সন্তানকে দিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরির অভিযোগ
টিকটকার ‘ক্রিম আপা’ গ্রেফতার

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত আশুলিয়ার শারমিন শিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সন্তানদের দিয়ে টিকটক বানিয়ে ফেসবুকে আপলোডের অভিযোগে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে ঢাকার সাভার থেকে তাকে গ্রেফতা করা হয়।
আশুলিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার (৯ এপ্রিল) শারমিন শিলার বিরুদ্ধে মামলা করেন সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান। মামলায় অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্ত শারমিন শিলা নিজের সন্তানদের দিয়ে বিভিন্ন অশালীন ও আপত্তিকর টিকটক ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছিলেন, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ভাইরাল হওয়ার নেশায় সন্তানদের বলি!
জানা গেছে, ফেসবুকে পরিচিতি পেতে শারমিন শিলা কখনও নিজের মাথার চুল ন্যাড়া করে, কখনও ভারী গহনা পরে টিকটক ভিডিও বানিয়েছেন। এসব ভিডিওতে নিজের সন্তানদেরও নিয়মিত ব্যবহার করতেন তিনি। বিভিন্ন ট্রেন্ডের অনুসরণে কখনও ‘ম্যাচিওর’ কনটেন্টে সন্তানদের যুক্ত করা, কখনও আবার ‘ড্রামাটিক চ্যালেঞ্জ’-এর অংশ বানানো হয় তাদের।
এভাবে অল্প সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিতি পেলেও, তা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয় স্থানীয় মহলে। বিশেষ করে শিশুদের ব্যবহার করে এ ধরনের কনটেন্ট বানানোয় উদ্বেগ জানায় এলাকাবাসী ও শিশু অধিকার সংগঠনগুলো।
কেনো ‘ক্রিম আপা’ নামকরণ?
ফেসবুকে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম বিক্রি করে তিনি ‘ক্রিম আপা’ বা ‘কিরিম আপা’ নামে পরিচিতি পান। ক্রিম বিক্রির পাশাপাশি লাইভে এসে ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি। তবে এসব কনটেন্টে ছিল নানা ধরনের বিতর্কিত আচরণ—যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তার অভিভাবকত্ব নিয়েও।
প্রশাসনের বক্তব্য
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, শিশুদের দিয়ে আপত্তিকর ভিডিও তৈরি এবং তা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের অভিযোগে শারমিন শিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।
তিনি আরও জানান, মামলার অন্যান্য দিকগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে শিশু অধিকার আইনসহ অন্যান্য আইনি ধারায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিশু সুরক্ষার দাবি
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় শিশু অধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, ভিউ ও টাকার লোভে অভিভাবকরা যদি নিজেদের সন্তানদের এভাবে ব্যবহার করে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামাজিক নিরাপত্তা কোথায়?
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার নামে শিশুদের এমন বাণিজ্যিক ব্যবহারে ভবিষ্যতে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্টে ব্যবহারের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনগত কাঠামোর দুর্বলতা, সমাজে সচেতনতার অভাব এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর শিথিল নীতিমালার কারণেই এসব ঘটনা বারবার ঘটছে।
সবার দেশ/কেএম