Advertisement

আবদুল মাজেদ


প্রকাশিত: ১৪:২১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

গণভবনের কাছে জঙ্গীনাটক না করলে চলতো না- আইজিপিকে প্রশ্ন হাসিনার

‘ধানচোর নাটক’ই হাসিনার  জঙ্গীনাটক

‘ধানচোর নাটক’ই হাসিনার  জঙ্গীনাটক
ছবি: সবার দেশ

২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী-দুঃশাসন আমলে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেইল, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলি টানেলের মত মেগা-প্রকল্প যেমন বাস্তবায়িত হয়েছে, তেমনি অপহরণ, গুম, ক্রসফায়ার, ৫ মের গণহত্যার মত জঘন্য ঘটনার সাথে সাথে অসংখ্য জঙ্গীনাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।

মেগা-প্রকল্পগুলোকে উন্নয়ন বলা যাবে কী না, কিংবা এগুলো সম্পদ না দায় নাকি অর্থ পাচারের উপলক্ষ্যমাত্র তা অনুধাবনের জন্য গবেষণার প্রয়োজন নেই। একটু নির্মোহ দৃষ্টিতে ভাবলেই পরিস্কার হয়ে যাবে। তবে তথাকথিত জঙ্গী দমনের প্রত্যেকটি ঘটনাই যে আসলে সাজানো নাটক তা ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই আমরা আঁচ করতে পেরেছিলাম। 

মাছির চোখ মাথার উপরে থাকে, তাই চক্রাকারে তারা চারিদিক দেখতে পারে। সে অর্থে মানুষ আসলে একচোখা, একসাথে কেবল একদিকেই দেখতে পারে। কিন্তু একটি দেশে মানুষ তো আর একজন দুজন না, যে একচোখা হরিণীর মত নদীর দিকে পিছন ফিরিয়ে বনের দিকে মুখ করে থাকবে। দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের ৪০ কোটি চোখকে সম্মিলিতভাবে যদি মাছির চোখের সাথে তুলনা করা হয়, তবে সরকার যে কোনো কর্মসাধনে যত গোপনীয়তাই অবলম্বন করুক না কেনো সেটি জানাজানি হবেই। তাই বিগত ফ্যাসিস্ট কিংবা লুটেরা আওয়ামীলীগ সরকার অপহরণ, গুম, খুন, অগ্নিসংযোগ, ক্রস ফায়ারের মতো কাজ যত গোপনেই করুক না কেনো, ঘটনার পরপরই এর উদ্দেশ্য কুশীলবদের সম্পর্কে জনগণের জানা হয়ে যেতো। কিন্তু সরকারের দমন-পীড়নের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস করতো না। 

পান্থপথের কাছে একটি বাড়িতে তথাকথিত জঙ্গী দমনের পর উক্ত নাটক সম্পর্কে তদানিন্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, গণভবনের এত কাছে জঙ্গী নাটক না করলে চলতো না? 

কী আশ্চর্য! এ কাহিনী আবার আওয়ামী শাসন আমলেই জনাব শহীদুল হক তার আত্মজীবনীতে লিখেও গেছেন। এখানে আমার একটি বিষয় জানতে ইচ্ছা করে। প্রধানমন্ত্রীর এহেন অবজ্ঞাসূচক মন্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহা-পরিদর্শক যেহেতু অবাক হয়েছেন, তাহলে কি জনাব শহীদুল হকও নাটক সম্পর্কে কিছু জানতেন না। না কি পুলিশের মধ্যম সারির কর্মকর্তাগণ প্রধানমন্ত্রী এবং তার প্রতিবেশী প্রভূকে খুশি করার জন্য নিজ দায়িত্বে এসব জঙ্গী নাটক সাজাতেন। জঙ্গী নাটকগুলো যে, নিছক নাটক ছিল সে রহস্য ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পরে একে একে উন্মোচিত হচ্ছে। 

বাংলাদেশে এ ধরণের জঙ্গী নাটক নতুন নয়। এগুলো বেশ পুরনো এবং গ্রামে-গঞ্জে এর কতকগুলো গঠনমূলক রূপও রয়েছে। আমন মৌসুমে গ্রামের ধানক্ষেত থেকে রাতের আঁধারে ধান চুরির ঘটনা এদেশে সুবিদিত। তখন রাতে ধানক্ষেতের মালিকেরা সাধারণত ধানক্ষেত পাহারা দেয়। তবে মাঝেমাঝে ক্ষুদ্রচাষী কিংবা ভাগচাষী যারা তাদের ভিতরে রাত জেগে পাহারা দেয়ার কাজে অনীহা দেখা দেয়। তখন অপেক্ষাকৃত ধনী কৃষক যারা তারা একটু বিপাকেই পড়ে যায়। 

