেছেন। রাজনীতির ব্যাকরণ তিনি জানেন। ব্যাকরণ জানেন বলে তিনি রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছেন। তার পক্ষে নিজের কণ্ঠে ইন্ডিপেনডেন্ট শব্দ দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় তিনি সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন—
❝আইয়ুব এর শাসন 
শেখ এর ভাষণ❞ উপাধিতে ভূষিত। 

জ্বি, শেখ মুজিবের ভাষণে একটা চৌম্বকীয় আকর্ষণ ছিল। এক কথায়— তার কথা সাধারণ মানুষ ‘গোগ্রাসে গিলতো।’ তার বক্তব্য চয়নে মুন্সীয়ানা ছিলো। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য তাদের অনুসারীরা শোনেন, তাদের বক্তব্যে কোন সম্প্রদায় অখুশি হন না। কোন ব্যক্তি অখুশি হন। 

যা-ই হোক ওসব কথা বাদ। রাজনৈতিক নেতারা তাদের রাজনৈতিক দল পরিচালনা করার পাশাপাশি সামরিক শাখা তৈরি করেন না। শেখ মুজিবও করেন নাই। শেখ মুজিব কখনো ‘কাঁটাবনে’ হাঁটার পাবলিক ছিলেন না। ‘কাঁটাবনে ভাল নেই’ চরিত্র বহণ করতেন। এ ধরনের এক রাজনৈতিক নেতার নিকট হতে সামরিক অভিযান হলে তার পরিনতি ভাববার অবকাশ ছিলো না। 

অথচ তার নামেই দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে সামরিক অভিযানের মুখোমুখি করেছে। সামরিক অভিযানের প্রাক্কালে তিনি নিজের বাসায় বসে গ্রেফতার হলেন। রাতে অপারেশন সার্সলাইট দ্বারা যা ঘটলো তা বর্ণনাতীত। 

জাতিগতভাবে আমাদের ভূখণ্ডের মানুষ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে— যতো যা-ই হোক, সেনাবাহিনী নামলে সব ঠিক হবে। এটা আমাদের দেশের মানুষের শেষ ভরসার স্থান। ঠিক তেমনটিই দেখা গেলো একাত্তরে। দিকবিদিকশুন্য জনগণ ওই সময় একজন মেজরের কণ্ঠে দেশের স্বাধীনতার ডাক শুনেন। মানুষ বিশ্বাস করেন আল্লাহু আকবর। সেনাবাহিনী আমাদের স্বার্থে আছে। মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী একজন মেজর নিজের মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ জেনে বুঝে পুরো দেশের মানুষকে জানিয়ে দিলেন— 
দেশ স্বাধীন করতে আমাদের সামরিক শাখার জন্ম হয়েছে।

তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি ও সামরিক প্রধানের অবস্থান জানিয়ে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়ার কথা আসলে তিনি শেখ মুজিবের নামে তার স্ব কণ্ঠে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করেন। যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে দেশে-বিদেশে। 

পরবর্তীতে ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। তাহলে প্রশ্ন আসে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ হতে ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ পর্যন্ত আমরা কী সরকারহীন ছিলাম? এটা তো হতে পারে না। এদিকে বাংলাদেশের জন্মদিন হলো ২৬ মার্চ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ তারিখে। 

আমরা যদি বিবেচক হই, আমাদের ২৬ মার্চকে যদি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়, তাহলে ছোট্ট একটা প্রশ্নের উত্তর দিন! ২৬ মার্চ হতে ১৭ এপ্রিল আমাদের সরকার ছিল কি? যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সরকারের প্রধান ছিলেন? জ্বি, ইতিহাস তার নিজের নিয়মেই সময়ে তার নেতা জন্ম দেয়। যুগসূচনাকারী ওই সময়ে ইতিহাস জিয়াউর রহমানকে জন্ম দিয়েছে। তিনি প্রথম শপথবিহীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

জিয়া হলেন ইতিহাসের সেই সন্তান যিনি স্ব-কণ্ঠে  পাকিস্তানের অখণ্ডতা খণ্ডের ঘোষণা করে ‘দেশাদ্রোহী’ হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি হয়েছিলেন। 

তিনি সেনা সদস্য হয়ে সেনা আনুগত্য লঙ্ঘন করে মৃতদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের অখণ্ডতা খণ্ড করতে অস্ত্র নিয়ে ব্রিগেড গঠন করে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে মৃত্যু দণ্ডের দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের শপথ ভংগ করে মৃত্যু দণ্ডের দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। তিনি সেনা আইন লঙ্ঘন করে ‘ডেজার্টেশন’ পূর্বক মৃত্যু দণ্ডের দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। অর্থাৎ তিনি পাঁচবার মৃত্যু দণ্ডের দণ্ডনীয় অপরাধ করে দেশের স্বাধীনতায় অমর হয়েছেন। 

ধরা যাক, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করতে পারিনি। যে কোনওভাবে পাকিস্তানের সাথে সন্ধি করে দেশের স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা হলো। সন্ধির প্রথম শর্তে থাকতো— শেখ মুজিবের মুক্তি। দ্বিতীয় শর্ত হতো— তাকে প্রাদেশিক সরকারের প্রধান করা। কেনোনা শেখ মুজিব নিজে স্বাধীনতা ঘোষণা না করে নিজের বাঁচার পথ খোলা রেখেছিলেন। তিনি তখন বলতেন, আমি তো দেশের স্বাধীনতা চাইনি, স্বাধীনতা ঘোষনাও করিনি আমি। পোলাপানগুলো ঝামেলা করেছে, পাকিস্তান ভাঙতে চাইছে, ওদের দেশের আইনে বিচার করেন। ব্যাস, কেল্লাফতে। শহীদ জিয়াউর রহমানের পাঁচবার ফাঁসির আদেশ হতো, এবং তা বাস্তবায়ন হতো। ইতিহাসে আগত মুজিব পরিবার যেমন ছিলো তেমনই রাজ ক্ষমতা ভোগ করতো। 

১৯৭১ কে কেন্দ্র করে ইতিহাস শেখ মুজিবকে গড়েছে, তেমনি জিয়াউর রহমানকে তৈরী করেছে। ইতিহাসের তৈরি করা এক কিংবদন্তি সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়াউর রহমানের আজকে জন্মবার্ষিকী। তার জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। জ্বি, আমি এক কিংবদন্তির পিঠে রক্ত জবার ক্ষত থাকার কথা বলতে এসেছি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের আলোকবর্তিকা। তার উত্তরাধিকার তারেক রহমান কতপ্রকার বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আজকের অবস্থায় এসেছেন তা নিয়ে অন্য সময় বলবো। আজকে না। তিনি বঙ্গসিরাজ হয়ে আমাদের মাঝে আসবেন, থাকবেন বলে বিশ্বাস করি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে আমার আজন্ম প্রচেষ্টা। যদিও আমি কিছু নই। আমি কিছু নই।

লেখক: সরকারি কর্মকর্তা ও গবেষক