আলোচনা দীর্ঘায়িত হলে ষড়যন্ত্রকারী ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে
সংস্কার বাস্তবায়নের রাস্তা নির্বাচন: তারেক রহমান
বর্তমানে আমরা অনেক মানুষকে দেখছি, যারা সংস্কার সংস্কার করছেন। প্রতিদিন এবং প্রতিনিয়ত সংস্কারের কথা বলছেন। সে সময়, সে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহস করে দাঁড়িয়ে কোনো সংস্কারের কথা আমরা বলতে শুনিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সংস্কার কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে বাস্তবায়ন করতেও সব থেকে আগেই নির্বাচন প্রয়োজন। যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া দেরি হয়, যদি সংস্কার আলোচনা দীর্ঘায়িত হয় তাহলে সে স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে যাবে। এ সংস্কারকে বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই বলেও মনে করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, একটি পথ নির্বাচন, জনগণের নির্বাচন এবং জনগণের নির্বাচন। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কদমতলী শিল্প এলাকায় শ্যামপুর লাল মসজিদ সংলগ্ন ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির জনসম্পৃক্ততায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কদমতলী থানার কর্মশালায়’- তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার সংস্কার আলাপ দীর্ঘায়িত করবেন না। কারণ আপনি আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন দেশ তত বেশি সংকটের মুখে পড়বে, দেশে তত ষড়যন্ত্রকারী ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। সংস্কারকে যতদ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে, দেশ ও দেশের মানুষকে তত দ্রুত আমরা বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবো।
জবাবদিহির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্বাচন হতে, সেটি জাতীয় নির্বাচন কিংবা যে নির্বাচনই হোক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, আমরা যদি দেশের ভাগ্যের পরির্বতন করতে চাই, আমরা যদি জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কাজ শুরু করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে হবে। যতদ্রুত আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবো, তত দ্রুত আমরা পরিবর্তনের কাজ শুরু করতে পারবো। যতদ্রুত আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে পারবো, তত দ্রুত আমরা দেশকে আরও ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবো। কিছু কিছু লোক এখন বলেন, নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তা বলছি না। কিন্তু নির্বাচন হলে জনগণের কাছে তারা জবাব দিতে বাধ্য থাকবে।
তিনি বলেন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আমরা আনতে চাই। শুধু দল না, দলের ভেতরে আমরা সে রকম পর্যায়ক্রমে চেষ্টা করছি- একই সঙ্গে আমাদের যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ হয় তাহলে আমরা সেটি সার্বিকভাবে আনতে চাই। এজন্য আমরা দল-মত-নির্বিশেষে সমাজের প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা চাই। একই সঙ্গে শুধুমাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনলেই সবকিছু হয়ে যাবে না। তারপরে আসল কতকগুলো বিষয় বাকি থাকে, কি সে বিষয়? দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন গতি। এ গতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩১ দফা দেয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমরা অনেক মানুষকে দেখছি, যারা সংস্কার সংস্কার করছেন। প্রতিদিন এবং প্রতিনিয়ত সংস্কারের কথা বলছেন। সে সময়, সে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহস করে দাঁড়িয়ে কোনো সংস্কারের কথা আমরা বলতে শুনিনি। শুধু বিএনপি এবং নেতাকর্মীরাই বলেছিলেন। তবে আজকে যারা সংস্কারের কথা বলছেন, আমরা তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। হতে পারে তাদের সঙ্গে আমাদের ১০০ ভাগ মিল নেই, ৮০ শতাংশ মিল আছে। তার অর্থ হচ্ছে, মূল যে বিষয়- সেটা বিএনপি আগেই বলেছে।
তিনি বলেন, আমরা আগামীদিনে দেশের মানুষের সমর্থনে সরকার গঠনের সক্ষম হলে আমরা এ ৩১টি বিষয়ের উপরে মনোযোগ দেবো, ইনশাআল্লাহ্। আমরা বিশ্বাস করি, এ ৩১টি বিষয়ে যদি আমরা কাজ করতে পারি তাহলে দেশ এবং মানুষের অবস্থা কিছুটা হলেও আমরা ভালো করতে পারবো। বিএনপি’র লক্ষ্যে এবং উদ্দেশ্যই হচ্ছে, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব সালাহ উদ্দীন আহমেদ, তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, লিটন মাহমুদ, আব্দুস সাত্তার, কে সিকান্দার কাদির, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ কদমতলী ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সবার দেশ/কেএম