বাংলাদেশের শত্রুকে রাজার হালে রেখেছে ভারত: মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল বলেন, আগে তিস্তার পানি দিন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন। আমাদের সঙ্গে দাদাসুলভ আচরণ বন্ধ করুন। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই সম্মানের সঙ্গে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেচে দিয়েছে কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টা নদী আছে, প্রত্যেকটা নদীতেই তারা বাঁধ বসিয়ে রেখেছে। একদিকে ভারত আমাদের পানি দেয় না, অন্যদিকে বাংলাদেশের শত্রু হাসিনাকে তারা দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দিল্লি থেকে বসে হাসিনা বিভিন্ন রকম হুমুক জারি করে। আজকে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, এটা আমাদের বাঁচা মরার সংগ্রাম। আজকের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এটাকে আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবো।
ভারতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভারতকে পরিস্কার করে বলতে চাই, যদি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান তাহলে আগে তিস্তার পানি দিন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো যে আচরণ সেটা বন্ধ করুন। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই, আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই কিন্তু সে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিজেদের নিরপেক্ষ বলেন। কিন্তু এখানে নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। এখানে আপনাদের মুখ খুলতে হবে, ভারতকে বলতে হবে আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই। আপনি যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার তাই দ্রুত নির্বাচন দিন। জনগণ চায় ভোট দিয়ে নিজের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে, তাদের দ্বারা তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করাতে। অনেকে বলে, আমরা নাকি ভোট ভোট করি, ভোট হলে দেশে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তা বন্ধ হবে।
এর আগে এ কর্মসূচি ঘিরে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক, মিনিট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে আসতে শুরু করে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন পায়ে হেঁটে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে এ আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে। পাল্লা দিয়ে যুক্ত হয়েছেন নারীরাও।
এসময় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরের ১১টি স্থানে অভিনব প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বিএনপির ঘোষিত এ কর্মসূচিতে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে তিস্তার দুই পাড়। সোমাবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন হওয়া এ কর্মসূচি চলবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। আন্দোলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরাও যুক্ত হয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় তিস্তার পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, আর এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে হাজার হাজার কৃষক ও সাধারণ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে লাখ লাখ মানুষকে দুর্দশার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সবার দেশ/এমকেজে