দলের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত
অপকর্মে বহিষ্কৃতদের ঠাঁই দিবে না বিএনপি

গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর সারা দেশে দখল, চাঁদাবাজি ও অপকর্মের অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের আর দলে ফেরার সুযোগ দেবে না বিএনপি। এরমধ্যে দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিতে চায় যে, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’।
দলের এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভবিষ্যতে যারা দখল, চাঁদাবাজি ও আইশৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের জায়গা বিএনপিতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। পাশাপাশি দলে কোনো সন্ত্রাসী, অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের জায়গা না দেয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড।
ওদিকে দলের কঠোর অবস্থান থাকলেও বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের অপকর্মে জড়াচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে দলের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সামনে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে এমনটা আশঙ্কা করছেন নেতারা। এজন্য এখন থেকেই কঠোর অবস্থান নিতে চাইছেন তারা।
দলীয় সূত্রের দাবি, দখল, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা যারা ঘটনাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমন অপরাধ প্রমাণ হলে জড়িত কাউকে আর বিএনপি’র রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে না।
সাত বছর পর গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের এলডি হল প্রাঙ্গণে দলের বর্ধিত সভায় দলের এ অবস্থান নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ভার্চ্যুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
৫ই আগস্টের পরে বিএনপি’র ভেতরে ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে বলে সভায় অভিযোগ করেন দিনাজপুরের আব্দুস সালাম মিলন। বলেন, এ ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। ত্যাগীদের কোণঠাসা ও বহিষ্কার করা হচ্ছে। পদ স্থগিত করা হচ্ছে। তাদের পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। তৃণমূলকে জাগাতে হবে, হাইব্রিডদের ঠেকাতে হবে। এ ছাড়া সভায় বলা হয়, সুবিধাবাদীরা বিএনপিতে ভালো জায়গায় আছে। এ সুবিধাবাদী ও হাইব্রিডদের কাছে যদি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জিম্মি। এদের না রুখলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এরমধ্যে সভায় ষড়ষন্ত্র রুখে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়, বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র বাইরে থেকে হচ্ছে। এজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকতে হবে। আর দলের ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের জায়গা না দেয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভায়। তবে ৫ই আগস্টের পর যেসব নেতাকর্মী বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা আর দলে ফেরতে পারবেন না।
সভায় বিএনপি এবং এর সকল অঙ্গ দল ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মাঝে সক্রিয় হওয়ার এবং কথা ও কাজে জনগণের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দলীয় নীতি, আদর্শ, কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবহেলা এবং দুর্নীতি-অনাচারসহ গণবিরোধী সকল কর্মকাণ্ড এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার জন্যও সকলকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ বিএনপি এবং অঙ্গ দল, সহযোগী সংগঠনসমূহকে আরও ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয় সভায়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে বলেন, সভায় বার্তা দেয়া হয়েছে ঐক্যেই শক্তি। আর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকলেও সেটা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের ভেতরে সন্ত্রাসী থাকতে পারবে না এবং কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। আর নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে যেতে এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ওদিকে সভায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানসহ বিভিন্ন প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সভায়।
বিএনপি‘র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, নেগেটিভ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা এবং মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
সবার দেশ/এনএন