অমুসলিম শ্রমিক দিয়ে মসজিদের কাজ করানো যাবে?
মক্কার কাফিররা নিজেদের হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর উত্তরাধিকারী ভাবত। তারা আল্লাহর ঘরের রক্ষক ও সেবক হওয়ার দাবি করত। কিন্তু তাদের এ দাবির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
কেননা ইব্রাহিম (আ.)-এর উত্তরাধিকার কোনো বংশীয় উত্তরাধিকার নয়। এটা আদর্শের উত্তরাধিকার। এটা আকিদা ও বিশ্বাসের উত্তরাধিকার। তাই ইমানদাররাই এর যোগ্য উত্তরাধিকারী।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, মুশরিকরা আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, এটা হতে পারে না; তারা তো নিজেরাই নিজেদের কুফরির স্বীকৃতি দিচ্ছে। তারা এমন লোক, যাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড বিনষ্ট হয়ে গেছে আর চিরকালই তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১৭)
এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয়, মক্কার কুরাইশ গোত্রীয় মুশরিকরা এ বলে গর্ব করত যে তারা মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধায়ক। এ পবিত্র মসজিদের দেখাশোনা করে, এর মেরামত কাজের গৌরবময় দায়িত্ব পালন করে তারা গোটা আরবের ওপর আভিজাত্যের দাবি করত।
কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের পর যারা ইমান আনেনি, বরং মুশরিকই রয়ে গেছে, তারা যে আল্লাহর কাছে এ সম্মানের যোগ্যতা হারিয়েছে সে সম্পর্কে তাদের কোনো উপলব্ধি ছিল না। তারা মসজিদুল হারামের ব্যাপারেও আগের মতোই নিজেদের আভিজাত্যেই বিশ্বাস করত। এ আয়াতে তাদের সে ভ্রান্ত ধারণা রদ করে দেয়া হয়েছে।
কাফিররা কাবা শরিফের রক্ষকও নয়, সেবকও নয়। বরং কালক্রমে তারা কাবাকে অধিকার করেছে। তারা কাবার ভেতর মূর্তি রেখে কাবার পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করেছে। আল্লাহর ঘর উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরিত হয় না। আল্লাহর ঘরের ‘মোতাওয়াল্লি’ বা তত্ত্বাবধায়ক কেবল ইমানদাররাই।
আয়াতে বলা হয়েছে, মসজিদ আবাদ করার উপযুক্ততা কাফিরদের নেই। এর অর্থ, কাফিররা মসজিদের মোতোয়ালি ও ব্যবস্থাপক হতে পারবে না। কোনো অমুসলিমকে ইসলামী ওয়াক্ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োগ করা বৈধ নয়।
তবে নির্মাণকাজে অমুসলিমদের সাহায্য নিতে আপত্তি নেই। (তাফসিরে মুরাগি ও মা'আরেফুল কোরআন)
এমনকি কোনো অমুসলিম যদি মসজিদ নির্মাণ করে দেয় অথবা মসজিদ নির্মাণের জন্য চাঁদা দেয়, এতে দ্বীনি বা দুনিয়াবি কোনো ক্ষতি না হলে তা গ্রহণ করা বৈধ। (ফতোয়াতে শামি)
তবে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করা মুসলমানদেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা বাকারা: ১৮)
এ আয়াতের আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, এ আয়াতের দাবি হল, মসজিদে প্রবেশ, মসজিদ নির্মাণ, এর রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে অমুসলিমের শরিক না করা। (আহকামুল কোরআন: ৩/৮৭)
তাই মসজিদের প্রয়োজনীয় খরচের ব্যবস্থা মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদানের মাধ্যমেই হতে হবে। এক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুদান গ্রহণ করা, মুসলমানদের দ্বীনী চেতনা ও মূল্যবোধপরিপন্থী। আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৪১
সবার দেশ/এফএ