প্রথম আলোকে তথ্যসন্ত্রাসী উল্লেখ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
দিল্লী থেকে লিখে দেয়া নিউজ করে আমাকে থামাতে পারবেন না
হাসনাত বলেন, যতদিন দেহে প্রাণ আছে, আমি ভারত, ‘র’ এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো। এতে আমার রাজনীতি না থাকলেও হোক, আমাকে মাইনাস করা হলেও হোক। আমাদের মেরে না ফেলা পর্যন্ত এ লড়াই অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও তথ্যসন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) রাতে প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে হাসনাতের ‘বিলাসী জীবনযাপন’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, যা তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, এবং প্রথম আলো পরবর্তীতে প্রতিবেদনে কিছুটা সংশোধনী আনে।
হাসনাতের প্রতিবাদ ও অভিযোগ
হাসনাত আব্দুল্লাহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্টে প্রথম আলোর প্রতিবেদনকে ‘দিল্লি থেকে লিখে দেয়া’ এবং ‘তথ্যসন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, প্রথম আলো ইতিপূর্বেও বাংলাদেশের সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে, এবং যারা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা)-এর বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘র’-এর বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ার দুই দিন পর আমার বিরুদ্ধে এ প্রতিবেদন কাকতালীয় নয়। আমি এ তালিকার সর্বশেষ সংযোজন।
হাসনাত প্রথম আলোর সাংবাদিককে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আমার বাসায় এসে দেখে যান, আমি কতটা বিলাসী জীবনযাপন করি। আমার ব্যাংক ব্যালেন্স, ট্যাক্স রিটার্ন—সবকিছু স্বচ্ছ এবং যাচাইযোগ্য। আপনারা চাইলে তা যাচাই করতে পারতেন, কিন্তু করেননি। তিনি আরও দাবি করেন, শুক্রবারের (১৮ এপ্রিল) এনসিপির সাধারণ সভায় তার বিরুদ্ধে বিলাসী জীবনযাপনের কোনও প্রশ্ন বা আলোচনা হয়নি, অথচ প্রথম আলো তাকে নিয়ে ‘মিথ্যা’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আর্থিক স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে আমি কারও কাছ থেকে এক টাকাও নিয়েছি, তবে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনও তদন্তে আমি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি অভিযোগ করেন, এ ধরনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু তিনি এতে ভীত নন। তিনি বলেন, আমি যদি বিলাসিতা চাইতাম, তাহলে ভারত বা ‘র’-এর তাবেদারি করে মন্ত্রী হওয়ার পথ বেছে নিতাম। কিন্তু আমি তা করিনি এবং করবও না।
ভারত ও আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান
হাসনাত তার পোস্টে স্পষ্টভাবে বলেন, তিনি ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করবেন না। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে ‘ক্লিন ইমেজে’ ফিরিয়ে আনার যেকোনও উদ্যোগ তিনি জীবন থাকতে বাধা দেবেন। তিনি বলেন, যতদিন দেহে প্রাণ আছে, আমি ভারত, ‘র’ এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো। এতে আমার রাজনীতি না থাকলেও হোক, আমাকে মাইনাস করা হলেও হোক। আমাদের মেরে না ফেলা পর্যন্ত এ লড়াই অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন ও সংশোধনী
প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এনসিপির সাধারণ সভায় হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলমের ‘বিলাসী জীবনযাপন’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এবং তারা দামি গাড়ি ব্যবহার ও এককভাবে ‘ডিল’ করার অভিযোগের মুখে পড়েছেন। সমালোচনার মুখে প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে কিছু সংশোধনী এনেছে, তবে এটি কী ধরনের সংশোধনী তা স্পষ্ট করা হয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়া সমালোচনা
প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্রথম আলোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে মনে করেন, এ প্রতিবেদনটি হাসনাত আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়েছে। হাসনাতের সমর্থকরা দাবি করেন, তিনি দেশের স্বার্থে কাজ করা একজন সৎ নেতা, এবং প্রথম আলোর এ প্রতিবেদন বিদেশি প্রভাবে তৈরি।
প্রেক্ষাপট
হাসনাত আব্দুল্লাহ এনসিপির একজন প্রভাবশালী নেতা, যিনি ভারতীয় প্রভাব এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়েছিলেন, যার দুই দিন পরই প্রথম আলোর এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এনসিপির সাধারণ সভায় (১৮ এপ্রিল) তিনি এবং সারজিস আলমের বিরুদ্ধে বিলাসী জীবনযাপন ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিলো বলে প্রথম আলো দাবি করে, যদিও হাসনাত এ দাবি অস্বীকার করেছেন।
সম্ভাব্য প্রভাব
হাসনাত আব্দুল্লাহর এ প্রতিবাদ এবং প্রথম আলোর প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য এবং বিদেশি প্রভাবের অভিযোগের বিষয়টিকে সামনে এনেছে। হাসনাতের চ্যালেঞ্জ এবং তদন্তের আহ্বান এ বিতর্ককে আরও জটিল করতে পারে।
এ ঘটনা এনসিপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং হাসনাতের নেতৃত্বের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে। তবে হাসনাতের দৃঢ় অবস্থান এবং জনসমর্থন তাকে এ বিতর্কে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে পারে। অন্যদিকে, প্রথম আলোর ওপর জনগণের আস্থা এবং তাদের প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সবার দেশ/কেএম