ওহে বাজি! চুরির দানে আল্লাহ নহে রাজি
ডাকু মনসুরের নাম তো আমরা অনেকেই শুনেছি, এ নামে একটি ছায়াছবিও নির্মিত হয়েছিল বাংলাদেশে। ডাকু মনসুর ধনী লোকদের সম্পদ লুণ্ঠন করে এনে দরিদ্রদের মাঝে দান করে দিতো। তখনকার সময়ে সে অনেকেরই প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তার এরকম কাজের জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাকে মহৎ ব্যক্তি হিসেবে জানতো, ভালবাসতো।
আমাদের বাংলাদেশেও এরকমটি দেখা যায়, কিছুসংখ্যক লোক অনেক টাকা কামাই করে ধনী হবার পর দরিদ্রদের মাঝে দান খয়রাত করেন। তাদের টাকা কামানোর উৎস সৎ না অসৎ উপায়ে এটি তেমন নিশ্চিত হওয়া যায় না। এমন অনেক ব্যবসায়ীও আছেন, যারা অনেকেই অবৈধ উপায়ে রোজগার করে নানা রকম মহৎ কাজ করে বেড়াচ্ছেন। যেমন স্কুল, কলেজ, হাটবাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করেন এবং দরিদ্রদেরকে দান করেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এ সমস্ত দানবীররা উপলব্ধি করতে পারেন না যে, তাদের অসৎ উপায়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে এহেন কথিত মহৎ কর্ম স্রষ্টা কর্তৃক কখনোই গ্রহণযোগ্য হয় না, হবেও না। কেননা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা নিজে পবিত্র এবং তিনি বান্দার থেকে কেবল পবিত্র কাজগুলোই গ্রহণ করেন। অপবিত্র কোনও কাজ তিনি পছন্দ করেন না, গ্রহণও করেন না। যদিও আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত কেউ কোন কাজই করতে পারেননা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, তুমি নিজে প্রথম ভালো কাজটি করো, তারপর অপরকে বলো।
আসলে ভালো কাজ করা যতো সহজ খারাপ কাজ অভ্যাস হয়ে গেলে ত্যাগ করা ততোই কঠিন। কোন মানুষ ইচ্ছে করলে অনেক নফল নামাজ পড়তে পারেন। কিন্তু একবার অভ্যাস হয়ে গেলে ইচ্ছে করলেও ঘুষ খাওয়া, সুদে টাকা লাগানো এবং মানুষের গীবত করা, অন্যায় অপরাধ করা কমাতে পারেন না।
একজন মানুষের আসলে করনীয় কি, সে কিসের আশায় দান খয়রাত করছে? স্রষ্টার কৃপা পাওয়ার জন্যই তো, তাই না? কিন্তু সে কেনো ভাবে না যে, খারাপ উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়ে কারও উপকার করতে চাইলে তা স্রষ্টা কতৃক গৃহীত হবে না। তারপরেও সমাজে কিছু লোক আছেন, যারা এমনটি দিব্যি করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের এ কাজগুলো নিজের কোন উপকারে আসবে না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক মানুষ তার কৃতকর্মের কিছু অংশ দুনিয়াতে, আর কিছু অংশ আখেরাতে পাবে।
অনেক মানুষই ভেবে থাকেন যে, টাকা উপার্জন যেভাবেই করি না কেনো, তাতে কি, একটি সময় তা বাদ দিয়ে ভালো হয়ে যাবো। তখন আর কোন খারাপ কাজ করবোনা, একদম নামাজ, রোজা, নানা রকমের ইবাদত বন্দেগী করে সুফী সাধক হয়ে যাবো। কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার মৃত্যু কখন হঠাৎ চলে আসে। কেননা মৃত্যুর খবর আমরা কেউ আগাম জানতে পারি না। আর খারাপ কাজের পরিস্থিতিতে মৃত্যুর পর আমার জন্য অবশ্যই খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে, পরিণামে আমাকে চির জাহান্নামে নিপতিত হতে হতে পারে।
বরং তারা যদি কোন খারাপ কাজ না করে কোন দান নাও করতেন, নিউট্রাল থাকতেন অর্থাৎ দান বা খারাপ কাজ কোনোটিই করতেন না, তাহলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে তাদের কোন গুনাহ হতো না এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টিতেও পড়তে হতো না। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে গিয়ে অবৈধ পয়সায় দান খয়রাতে তার নিজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় দুনিয়া এবং আখেরাতে।
দান খয়রাত করবেন, করেন ভালো কথা, কিন্তু অসৎ পথে উপার্জন করবেন না, করার চিন্তাও করবেন না।
তাই মহৎ ডাকু মনসুরের চেয়ে সাদাসিধা ইমান আলী হওয়া অনেক বেশি ভালো।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।