ঘৃণিত বক্তব্যের পর বুলডোজার কর্মসূচিতে সর্বস্তরের সমর্থন
হাসিনার নোংরা বক্তব্য আরও উস্কে দিলো জনতার ক্ষোভ
নেতা কর্মীরা জীবন দিয়ে ফিল্ড তৈরী করবে আর পলাতক নেতারা ভাই ভাতিজা বৌ, শালিকাদের পদ পদবি দিয়ে আবার ঝেকে বসবে, সে আশা আর সহজে পুরন হচ্ছে না। কতিপয় স্টুপিড ছাড়া অন্যরা বুঝে গেছে। কেউ আর সহজে বলির পাঠা হবে না।

গণহত্যা চালিয়ে ভারতে পলাতক মাফিয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে ঘিরে আবারও গর্জে ওঠা এক ঐতিহাসিক রাত পার করলো ছাত্র-জনতা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের সাথে পরিহাস করে হাসিনার দেয়া ভাষণে ৫ আগস্টের পর ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের মুখে পড়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে দেখা যায়, ধানমন্ডির ৩২ এর চিত্র রাতারাতি পাল্টে গেছে। বুলডোজার দিয়ে মুজিবের বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচি চলছে তখনও।
বুধবার রাতে গণহত্যাকারী হাসিনার বক্তব্য আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়। পলাতক অবস্থায় তার এ বক্তব্য প্রচারকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী-জনতা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়াদের মাঝে। দেশের বিভিন্ন স্থানেই এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
আগেই ঘোষণা দেয়া হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বক্তব্য প্রচারের সময় ধানমন্ডির ৩২ এর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হবে। হাসিনা ও নিষিদ্ধ জঙ্গি ছাত্রলীগ হাসিনার দুর্গন্ধময় চর্বিতচর্বন লাইভ প্রচারের অবস্থান থেকে সরে না আসায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে দলে দলে শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ মানুষ ধানমন্ডি-৩২ এর দিকে যেতে থাকেন। রাত আটটার মধ্যে জনতা ধানমন্ডি ৩২ ঘিরে ফেলে। প্রধান ফটক ভেঙে শিক্ষার্থী ও জনতা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাদের কেউ কেউ হাতে থাকা লাঠি ও ভারি বস্তু দিয়ে স্থাপনার বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করেন। লোহার জিনিস খুলে নিতে দেখা যায় কাউ কাউকে।
এদিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কেউ কেউ ‘মার্চ-টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা সহনশীল ও উদারতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। কিন্তু হাসিনার ঘৃণিত বক্তব্য প্রচারের পর ক্ষুব্ধ হয়ে তারাও বুলডোজার কর্মসূচিতে সমর্থন জানান। তারা বলছেন, খুনি হাসিনার মুখই তাকে এ পরিণতি ডেকে আনতে বাধ্য করেছে। সে চুপ থাকলে হয়তো এমনটা হতো না।
তাদের মধ্যে একজন কেফায়েত শাকিল। হাসিনার বক্তব্য শোনার পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন, তিনি আজও ক্ষমা চাইলেন না। উল্টো বিদ্বেষ ছড়ালেন, মিথ্যাচার করলেন। আসলে আত্মঅহংকারি খুনির সাথে মানবিক আচরণ যায় না। তাই ৩২ মবের সমালোচনা করে দেয়া পোস্টটি আমি প্রত্যাহার করলাম। হাসিনার আত্মঅহংকারি বক্তব্য ক্ষোভকে আরও উস্কে দিলো।
ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় হাসিনার প্রতিহিংসা ও নৃশংসতায় বাবা হারানো আলী আহমাদ মাবরুর ফেসবুকে লিখেছেন, আবু সাইদের গায়ে এতগুলো গুলি লাগলো, রক্ত বের হলো না কেনো? শহীদ আবু সাইদের হত্যার ভিডিও এআই নির্মিত, এ কথা বলে শেখ হাসিনা জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ ও আহতদের সাথে পরিহাস করলেন। তার পুরো বক্তব্যে একটি মুহুর্তের জন্য তাকে অনুতাপ করতে দেখলাম না। একজন অনুশোচনাহীন মানুষ হত্যাকারী তিনি।
জামায়াত নেতা ড. রেজাউল করিম লিখেছেন, শহীদের স্বজনদের আহাজারি আর আহতদের রোনাজারিরে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত। এখানো খুনি শেখ হাসিনার ঘৃণিত বক্তব্যের বিষ বাষ্পে ছাত্র জনতার ক্ষোভের বারুদ ক্রমাগত উর্ধমুখী। সে অগ্নিস্ফুলিঙ্গে ধরাশায়ী ধানমন্ডির কলঙ্কিত ৩২!!