আমার নিজের সাম্যন্য ধানের চাষ থাকায় আমিও মাঝেমাঝে রাতে ধানক্ষেত পাহারা দিতাম। একদিন রাতে হঠাৎ মাঠের অপর প্রান্ত থেকে চিৎকার ভেসে এল, ‘চোর চোর চোর, ধান কেটে নিয়ে গেল’-বলে। টর্চের আলো জেলে পড়িমরি করে মাঠের অপর প্রান্তে গিয়ে দেখলাম, অপেক্ষাকৃত উচু জমিতে শিমুলগাছের তলায়, যেখানে ধান ভালোমত ফলেনি, সেখানে ধান কাটা রয়েছে। ধানের বিচালি নিয়ে যায়নি, ক্ষেতেই পড়ে আছে। 

এ ঘটনায় সবাই খুব সজাগ হয়ে গেলো এবং বেশ জোরেশোরে পাহারা দেয়ার কাজ করতে লাগল। কিন্তু আমার মনে কেমন খটকা লাগল। প্রথমত: সন্ধ্যাবেলা চোর আসবে কেনো? দ্বিতীয়ত: যে সব নিচু জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, সে জমির ধান বাদ দিয়ে গাছতলার উচু জমিতে আধমরা রোদে পোড়া ধান কেনো চোরে কাটবে? তখন আমার মনে হলো, যে জমির ধান কাটা হয়েছে, সে জমির মালিক বেশ ধনী। তার ২০/২৫ বিঘা জমিতে ধানের চাষ। সে ইচ্ছাকৃতভাবেই তার মালিকানাধীন প্রায় একশতক জমির আধমরা ধানগাছ কেটে জমিতে ফেলে রেখে নিজেই চিৎকার করে লোক জড়ো করেছে। গ্রামের তেউড়ে যেমন শহরে এসে খেসারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, তেমনি গ্রামের এ ধানচোর-নাটক রাজধানীতে এসে শেখ হাসিনার আমলে জঙ্গীনাটকে রূপ নিয়েছে। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো সময়টাতে সন্ধ্যাবেলা কারফ্যু জারি করা হতো। আমাদের গ্রামের একপ্রান্তে অবস্থিত পাকারাস্তার ধারে যে হাট বসত সেখানে রাত নয়টার ভিতরে আলো নিভিয়ে দ্রুত হাট ত্যাগ করা বাধ্যতামূলক ছিল। এর ব্যত্যয় হলে স্থানীয় রাজাকাররা লাটিপেটা করতো। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কেরোসিনের কুপি নিভিয়ে দেয়া হতো, হারিকেনের চিমনি ভেঙে দেয়া হতো। তখন হাটুরেদের ভেতরে হুড়োহুড়ি পড়ে যেতো, পড়িমড়ি করে দোকান বন্ধ করে হাট ছেড়ে পালাতো। কোনো কোনো দিন রব উঠত, পাকিস্তানি আর্মি এসেছে। শোনার সাথে সাথে যে যেদিকে পারে উর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়। আবার এমনও গুজব বাজারে ছেড়ে দেয়া হতো, বাজারের ভেতরে মুক্তিফৌজ ঢুকে গেছে। তখন রাজাকাররা পিটিয়ে হাট খালি করে দিতো। আসলে রাজাকাররাই মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে স্নায়ূর চাপে ভুগত। তারা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে তাদের ভয়কে হাটের সাধারণ জনসাধারণের ভিতরে সংক্রমিত করে দিতো। 

ঠিক কোন মাস ঠিক বলতে পারবো না, তবে বর্ষাকাল । হাট থেকে ফিরছি রাত সাড়ে নয়টার দিকে। পাকারাস্তা ধরে ৫০০ গজ মত উত্তরে গিয়ে গ্রামরে ভিতরে মাটির রাস্তা ধরেছি। এমন সময় শুরু হলো গুলির বৃষ্টি। মনে হলো মাথার খুব কাছ ঘেঁষে প্রায় চুল স্পর্শ করে গুলি চলে যাচ্ছে। আমাদের ডানদিকে ১০/১২ ফুট উচু মাটির ঢিবির উপর হরিপদ দাসের ঘন বাঁশঝাড়। হাটের দিক থেকে আগত রাইফেলের গুলি কোনো অবস্থাতেই আমাদের গায়ে লাগার সুযোগ নেই। কিন্তু এত প্রণ্ড শব্দ যে, ঘটনার আকস্মিকতায় মূহূর্তের মধ্যেই হাঁটুভেঙে উবু হয়ে বসে পড়লাম। হারিকেনের সলতে নামিয়ে দিলাম, যাতে দূর থেকে দেখা না যায়। এভাবে ঘন্টাখানেক গোলাগুলি চললো। গোলাগুলি থামলে হারিকেনের সলতে উসকে দিয়ে বাড়ির দিকে চললাম। 

