Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন


প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৪ মার্চ ২০২৫

রমাদ্বান আমাদের যা শিক্ষা দেয়

রমাদ্বান আমাদের যা শিক্ষা দেয়
ছবি: সবার দেশ

পবিত্র মাহে রমাদ্বান হলো মুমিন মুসলমানদের  প্রশিক্ষণের মাস। হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার সাথে সাথে যাবতীয় কর্মকাণ্ডে নিজেকে রমাদ্বানের আলোয় আলোকিত করাই মুমিনের প্রধান লক্ষ থাকে।

কিন্তু অনেক সময়ই মাহে রমজান আসে আর চলে যায়, রোজার আগে যেখানে ছিলাম পরেও সেখানেই থেকে যাই। প্রশিক্ষণ বা সাধনার সময়-সুযোগ আর হয়ে ওঠে না। ডিজিটাল যুগের মানুষ হিসেবে আমাদের ব্যস্ততাও ডিজিটাল। কাজকর্মের ব্যস্ততায় নিজেকে রহমত মাগফিরাত নাজাতের রঙে রঙ্গিন হওয়ার সময়-সুযোগ কোনোটাই হয় না।

তাই চলার পথে কাজের ফাঁকে সব কিছুর মধ্যেই যেভাবে সিয়াম আদায় করি, সেভাবে সাধনাও করতে হবে। আলাদাভাবে সময় বের করার চিন্তায় বসে থাকলে সময় শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু কাজের সুযোগ হবে না কখনও। তাই আল্লাহ ও তার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন-জীবিকা ও মানব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব কাজের সুন্দর পথ বলে দিয়েছেন এবং চলার পথে পদে পদে সাধনার শিক্ষা দিয়েছেন। মাহে রমজান বিশেষভাবে সবর ও সহমর্মিতার মাস।
 
মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘আর আমি তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেছি। যেভাবে ফরজ ছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর’। অপরদিকে হাদীস শরীফে প্রখ্যাত সাহাবী হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত-  নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘রমজান সবরের মাস আর সবরের প্রতিদান জান্নাত।’ –বায়হাকি

হাদিসের ভাষ্যমতে, সবরের প্রতিদান জান্নাত। আমাদের সমাজে সবরের বিশেষ এক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সীমিত এবং কেবলই ধর্মীয় কাজের সঙ্গে তাকে যুক্ত করা হয়। তা কেবল ধর্মীয় কাজের সঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যাবতীয় কাজের সঙ্গেই তার সম্পর্ক। বাস্তব জীবনের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে রমাদ্বান প্রশিক্ষণ, সবর ও সহমর্মিতার মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধনাঢ্য ব্যক্তিও অভাবীদের জঠরজ্বালা অনুভব করে তাদের প্রতি সহমর্মী হওয়ার দীক্ষা পায়। তাই রমজান সহমর্মিতার মাস। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবনের সব কাজে সবরের শিক্ষা দিতে চান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ –সূরা আল বাকারা: ১৫৪

অেঅরও পড়ুন <<>> ধর্ষণকারীর শাস্তি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি 

জীবনের যে কোনও কাজে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কঠিন বাস্তবতা রয়েছে, যেখানে সবর এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই প্রয়োজন। আর কঠিন কঠিন অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে ধৈর্য ও সবর। সবর না থাকার কারণে একজন মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রোজা রেখে বেলা শেষে সঙ্গতকারণেই মানুষের মেজাজ খারাপ হতে পারে, তুচ্ছ কারণে কারও প্রতি মেজাজ বিগড়েও যেতে পারে। ছোটখাট কারণে ঝগড়ার সৃষ্টি হতে পারে। সে নাজুক মুহূর্তে নবী করীম (সা.) আমাদের জীবনে শিক্ষা দিয়েছেন উত্তম আদর্শ, শিক্ষা দিয়েছেন সবরের। কাজ ছোট, তবে কঠিন। তাই ছোট কাজের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন বিশাল প্রতিদানের সুসংবাদবাণী। যাতে এ ছোট ও কঠিন কাজের প্রতি আমরা যত্নবান হই।

রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, সবরের প্রতিদান সরাসরি জান্নাত। অনেক সময় কারণে-অকারণে আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, মেজাজ খারাপ হয়ে যায়; রোজা রেখে যেন ধৈর্যের বাঁধ না ভাঙে সে জন্য নবী করীম (সা.) আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ রোজাদার হলে সে যেন অশ্লীল গালাগাল এবং বেহুদা ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকে; যদি কেউ তাকে গাল দেয় বা তার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তবে সে যেন সবর করে বলে আমি রোজাদার।

রমজানে সিয়াম সাধনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সবর ও সহমর্মিতা। মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা, সংযম যেন আমাদের বরকত বয়ে এবং তার শিক্ষা আমাদের বাকি জীবনকে সুন্দর করে সে চেষ্টাই কাম্য।

লেখক:
ধর্মীয় শিক্ষক 
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। মিরপুর, ঢাকা।