Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সামিউর সাগর


প্রকাশিত: ০০:৫৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০১:১৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৩২ ফিরে গেলো ৩৬ এ 

ফ্যাসিবাদের কেবলামুক্ত রজনী

বুলডোজারে গুড়িয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাফিয়াতন্ত্রের তীর্থভূমি ধানমণ্ডি ৩২, হাসিনার সুধাসদন, হাসিনার দ্বিতীয় কেবলা খুলনার শেখ বাড়ি, সিলেট শেখ মুজিবের ম্যুরাল, রাবির স্থাপনায় মুজিব পরিবারের নামফলক, গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি।

ফ্যাসিবাদের কেবলামুক্ত রজনী
ছবি: সবার দেশ

৫ ফেব্রয়ারি ২০২৫ রাত বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক তাৎপর্যপূর্ণ রজনী। ওইরাত ‘ফ্যাসিজমের কেবলা’ নামে ক্ষ্যাত শেখ পরিবারের একে একে সব স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়। ধানমন্ডি ৩২, সুধাসদন, খুলনা শেখ বাড়ি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ পরিবারের নাম নিশ্চিহ্ন করা, সিলেটে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙ্গা, কুষ্টিয়ায় খুনি হাসিনার দোসর মাহবুবুল আলম হানিফের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়।

শুরুটা করে পলাতক হাসিনা নিজেই। ওইদিন ছিলো ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ৬ মাস। এ উপলক্ষ্যে তিনি (শেখ হাসিনা) নিষিদ্ধ জঙ্গি ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে লাইভ করার ঘোষনা দেন। এ খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্ররাও ঘোষনা দেয় ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিলের। বরাবরের মতোই হাসিনা গোয়ার্তুমি করে তার ঘোষণায় অটল থাকলে সন্ধ্যার পর পরই ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ঘেরাও করে ফেলে। যদিও শেখ হাসিনার লাইভে আসার কথা রাত ৯টায়।

বুলডোজারে  গুড়িয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাফিয়াতন্ত্রের তীর্থভূমি ধানমণ্ডি ৩২

শেখ হাসিনা তার অবস্থান থেকে সরে না এলে রাত ৮টার সময়ই বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী ধানমন্ডি ৩২ এর গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে শাবল-হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। এক পর্যায়ে বাড়িটির দুইতলায় দেয়া হয় আগুন। 

রাত সোয়া ১০টার দিকে হঠাৎ করে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতার কাছে খবর আসে অভিশপ্ত বাড়িটি ভাঙার জন্য বুলডোজার আসার সময় কলাবাগান এলাকায় আটকে দেয়া সেনাবাহিনী। এ সময় দলে দলে মানুষ মিরপুর সড়ক দিয়ে কলাবাগানের দিকে রওনা করে। বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিরোধে সেনাবাহিনী পিঁছু হটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ আখ্যা দিয়ে ওই বাড়িতে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছেন। কয়েক হাজার মানুষ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে বাড়িটি নিশ্চিহ্ন করার জন্য যে যার মতো অংশগ্রহণ করছেন। উত্তেজিত জনতা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। খালি হাতে যে যেভাবে পেরেছেন বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলেন।

বাড়িটির দরজা-জানালা খালি হাতে ভেঙে ফেলছেন। বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন উত্তেজিত জনতা। আজাদি না গোলামি, আজাদি আজাদি। দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও। এরকম নানা স্লোগানের প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ৩২ নম্বরের সড়কটি। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ওই এলাকা।

রাত যত বাড়তে থাকে, দলে দলে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিশপ্ত বাড়ির সামনে এসে জড়ো হতে থাকে। যুবক, কিশোর, নারী-পুরুষসহ বয়স ধর্মবর্ণনির্বিশেষে রীতিমতো মানুষের ঢল নামে এ সড়কটিতে।

৩২ নম্বর সড়ক ছাপিয়ে মানুষের ঢল মিরপুর সড়ক পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। মূল সড়কের যান চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য ছাত্রদের হাতে হাত রেখে যানবাহন চলাচলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করতে দেখা যায়।