পরদির সকালে বাজারে গেলাম ঠিক কী ঘটেছিল জানার জন্য। দেখলাম বাজারের উত্তর দিকে নিচু জায়গায় পাটক্ষেতের আশেপাশে উৎসুক মানুষের ভিড়। পাটক্ষেতে হাঁটু সমান পানি। দেখা গেলো পাটের ছোটছোট সরু শাখায় ভারতীয় সৈনিকের টুপি ঝুলানো আছে। সবাই বলাবলি করছিলো, কাল রাতে নাকি ভারতীয় সৈন্য বাজারে অবস্থিত রাজাকার-ক্যাম্প আক্রমণ করেছিলো। তাই ভারতীয় সৈন্যদের সাথে রাজাকারদের গুলি বিনিময় হয়েছে। ভারতীয় সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের টুপি ফেলে গেছে। 

কেবল আমার মত সন্দেহবাতিকগ্রস্ত দুয়েকজনকে চুপিসারে বলতে শুনলাম, রাজাকার-ক্যাম্পে পর্যাপ্ত জনবল ও অস্ত্র-গোলাবারুদ নেই। রাজাকাররা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলো। দীর্ঘদিন যাবৎ তারা যশোরে রাজাকারদের হেড কোয়ার্টারে এবং ক্যান্টমেন্ট-কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল ও গোলাবারুদের চাহিদা দিয়ে আসছিলো। কিন্তু তাদের দাবী পুরণ করা হয়নি। এ জন্য তারা ভারতীয় সৈনিকের টুপি যোগাড় করে পাটক্ষেতে ঝুলিয়ে রেখে নিজেরাই রাইফেলের ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভারতীয় সৈন্যদের সাথে যুদ্ধের নাটক করেছে। এসব কথা শুনেও না শোনার ভান করতে হয়, তাই আমিও এ কথায় কান দিইনি। শেখ হাসিনার দুঃশাসন আমলের জঙ্গী নাটক সম্পর্কেও সবার দর্শন ছিল ‘সি নাথিং, সে নাথিং, হিয়ার নাথিং’। 

আওয়ামীলীগ সরকারের জঙ্গী নাটক পুরাতন বোতলে নতুন মদ ঢালার মতো যেমন নতুন কিছু নয়, তেমনি তাদের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপিও নতুন কিছু নয়। নতুন যে নয়, সেটা আমি বললে তো আর বিশ্বাস হবে না। কারণ যখন থেকে আওয়ামীলীগ নির্বাচনে জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে তখন তো আমার জন্মই হয়নি। তাই নির্বাচনে শতকরা ১০০ ভাগ কারচুপির ভোটের কুশীলবের মুখেই বরং শোনা যাক। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘পুরনো সেই দিনের কথা’-তে জনাব আকবর আলি খান নির্বাচনে তিনি যে ভাবে কারচুপি করে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে পাশ করিয়েছিলেন সে কারচুপির অভিনব কেতা-কায়দা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি নিজেই। তিনি বলেনঃ
‘১৯৬৫ সালে বুনিয়াদি গণতন্ত্রের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সম্মিলিত বিরোধী দল। বাইরে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকলেও ভেতরে এরা সবাই নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইছিলো। তাই প্রতিটি দলই তাদের পছন্দমত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করছিলো। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ হল, ইকবাল হল এবং পার্শ্ববর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসস্থল নিয়ে একটি নির্বাচনী এলাকা গঠন করা হয়। 

সলিমুল্লাহ হলে তখন ছিল ছাত্র ইউনিয়নের প্রাধান্য। সলিমুল্লাহ হল থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আইয়ুব রেজা চৌধুরীকে এ আসনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। অন্যদিকে ইকবাল হলে ছিল তখন ছাত্রলীগের প্রাধান্য। ছাত্রলীগ এ আসনে একজন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ পর্যন্ত ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রলীগ একজন প্রার্থী সম্পর্কে একমত হতে পারেনি। সুতরাং দুজন প্রার্থীই থেকে যান। 

