Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২৮ মার্চ ২০২৫

মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত

জুমাতুল বিদায় সারা দেশের মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল

জুমার নামাজের আগে বিভিন্ন মসজিদে রমজানের তাৎপর্য এবং জুমাতুল বিদার গুরুত্ব নিয়ে খুতবা এবং আলোচনা করা হয়। খুতবায় মুসল্লিদের বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করতে উৎসাহিত করা হয় এবং রমজানের শেষ দিনগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করা হয়।

জুমাতুল বিদায় সারা দেশের মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল
ছবি: সংগৃহীত

আজ, ২৮ মার্চ, পবিত্র মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি একত্রিত হন। একদিকে যেমন এটি রমজানের শেষ জুমা, তেমনি অন্যদিকে, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, শান্তি এবং মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া এবং প্রার্থনার দিন হিসেবে পালিত হয়।

বায়তুল মোকাররমে আযোজন হয় বিশাল জমায়েতের। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ১০টা থেকেই মুসল্লিরা প্রবেশ করতে শুরু করেন, এবং পরবর্তী সময়ে নামাজের সময় যত ঘনিয়ে আসে, ততই মসজিদে মুসল্লিদের চাপ বাড়তে থাকে। সকাল ১১টার পর মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা মসজিদের সাত তলাতেও অবস্থান নেন। মসজিদের প্রবেশমুখে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং পুলিশের তল্লাশি সত্ত্বেও মুসল্লিরা সুশৃঙ্খলভাবে নামাজ আদায় করেন।

এ বিশেষ দিনে, মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন। মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য কামনা করে একসাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। মোনাজাতের সময় পুরো মসজিদ কান্নায় ভেসে যায় এবং মুসল্লিরা একে অপরের জন্য দোয়া করেন। এ দিনটি উপলক্ষে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা, রহমত এবং নৈকট্য লাভের জন্য মুসল্লিরা আরও বেশি করে ইবাদত-বন্দেগি করতে থাকেন।

রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউছুল আজম মসজিদসহ অন্যান্য মসজিদেও দেখা যায়, জুমাতুল বিদা উপলক্ষে মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। কিছু মসজিদে জায়গা না পেয়ে, রাস্তার ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায় মুসল্লিদের। এ ধরনের দৃশ্য ছিলো, বিশেষ করে বায়তুল মোকাররমসহ দেশের প্রধান মসজিদগুলোতে। সকাল ১১টার মধ্যেই মসজিদগুলোর ভেতরে ঠাঁই পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে অনেক মুসল্লি মসজিদের বাইরে বা সড়কে নামাজ আদায় করেন।

জুমাতুল বিদা, অর্থাৎ রমজানের শেষ শুক্রবার, মুসলিম বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি দিন। যদিও কোরআন বা হাদিসে সরাসরি জুমাতুল বিদার জন্য কোনও বিশেষ ফজিলত উল্লেখ করা হয়নি, তবে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার এবং এটি জুমার দিন হওয়ায় এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ দিনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, দোয়া এবং তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করার তীব্র আহ্বান জানানো হয়। ধর্মীয় নেতারা মুসল্লিদের তাড়াতাড়ি মসজিদে আসতে, বেশি বেশি ইবাদত করতে এবং বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে উৎসাহিত করেন।

এদিন, জুমার নামাজের আগে বিভিন্ন মসজিদে রমজানের তাৎপর্য এবং জুমাতুল বিদার গুরুত্ব নিয়ে খুতবা এবং আলোচনা করা হয়। খুতবায় মুসল্লিদের বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করতে উৎসাহিত করা হয় এবং রমজানের শেষ দিনগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করা হয়।

এদিন, মসজিদে ব্যাপক জনসমাগমের কারণে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। বিশেষভাবে, মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের ব্যাগ তল্লাশি করা হয় এবং মসজিদের বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। রাজধানী ঢাকার বাইরের অনেক বড় মসজিদেও এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়।

মোহাম্মদ আলী নামের এক মুসল্লি বলেন, আজকের দিনটি সব মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ, তবে জুমাতুল বিদা দিনটির গুরুত্ব অনেক বেশি। আজকের দিনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও বরকত চাওয়ার জন্য আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি।

ইব্রাহিম নামে এক মুসল্লি জানান, রমজানের শেষ জুমা, বিশেষ করে জুমাতুল বিদা, আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যেন আমাদের জীবন বরকতময় হয়ে ওঠে।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, জুমাতুল বিদা রমজান মাসের সবচেয়ে উত্তম দিন, এটি ইসলামে বিশেষ মর্যাদা বহন করে। তাই মুসলিম উম্মাহকে এ দিনে বিশেষভাবে ইবাদত করার জন্য উত্সাহিত করা হয়।

জুমাতুল বিদা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেখানে তারা একত্রিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাত প্রার্থনা করেন। বায়তুল মোকাররমসহ দেশের অন্যান্য মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সবকিছুই সাক্ষী ছিল রমজানের শেষ জুমার এ মহান দিনের মহিমার।

সবার দেশ/কেএম