সোহেল অতল লিখেছেন, শেখ হাসিনার দীর্ঘ বক্তব্য শুনলাম। কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। কর্মীদের জন্য কোনও দিকনির্দেশনা নেই। পুরো বক্তব্য জাতির পিতাময়। হাসিনাময়। উন্নয়নময়। স্বজন হারানোর বেদনাময়। এবং একটা চোরা প্রতিহিংসার সুর ক্ষণে ক্ষণে প্রকাশ হয়ে পড়ছিলো। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এ একটা মহিলাই যথেষ্ট।
আরিফ রহমান লিখেছেন, হাসিনার বক্তব্যটা শুনলাম, কিছু গড়পরতা ভদ্রতা করে ভুল স্বীকার তো দূরের কথা, উনি গোটা দেশবাসিকে দোষী করলেন। মানে কয়েকটা গ্রুপকে দোষারোপ করলেন না, উনি পুরো দেশের মানুষকে খারাপ বলে বসলেন, ছাত্রদের বেয়াদব বললেন। বললেন তিনি তো এরকম মানুষ রেখে আসেন নাই, বললেন মানুষ কীভাবে এমন হয়ে গেলো?
তিনি আরও বলেন, আরে ভাই ন্যারাটিভ তো বানানো হয় পক্ষ করে দিতে। সে কষ্টটাও উনি করলেন না। উনি বলতে পারতেন- কিছু দুষ্কৃতকারী খারাপ কাজ করছে, কিন্তু দেশের আপামর মানুষ এ দুষ্কৃতকারীদের চায় না কিংবা তাদের পক্ষে নাই। দেশের আপামর মানুষ ভালো। ফ্যাসিস্টদের মজা তো এখানেই। তারা আসলে নিজের ভেতর থেকেই মনেই করে- গোটা জাতিকে খারাপ বলার পরেও সে বুঝি তাকে ভালোবাসবে, সে বুঝি আবারও তাকে গদিতে বসাবে।
আওয়ামী লীগ যে মূলত আগাপাছায় একটা গণবিরোধী দল- এবং এমনটাই তারা থেকে যেতে চায়, শেখ হাসিনার বক্তব্য সেটাই প্রমাণ করলো।
মোঃ মনিরুল ইসলাম সরক লিখেছেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের পচাগলা দুর্গন্ধ এখনও শেষ হয়নি। দলীয় প্রধান আত্মীয়স্বজন সবাইকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের এমনিতেই লাওয়ারিশ হিসাবে রেখে গেছে। এখন মরার উপর খরার ঘা। নেতা কর্মীরা জীবন দিয়ে ফিল্ড তৈরী করবে আর পলাতক নেতারা ভাই ভাতিজা বৌ, শালিকাদের পদ পদবি দিয়ে আবার ঝেকে বসবে, সে আশা আর সহজে পুরন হচ্ছে না। কতিপয় স্টুপিড ছাড়া অন্যরা বুঝে গেছে। কেউ আর সহজে বলির পাঠা হবে না।
সবার দেশ/এমকেজে