শবে বরাত ও দুটি কথা

আজ শুক্রবার (১৫ শাবান) দিবাগত রাতের এবাদতে আল্লাহ সবাইকে মাফ করে দিবেন দুই শ্রেণীর মানুষ ব্যতীত, যারা মুশরিক এবং যাদের মনে বিদ্বেষ থাকে কারো প্রতি কোন বিষয়ে তাদের ছাড়া বাকি সকলকে।
আজ ‘শবে বরাত’ এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলিমেরা নফল ইবাদতের কান্নাকাটি করেন দোয়া করে, ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং আশু ভাগ্য উন্নয়নে দরখাস্ত পেশ করেন মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে। সে ছোটবেলা থেকেই আমরা এ রাতে এবাদত করে আসছি।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ইসলামি পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ এ শবে বরাতকে ‘বিদাত’ হিসেবে তাদের যুক্তি তর্ক জনসাধারণের কাছে ব্যাখ্যা করছেন। কোন কোন আলেম আবার এটি কট্টর ভাবে পালন করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কে আহবান করছেন। এছাড়াও আরো কিছু আলেম সমাজ এ দুইটার মাঝামাঝি এমনভাবে বলছেন যে, অবশ্যম্ভাবী ভাবে এ রাতে ইবাদত করতেই হবে এমনটি না ভেবে কেউ যদি নফল ইবাদত করতে চায় তাহলে তা তিনি নির্দ্বিধায় করতে পারেন। তাদের যুক্তি হল, যেহেতু (হারাম সময় ব্যতীত) যে কোনও সময়েই আল্লাহর কাছে নফল ইবাদত করা যায়। সেরকম ভাবে যদি কেউ প্রার্থনা করে তাতে কোন সমস্যা নেই এবং তারা বিদাতকারি হিসেবে চিহ্নিত হবেন না।
বিদআত মানে হলো নতুন কিছু উদ্ভাবন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় রাসূল শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) বলেননি এবং তার পরবর্তীতে সাহাবায়ে একরাম আমল করেননি, এমন কোন কিছু অন্য কোন মুসলিম দ্বারা সমাজে নতুনভাবে চালু করলে সেটি বিদআত হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং সে বিদআত পালন করা ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়।
এতদ বিষয়ে আলোচনা করলে বিস্তর আলোচনা করা যাবে সেজন্য আর সামনে এগুচ্ছি না প্রিয় পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে বলে। কিন্তু মোটামুটি ধর্ম জ্ঞান সম্পন্ন একজন সাধারণ মুসলিম হিসেবে একথা নিশ্চয়ই বলা যায় যে, পবিত্র শবে বরাতের রাতে এবাদত করতেই হবে এমনটি না ভেবে বরং কেউ যদি আজ রাতে নফল ইবাদত করতে চায়, তা থেকে যেন তাকে বিরত না রাখি।
আর আমরা যেন বেশি করে নিজেদের আমলের প্রতি খেয়াল রাখি যে, আমাদের দ্বারা যেন এমনটি না হয়, সারারাত নফল এবাদত করলাম কিন্তু ফজরের জামাত মিস করলাম, তখন ঘুমাতে গেলাম। যেটা অনেক মানুষই করে থাকে। কেননা নফল এবাদতের জন্য ফরজ কামাই দেয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। ফরজ বাদ দেয়া এবাদতকারী ব্যক্তি নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে প্রিয় ব্যক্তি হতে পারেন না। প্রিয় পাঠক, আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তিতে আমরা যেন আমাদের আমলের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল হই।
আরও একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, একটি নফল এবাদত নিয়ে আমরা এত বেশি হইহুল্লোড় করি, চিৎকার করি, ওয়াজ করি, আমার তো মনে হয় নফল বা কি বিদআতকে নিয়ে এত বেশি আলোচনা না করে, যে সমস্ত হারাম কাজ আছে যেমন মদ্যপান করা, অসৎ উপায়ে উপার্জন করা, হারাম খাওয়া, জিনা, ব্যভিচার এবং অন্যায় ভাবে অপরের সম্পদ আহরণ করা, ইত্যাদি হারাম কাজগুলোর বিষয়ে বেশি সোচ্চার হয়ে সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা বাড়িয়ে দেয়া বেশি জরুরী। আশা করি জ্ঞানী আলেম-ওলামা এবং যারা আগ্রহী তারা এ বিষয়ে তাদের সঠিক, শক্তিশালী ভূমিকা সামাজে রাখবেন ইনশাআল্লাহ।
‘শিরক’ কি? মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সমকক্ষীয় কেউ আছেন অথবা অমুকের কাছে চাইলে আমি এটি পাব, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ আমার জরুরত পূর্ণ করতে পারেন, আমার দোয়া কবুল করতে পারেন, আমাকে ক্ষমা করতে পারেন ইত্যাদি, এরকমটি ভাবাই হলো শিরক, ইসলামী পরিভাষায় শিরক মহাপাপ।
বিদ্বেষ কি? অমুক আমার চেয়ে অর্থনৈতিক অথবা অন্য কোন উপায়ে অধিকতর শক্তিশালী, তার আমার চেয়ে অনেক বেশি এটি-সেটি আছে, তাই আমি তাকে হিংসা করি এরকমটি ভাবাই হলো বিদ্বেষ।
তাই আসুন আজ রাতে আমাদের এ হোক প্রার্থনা, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সকলকে মাফ করে দিন, আমরা আর কোন গুনাহের কাজ করবো না। আমাদেরকে আপনি সাহায্য করুন, আমাদের মনে যেনো কারও প্রতি কোন বিদ্বেষ না থাকে এবং কোন ভাবেই যেন আমরা আপনার সঙ্গে কাউকে শরিক না করি, আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, দোয়া কবুল করুন, আমীন।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।