ঈদের দিনে করণীয় ও বর্জনীয়ঃ

বছর ঘুরে মুমিন মুসলমানের নিকট আনন্দ খুশির বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদ। ঈদ অর্থ আনন্দ উৎসব, যা বারবার ফিরে আসে। ফিতর অর্থ রোজা ভঙ্গ করা। ঈদের দিন দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার নিয়মকে ভাঙা হয় বিধায় এ ঈদকে ঈদুল ফিতর বলে।
ঈদে কিভাবে খুশি উদযাপন করবে সে নির্দেশনা ও ইসলামে সুন্দর উপস্থাপন রয়েছে। তাই ঈদের দিনের করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
ঈদের দিনে করণীয়
১. গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করা
ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (স.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (বুখারি: ১/১৩০)
২. উত্তম পোশাক পরিধান করা
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ও সাধ্যের ভেতরে সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি ঈদে ডোরাকাটা পোশাক পরিধান করতেন। (বায়হাকি: ৬৩৬৩)
৩. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার করা
আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনা মতে, তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি: ৯৫৩)
৪. ঈদগাহে যাতায়াতের সময় তাকবির বলা
ঈদগাহে যাতায়াতের সময় ঈদুল ফিতরের দিন তুলনামূলক নিম্নস্বরে তাকবির বলা এবং ঈদুল আজহার দিন উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। (সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা: ১৭১)
৫. ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা
ঈদগাহে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নত। যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা। আর প্রস্থানের সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি: ৯৮৬)
৬. হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া
কোনো ধরনের অপারগতা ও অক্ষমতা না থাকলে, হেঁটে ঈদগাহে গমন করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি: ১২৯৫)
৭. ঈদগাহে যেতে শিশুদের সঙ্গে নেয়া
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্বাস, আলী, জাফর, হাসান, হুসাইন, উসামা বিন জায়দ, জায়েদ বিন হারিসা, আইমান ইবনে উম্মু আইমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। অতঃপর তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হতেন এবং প্রত্যাবর্তনের সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ঘরে আসতেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৬৩৪৯)
৮. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা
ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, জুবায়ের বিন নুফাইর (রা.) বলেন, নবীজি (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম অর্থাৎ আল্লাহ আমার ও আপনার যাবতীয় ভালো কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির: ২/৫১৭)
৯. ঈদের খুতবা শোনা
ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন সায়িব (রা.) বলেন, নবীজি (স.)-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শোনার জন্য বসবে, আর যে চলে যেতে চায়, সে চলে যাবে। (ইবনে মাজাহ: ১০৭৩)
১০. জিয়ারত করা
পবিত্র ঈদের দিন পরিবারের যে সমস্ত মুরুব্বি মা বাবা দাদা দাদী আত্নীয় স্বজন কবরবাসী হয়েগেছে তাদের কবর জিয়ারত কর।কবরের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করা।একদিন তাদের মত আমিও কবরে চলে যেতে হবে।
আরও পড়ুন <<>> ইতিকাফের ফজিলত ও বিধান
#ঈদের দিনে বর্জনীয়
১. বিজাতীয় সংস্কৃতি কাম্য নয়
ঈদুল ফিতরের মতো ধর্মীয় উৎসবগুলো মুসলমানদের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতিতে সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনও কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাউদ: ৩৯৮৯)
২. বিদআত থেকে সতর্ক থাকা
ঈদের দিন অনেকে ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কাজ করে থাকে।শরীয়তের নিষেধ থাকা শর্তেও মন্দ নিত্য নতুন মনগড়া ইবাদত সৃষ্টি করা।
৩. গান-বাজনা-সিনেমা থেকে দূরে থাকা
ঈদের দিনের একটি স্বাভাবিক গুনাহ হলো- গান-বাজনা শোনা ও এতে জড়িত হওয়া। শরিয়তে এটি নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আবার যদি হয় অশ্লীল গান বা সিনেমা তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল [বৈধ] মনে করবে।’ (বুখারি: ৫৫৯০)
৪. অপচয় না করা
অপচয় এমন খরচকে বলা হয় যার কোনো উদ্দেশ্য নেই, যার কোনো ফায়দা নেই। ঈদের দিনকে ঘিরে অনেকে অযথা খরচ করেন। অথচ আল্লাহ তাআলা অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না।’ (সুরা আনআম: ১৪১)
লেখক:
ধর্মীয় শিক্ষক
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। মিরপুর, ঢাকা।