Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ মার্চ ২০২৫

১৩৫ গাড়ির ‘শো-ডাউন’ প্রসঙ্গে তাসনিম জারাকে সারজিস

আমার পরিবারের ৫০ বছর আগেও সামর্থ্য ছিলো

আমার পরিবারের ৫০ বছর আগেও সামর্থ্য ছিলো
ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সম্প্রতি তার রাজনৈতিক দল গঠনের পর প্রথমবারের মতো নিজ এলাকা সফরে শতাধিক গাড়ি নিয়ে একটি বিশাল শো-ডাউন দিয়েছেন। এ শো-ডাউন নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে এর অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এমন পরিস্থিতিতে, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পত্র লিখে সারজিস আলমের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন, এতো বড় কর্মসূচি কীভাবে আয়োজন করা হলো? এর অর্থের উৎস কী? তিনি জনগণের কাছে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সারজিসের প্রতি আহ্বান জানান। তাসনিম জারার এ প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়েছে, এবং এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে।

এবার, সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারজিস আলম মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি জানান, আমার পরিবারের ৫০ বছর আগেও এমন সামর্থ্য ছিলো। আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী ছিলো এবং আজও তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ শো-ডাউনের অর্থায়ন কোনো অসৎ পথে অর্জিত হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে আমার ব্যক্তিগত ও পরিবারের প্রচেষ্টায় সংগৃহীত অর্থে আয়োজন করা হয়েছে।

সারজিস আলম তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন যে, এ ধরনের শো-ডাউন বা কর্মসূচি আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিলো জনগণের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং আমাদের দলের উদ্দেশ্য জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।

সারজিস লিখেন, 

‘প্রিয় তাসনিম জারা আপু,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার খোলা চিঠির উত্তরের পূর্বে দুটি বিষয় বলতে চাই।

প্রথমত, আমাদের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা থেকে সবার আগে যে বিষয়টি বাদ দিতে হবে সেটি হচ্ছে- একজন নতুন করে জাতীয় রাজনীতিতে এসেছে মানেই তার পরিবার সহায়-সম্বলহীন, অসহায়, নিঃস্ব না। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদাবাজি, লুটপাট করে এসব কাজ করেছে বলে, একই কাজ করে অন্যরাও সেটা করবে বিষয়টি তেমনও নয়। আমার এই মুহূর্তে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই মানে এই নয় যে আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের সেই সামর্থ্য নেই।

দ্বিতীয়ত, কতিপয় সোশ্যাল মিডিয়া বুদ্ধিজীবী তাদের জায়গা থেকে যেভাবে রাজনীতিকে কল্পনা করেন সেটা কোন আদর্শ পৃথিবীর চিত্র হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারা ধারণকারী জনগণ সম্বলিত একটি দেশের চিত্র নয়। এমনকি বাংলাদেশের একটি জেলার রাজনৈতিক কালচারের সাথে অন্য একটি জেলার রাজনৈতিক কালচারেরও পুরোপুরি মিল নেই। তাই আমার চোখের সামনে আমার আসনে যা দেখছি সেটা দিয়ে অন্য আসনও তুলনা করা যায় না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলগত অবস্থান বিবেচনায় সেই ইকুয়েশনগুলো ভিন্ন হয়।

আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই। কিন্তু নতুন বন্দোবস্ত বলতে আমরা যেটা কল্পনা করি সেটা ছয় মাসের মধ্যে এপ্লাই করলে অলমোস্ট ৯৫+% ক্ষেত্রে জামানত হারানোর সম্ভাবনা থাকবে। তার মানে কি আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই না? অবশ্যই চাই।

কিন্তু সেটা কখনো ছয় মাসের ব্যবধানে ১৮০ ডিগ্রি উল্টে যাবে না বরং সময়ের সাথে সাথে ১০% ২০% ৩০% এভাবে পরিবর্তিত হবে। এক সময় হয়তো শতভাগ নতুন বন্দোবস্ত দেখতে পাবো।

ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়। আপনার প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করার জনবল এবং সামর্থ্য আপনার যদি না থাকে কিংবা আপনি দেখাতে না পারেন তাহলে মাঠের রাজনীতিতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। অন্য নেতা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণও আপনাকে গোনায় ধরবে না। কারণ মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতামুখী। আমাদের যেমন নতুন বন্দোবস্তের দিকে যেতে হবে তেমনি মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য পূর্বের যেই বন্দোবস্তগুলো চাইলেই এখনই ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব নয় সেগুলো কেউ পাশে রেখে আপাতত চলতে হবে। যেদিন সেগুলোও ছুঁড়ে ফেলার সুযোগ আসবে সেদিন সেগুলোর ছুড়ে ফেলতে হবে। 

সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক বুদ্ধিজীবী তাদের যে আইডিয়াগুলোকে বিভিন্ন ন্যারেটিভ দিয়ে স্টাবলিশ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দেখায়, তারা সেই প্রসেসে বাংলাদেশের এই মানসিকতার জনগণের কাছে- এই ইলেকশনে মাঠে নামলেও জামানত হারাবে, একই প্রসেসে ৫ বছর পরে ইলেকশন করলেও জামানত হারাবে। 

তারা শুধু আপনার পিছেই লাগতে পারে কিন্তু কোন প্রসেসে আপনি মাঠে ইলেকশন করে জিতে আসতে পারবেন সেগুলো আপনাকে দেখাতে পারেনা কিংবা দেখালেও অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোর মাঠের বাস্তবতা নেই।

আমরা তো অনেকেই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মামলা বাণিজ্য, হয়রানি এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললাম। কিন্তু এই অভ্যুত্থানেরই একটি অংশ আবার ওই একই কাজগুলো করছে। আটকাতে পেরেছেন কি? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আপনারা অনেকে কথাও বলতে পারছি না। আর বললেও তারা সে কথাকে কানে নেয় না। কথা বলতে পারছি সেই অল্প কিছু নতুন করে চিন্তা করা মানুষের বিরুদ্ধে যারা এখনো সেই কথা বলার স্পেসটা দেয় এবং সেই কথাগুলোকে রিসিভ করে।

এবার কিছু তিক্ত কথা বলতে চাই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচার পরিবর্তন করতে হবে। এটা আবশ্যক। কিন্তু যতদিন না আমজনতা তাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করছে ততদিন আপনি সরাসরি নতুন চিন্তাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে গেলে সময়ের সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন। আপনি আজকে একটি আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিন। কাল থেকে সেই আসনের অসংখ্য মানুষ আপনার কাছে আসবে নানা তদবির নিয়ে আবদার নিয়ে। এর মধ্যে অনেক অনৈতিক চাওয়া থাকবে। আবার যাদের আবদার পূরণ করতে পারবেন না তারা আপনার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করবে। অথচ তারা একটিবারও ভাববে না আপনার সেই সামর্থ্য আছে কিনা, বিষয়গুলো ন্যায় সঙ্গত কিনা। তারা শুধু নিজের স্বার্থটা ভাববে। আপনি দিলে আছে, না দিলে নাই। 

তার উপর এখন আপনার কোন অথরিটিও নাই। এক্ষেত্রে সরাসরি নতুন বন্দোবস্ত এপ্লাই করে দীর্ঘ মেয়াদে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার চেয়ে সাময়িকভাবে নতুন পুরনো মিশেলে এগিয়ে গিয়ে যদি আপনি একটি অথরিটি পান কিংবা নির্বাচিত হতে পারেন তখন বরং দীর্ঘমেয়াদে নতুন বন্দোবস্তের কালচার চালু করা এবং সেগুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার সুযোগ বেশি থাকবে। আমি এটাকে মন্দের ভালো মনে করি। 

আর আমার এলাকায় ফেরার সময় এত গাড়ি, এত মানুষ; তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং ভালোবাসা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে এবং আমাকে সঙ্গ দিবে এটা আমিও কল্পনা করিনি।

আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং জেলার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্ধেকের বেশি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। যেগুলোর ব্যয় আমাদের বহন করতে হয়নি। বাকি প্রায় ৫০ টার মতো গাড়ির ৬০০০ করে যে তিন লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে তার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের আরো ৫০ বছর আগেও ছিল। এবং আমি বিশ্বাস করি অন্য কেউ না; শুধু আমার দাদা আমার জন্য যতটুকু রেখে গিয়েছেন, সেটা দিয়ে আমি আমার ইলেকশনও করে ফেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।

ধন্যবাদ।”

সবার দেশ/এমকেজে