অলি উল্লাহ নোমানের ফেসবুক পোস্ট থেকে
আমরা হলাম ফ্যাসিবাদের দোসর!
শনিবার (৪ জানুয়ারি) আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক অলি উল্লাহ নোমানের একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক্রিডিটেশন কার্ড সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে অকার্যকর করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের অনেক দোসরকে এক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হয়েছিল এবং তাদের ঠেকানোর জন্যই না-কি এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অনেকে বুঝে না বুঝে সাধুবাদ জানিয়েছেন এ মহতী (!) উদ্দ্যোগকে। এক্রিডিটেশন কার্ডের পরিবর্তে সাময়িক পাশ ইস্যু করা হচ্ছে সাংবাদিকদের জন্য। সে জন্য সাংবাদিকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে কারওেই সাময়িক কার্ড পাবার যোগ্য।
সর্ষের ভুত তো এখানেই! সরিজমিনে দেখা গেলো ভারতে বিতাড়িত খুনি হসিনার দোসরদের বাবারাই তালিকা করেছেন এবং ফ্যাসিস্টের দোসরদের ৯০ শতাংশই এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
নিচে অলি উল্লাহ নোমানের ফেসবুকের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো তার পোস্টকৃত ছবিসহ।
‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক্রিডিটেশন কার্ড সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ এ কারড আর কার্যকর নয়। এনিয়ে হৈ চৈ হলে বলা হল ফ্যাসিবাদের অনেক দোসরকে এক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছিল। দোসরদের ঠেকানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবাই বাহবা দিলেন। এবার সচিবালয়ে সাংবাদিক নামধারী দোসরদের প্রবেশ ঠেকানো হবে!
গত বুধবার আমার এক সহকর্মী বললেন চলেন সচিবালয়ে ডু দিয়ে আসি। বললাম, এক্রিডিটেশন তো বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় । তারপরও বেচারা বললেন, গতকাল অনেকেই ঢুকেছে এই কার্ড দিয়ে। গেলাম প্রবেশ গেইটে। কার্ড দেখানোর পর একজন পুলিশ অফিসার জানতে চাইলেন তালিকায় আমাদের নাম আছে কি না। জিজ্ঞেস করলাম কোন তালিকায়। পাসের টেবিল থেকে একটা তালিকা নিয়ে দেখালেন। ২২৫/২৬ জনের নাম আছে। তালিকায় এক নম্বরে পোষ্টারে ছবির এই ব্যক্তিটি রয়েছেন। তিনি তালিকাটি দিয়েছেন গেইটে। এই তালিকার বাইরে থাকলে ঢোকা যাবে না। আমরা ফেরত চলে আসলাম।
তালিকাটিতে যা দেখলাম ৯০%-ই দোসরের পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করেন। মনে মনে ভাবলাম, আমরা আসলে কিছুই শিখলাম না। ২০১০ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে দেখলাম আমার এক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশেই ছিলাম। আর এক্রিডিটেশন কার্ড পাইনি। অথচ ১৯৯৫ সালের জুন মাস থেকে আমার এক্রিডিটেশন কার্ড ছিল। ২০১০ সালের আগস্টে সেটা বাতিল করেছিল ফ্যাসিবাদি সরকার। আমার প্রথম কার্ডের নম্বর ছিল ২৯৯। ২০১০ সালে শেখ হাসিনা সরকার বাতিল করার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর এই নম্বরে আমার নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে।
আগষ্ট বিপ্লবের পর দেশে ফিরে আবার আবেদন করি। নতুন কার্ড ইস্যু করা হয় আমার নামে। আমার মত যারা নমশুদ্র সাংবাদিক তাদের বেলায় এমন ঘটনাই ঘটবে, ফ্যাসিবাদের দোসর ঠেকানোর কথা বলে আমাদের কার্ড বাতিল হবে। আর যারা ফ্যাসিবাদে দোসর ছিলেন, শেখ মুজিব পুজা করে ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়েছিলেন তারা শুধু তালিকার এক নম্বরেই নয়, তাদের অনুমোদিত তালিকাভুক্তরাই কেবল সচিবালয়ে যেতে পারবে!
এটা হচ্ছে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সরকারের ফ্যাসিবাদ ঠেকানোর কর্মসূচি।
সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমরা এখন নতুন করে ফ্যাসিবাদের দোসরের তালিকায়! আর শেখ মুজিব ও হাসিনা পুজারিরা হলেন আগষ্ট বিপ্লবে গঠিত সরকারের জন্য নিরাপদ!
শহীদের রক্ত এবার বৃথা যাওয়ার কোন আশঙ্কা নাই।
দুদকের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ এই তালিকাটি সংগ্রহ করে তাদের সম্পদ এবং আয়ের উৎস মিলিয়ে দেখুন।’
সবার দেশ/এওয়াই