নির্বাচনের আগে বেশিরভাগ ছাত্রনেতা ঢাকা ছেড়ে পল্লি অঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে যান। ইকবাল হল ও সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা নির্বাচনের সময় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে একমত হন যে এ আসনে ছাত্র ইউনিয়নের আইয়ুব রেজা চৌধুরীর প্রার্থিতা থাকবে। ছাত্রলীগ তাদের প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচার করবে না এবং প্রার্থীর কোনো নির্বাচনী এজেন্টও ভোটকেন্দ্রে থাকবে না। 

এ আসনের ভোটকেন্দ্র ছিল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চের ভবন। সেখানে কয়েকটা কামরা খালি করে ভোটকেন্দ্র করা হয়। কোনো এক সরকারি ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে এ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয় এবং ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কিছু প্রাথমিক শিক্ষককে পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। আমাদের তখন এমএ পরীক্ষা সামনে। তাই আমরা নির্বাচনী প্রচারে গ্রামে যেতে পারিনি। তাই আমাদের ঢাকা শহরে দায়িত্ব দেয়া হয়। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা এসএম হলে এসে আমাকে বললেন যে আমাকে আইয়ুব রেজা চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ট হতে হবে। আমি বললাম, আমি ভোটার নই। আমার বয়স একুশ বছর হয়নি। তিনি বললেন, নির্বাচনী এজেন্টের বয়স নিয়ে আইনে কোনো বিধান নেই। সুতরাং বাধ্য হয়ে আমি রাজি হলাম। 

নির্বাচনের দিন আমার বন্ধু বান্ধবদেরকে নিয়ে আমি ভোটকেন্দ্রে গেলাম। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় মনে হলো যে সলিমুল্লাহ হল ও ইকবাল হলের যেসব ছাত্র একুশ বছর বয়সের বেশি, তাদের সিংহভাগ গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা করতে চলে গিয়েছে। তাই আইয়ুব রেজা চৌধুরীকে পাশ করানোর মতো যথেষ্ট ভোটার নেই। সৌভাগ্যবশত কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে যখন পোলিং এজেন্টের সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তখন কেন্দ্রের একটি ভোটার লিস্টও তারা আমাকে দেয়। ভোটার লিস্টটা আমার বন্ধুদের হাতে দিয়ে বললাম, এ লিস্টের ভিত্তিতে তোমরা একেকজন এসে দাবী করবে তুমিই এ ভোটার। যেহেতু বিরোধী দলের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই, সুতরাং এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না। অনায়াসে শতকরা ১০০ ভাগ জাল ভোট দিয়ে আমরা আমাদের প্রার্থীকে জয়ী করতে পারবো। আমার বন্ধুরা আমার বক্তব্যকে সমর্থন করলেন। তারা হলে গিয়ে ভোটার নয়, এ রকম ছাত্রদের ভোটার পরিচয় দিয়ে ভোটকক্ষে হাজির করলেন। এরাই প্রকৃত ভোটার বলে আমি প্রত্যয়ন করলাম, প্রিসাইডিং অফিসারের কিছু করার ছিলো না। তাদের ভোটের ভিত্তিতে শ খানেক ভোটে আইয়ুব রেজা চৌধুরী নির্বাচিত হন। তার বিরোধী পক্ষে ভোট ছিল শূন্য।’

যাই হোক, আওয়ামীলীগের জঙ্গীনাটক, জালভোট নতুন কিছু নয়। এগুলো তাদের আমলেই ঘটেছে। এদেশেই ঘটেছে। সে পুরনো কৌশল আওয়ামীলীগ নতুনভাবে একটু ভিন্নভাবে প্রয়োগ করে ভেবেছে কেউ জানবে না, বুঝবে না। অনেকটা শিশুদের লুকোচুরি খেলার মতো, শিশুরা দুহাতে নিজের চোখ ঢেকে তার সংগীসাথীকে বলে তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না। বালিতে মুখগুঁজে উটপাখি যেমন ভাবে মরুঝড় বুঝি তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু অন্ধ হলে যেমন প্রলয় বন্ধ হয় না, তেমনি আওয়ামীলীগ ভেসে গেছে মহাপ্লাবনে। আমরা ঠিকই বুঝেছিলাম আওয়ামীলীগের মিথ্যাচার, ধোকাবাজি। 
‘অদ্যাপিও সেই লীলা করে গোরা রায়
কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়’।

লেখক: সরকারী কর্মকর্তা ও কথাসাহিত্যক