বাপেরই জন্ম হলো না, তো সন্তান জন্ম হবে কি করে
ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব: রিজভী
নির্বাচন নিয়ে গড়িমশি করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের সন্দেহ জাগবে। আমরা আশা করি, সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করবে। কারণ, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি।

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা কেন কঠিন, এ প্রশ্ন তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এখনো ৯-১০ মাস সময় আছে। নির্বাচন কমিশন যদি চায়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। কারণ, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার করবে সহায়তা।
শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে জুলাই আন্দোলনের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজশাহী নগরের ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, কেউ কেউ বলছেন, গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে। ভাই, আমরা তো এটা বুঝতে পারছি না। গণপরিষদ করতে হয় এ কারণে তার মাধ্যমে একটা সংবিধান রচনা করা হয়। আমাদের তো সংবিধান আছে। শেখ হাসিনা সংবিধানে অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদী আইন-কানুন যুক্ত করেছেন। কিন্তু এটা তো সংশোধনের বিধান আছে। অনেকবার সংশোধন হয়েছে। তো গণপরিষদ আসছে কেনো? এ কথাগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগে, সে প্রশ্নও তোলেন বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, আজকে সংস্কারের কথা যারা বলছেন, এ সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগে? পুলিশ আচরণ করবে আইন অনুযায়ী। কোনো ক্ষমতাশালীর কথা সে শুনবে না। প্রতিষ্ঠান চলবে তার আইনের গতিতে। এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটার জন্য কতদিন সময় লাগে?
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন করা হয়েছে, এটা মার্চ মাস। নির্বাচনের জন্য গড়িমশি কেনো? সরকারও নির্বাচনের জন্য একটা মাস দিয়েছিলো। বলেছিলো ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আবারও শুনি কেউ কেউ বলছে- না, এ সময়ে নির্বাচন করা কঠিন। নির্বাচন তো করবে নির্বাচন কমিশন, সহায়তা করবে সরকার। নির্বাচন কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে তবে ডিসেম্বর কেনো, জুলাইয়ের মধ্যেও নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন নিয়ে গড়িমশি করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের সন্দেহ জাগবে। আমরা আশা করি, সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করবে। কারণ, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি।
আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার, তার পরে না স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সংস্কার তো চলমান ধারা। এটা চলবে যাতে কোনওদিন কোনও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে। বাপেরই জন্ম হলো না, তো সন্তান জন্ম হবে কি করে? আগে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হলে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে অভিযোগ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সে অভিযোগের সাথে তার যোগাযোগই নেই, সংশ্লিষ্টতাই নেই। ওটার উপর শেখ হাসিনার ক্যাঙারু কোর্ট রায় দিয়ে দিলো ৫ বছর। আবার যত উপরের কোর্টে যাওয়া যায় তারা আরও বেশি করে রায় দিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত আক্রোশ সম্পাদনা করেছেন আদালতের মাধ্যমে। কিসের আদালত, কিসের আইন, কিসের বিচার, শেখ হাসিনা যা বলতো তাই হতো। শেখ হাসিনা রক্ত নিয়ে প্রতারণা করেছেন। উনি শহীদদের সঙ্গে অপমানমূলক আচরণ করেছেন। শহীদদের সঙ্গে বেইমানি করেছেন শেখ হাসিনা।
ভারতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভারত আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা করে, ভারত যুক্তরাজ্যে গিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করে, কেনো? বাংলাদেশে সরকার নেই? বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ নয়? এর একটি জাতীয় পতাকা আছে, এর একটি জাতীয় সংগীত আছে, তো বাংলাদেশ নিয়ে আপনার এতো মাথাব্যথা কেন? বাংলাদেশকে নিয়ে অন্য একটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আমরা বিএনপি পরিবারের সভাপতি আতিকুর রহমান রুমন। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আবুল কাশেম, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সবার দেশ/এনএন