Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅধিকারের কর্মসূচি

আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅধিকারের কর্মসূচি
ছবি: সবার দেশ

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া দেশব্যাপী ১২ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।

লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একের পর এক আন্দোলন সরকারের স্থিতিশীলতার পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে বুলডোজার দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ সহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যেখানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, সেখানে কোনো আ.লীগ নেই। অথচ সচিবালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ প্রশাসন ও সরকারের সব সেক্টরে যেসব আওয়ামী সুবিধাভোগীরা রয়েছে, তারা বহাল তবিয়তে।

গণঅভ্যুত্থানের ৬ মাস পরেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা সরকারের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ও সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলানোর শামিল। এতে প্রমাণিত হয়, সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধন/সহযোগিতায় এসব ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, অথবা সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। 

জনগণের মনে প্রশ্ন, সিটি করপোরেশন বা সরকারি বুলডোজার কারা সরবরাহ করলো? এ ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নেতিবাচক বার্তা গেছে; ১. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বাংলাদেশকে এখনো স্থিতিশীল করতে পারেনি, ২. বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কম, ৩. গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পণ্যের রফতানিতে বিদেশি ক্রেতার সংকট ৪. বাংলাদেশে অবস্থানরত ও আসতে আগ্রহী বিদেশি পর্যটকরা আতঙ্কিত হতে পারে ইত্যাদি।

অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাশেদ খাঁন বলেন, গাজীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হওয়ার পর অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেয়া ৬২৬ জনের অবস্থান সম্পর্কে জানি না। বড় বড় ডেভিলরা তো পালিয়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের ৩ মাস নিরাপদে অবস্থান করার পরেও কেনো তাকে গ্রেফতার করা যায়নি? আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারের সদস্যরা কাদের সহায়তায় দেশ ছেড়েছে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি এসব তদন্তে কোন কমিটি গঠন করেছে? না করার রহস্য সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। 

অপারেশন ডেভিল হান্টকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এর মাধ্যমে যেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ ও নিরীহ কোনো কর্মী-সমর্থক হয়রানি না করা হয়। শুধুমাত্র অপরাধীরাই যেন, অপারেশন ডেভিল হান্টের অন্তর্ভুক্ত হয়। অন্যথায় গণগ্রেফতার ও গণহয়রানি শুরু হলে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এ সুযোগে মামলাবাজি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরং শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ট্যাক্স বাড়িয়ে জনগণের পেটে লাথি মারা হয়েছে। সরকার যতোই জনসমর্থন নিয়ে গঠিত হোক না কেনো, নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতা মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে জনসমর্থন জনক্ষোভে পরিণত হবে। সামনে পবিত্র মাহে রমজান, মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম, লোডশেডিং ও গ্যাসের সংকটের দিকে সরকারকে গভীর মনোযোগ দেয়ার আহ্বান করছি।

লিখিত বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা বলেন, ইতোমধ্যে উপদেষ্টারা নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতি নিজেদের আশীর্বাদ ব্যক্ত করে এবং নতুন রাজনৈতিক দল করতে আগ্রহীদের নানা কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে উপস্থিত হয়ে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। এজন্যই বিভিন্ন জায়গা থেকে আগামী নির্বাচন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুষ্ঠিত করার দাবি উঠেছে। আমরা সরকারকে বলবো, গণঅভ্যুত্থানে এ দেশের সব শক্তি অংশগ্রহণ করেছে। কোনও একটি অংশের কাছে আপন হতে গিয়ে বাকিদের কাছে বিরাগভাজন হবেন না। আপনারা সবার, সবার সঙ্গে আপনাদের আচরণে নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। নতুন যারা দল করতে চায়, আমরা তাদের সাধুবাদ ও স্বাগত জানাই। তবে আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায়, সহযোগিতায় ও আর্শীবাদে নতুন কোনো দল গঠিত হলে, আপনারা নিজেদের অবস্থান হারাবেন। 

তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে গণহত্যায় অভিযুক্ত সংগঠন হিসেবে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলায় ডিসির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। শিগগিরই কেন্দ্রীয়ভাবেও সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। 

৭১ এর পর আওয়ামী লীগ একবার গণহত্যায় মেতে ওঠে, পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে ২য় বারের মতো গণহত্যা পরিচালনা করে হিটলারের নামের সঙ্গে নিজেকেও সারা দুনিয়ার কাছে গণহত্যাকারী, খুনি ও ফ্যাসিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দেশের জনগণ চায় না আওয়ামী লীগের ব্যানারে ৩য় বার গণহত্যার সুযোগ থাকুক। 

গণঅধিকার পরিষদ শুরু থেকেই গণহত্যার বিচারে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ, ঢাকা মহানগর বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ ছাড়া জনগণকে গণহত্যার বিচারে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী আগামী ১২ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হবে। এ ছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।

গণঅধিকার পরিষদের ৫ দফা

১. জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিগত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহিদদের সঠিক তালিকা তৈরি, ক্ষতিপূরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। 

২. জুলাই গণহত্যায় জড়িত বিদেশে পলাতক গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড খুনি হাসিনাসহ সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

৩. ফ্যাসিবাদের আমলে উন্নয়নের নামে লুটপাট, অর্থ পাচারে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করা। 

৪. জন-আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিতে অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

৫. বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেজিমে সংগঠিত গুম-খুন ও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সহ- সভাপতি ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, হাবিবুর রহমান রিজু, সহ সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ জিলু খান, আবদুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুব ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।
 
সবার দেশে/এমকেজে