অনেককে বলতে শোনা যায়, অন্তত একটি করে ইট হলেও নিয়ে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে চান। ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে এ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরকে আখ্যায়িত করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ কেউ এখান থেকে একটি লোহার গ্রিল, একটি কাঠের টুকরা, অর্থাৎ যে যার মতো যা পারছেন স্মৃতি হিসেবে আঁতুড়ঘরখ্যাত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকছেন।

এদিকে রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনগণকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধানমন্ডি মিরপুর রোডের মূল সড়কে অবস্থান নেন। পরে রাত ৯টা ৫৮ মিনিটের দিকে তারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।

এদিকে মিরপুর রোড থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরমুখী সড়ক দিয়ে একটু পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে বাম পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ভিডিও প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়। উৎসুক মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে শেখ হাসিনার সেই নির্মম গণহত্যার তাণ্ডবলীলা অবলোকন করেন। অনেককে সেখানে আবেগতাড়িত হয়ে যেতে দেখা যায়।

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের আয়োজনে ছাত্রসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার রাত ৯টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবে বলে সোশ্যাল মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও এ তথ্যটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। এ খবরের পর ফ্রান্সে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে লাখ লাখ মানুষকে যাওয়ার আহ্বান জানান। 

নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, কাডাল রানী লাইভে যাবে যখন, তখন সবাই যান ৩২ নম্বরে। বাকি কাম সাইরা আইসেন এইবার। লাখ লাখ মানুষ আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। আওয়াজ তোলেন থাকবে না, ৩২ নম্বর থাকবে না। এ আহ্বানের পর ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ নামে একটি কর্মসূচি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ শিরোনামে একটি পোস্টার ফেসবুকে পোস্ট করে বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন লেখেন, আপার বক্তব্যের তালে তালে বুলডোজার চলবে।

এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহও। গতকাল সন্ধ্যায় কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আজ রাতে ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ তার এমন ঘোষণার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে লাঠিসোটা, এসএস পাইপ, হাতুড়ি ইত্যাদি নিয়ে ছাত্র-জনতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জড়ো হতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। বাড়ির ভেতরে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা প্রবেশের পর ভেতরের অবকাঠামো কাউকে হাতুড়ি দিয়ে, কাউকে শাবল দিয়ে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এ সময় তাদের আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও শোনা যায়।

এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের এ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন

হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দিয়েছে ছাত্র-জনতা। বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এ আগুন দেয়।

সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সুধা সদন পুরোপুরি খালি ছিলো। এরপর আজ (বুধবার) শেখ হাসিনার বক্তৃতা ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। পরে তারা প্রথমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুরের বাড়িতে আগুন দেয়। পরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেয়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলো সেসব ফ্যাসিবাদীদের কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।

এর আগে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টার দিকে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স।

এ ছাড়া সন্ধ্যায় ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন’ নামে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করা হয়।

ছাত্র-জনতার বুলডোজারে গুড়িয়ে গেলো হাসিনার দ্বিতীয় কেবলা খুলনার শেখ বাড়ি

এদিকে খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় শেখ হেলালের বাড়িতেও বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করার খবর পাওয়া গেছে।

খুলনার শেখ বাড়ি হিসেবে খ্যাত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। বুধবার রাত ৯টার দিকে বুলডোজার দিয়ে এ বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়।

এর আগে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা শেরে বাংলা রোডে অবস্থিত শেখ বাড়ির সামনে এসে জড়ো হতে থাকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এসময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে তারা পরিত্যক্ত ওই বাড়ির প্রবেশ পথে টিন ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা অস্থায়ী দরজা ভেঙে ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে। উত্তেজিত জনতা রুদ্ররোষে দোতলা ওই বাড়িতে লাঠি, রড দিয়ে আঘাত হানে।

রাত সাড়ে ৯ টার দিকে একটি এবং তার ১০ মিনিট পরে আরও একটি বুলডোজার সেখানে আসে। তার আগেই ছাত্র-জনতা পরিত্যক্ত বাঁশ, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় সামনের ব্যস্ততম শেরে বাংলা রোডে যাব চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ দৈনিক ‘সবার দেশ’কে বলেন, এ শেখ বাড়ি ছিলো ‘হাসিনার দ্বিতীয় কেবলা’। খুলনাবাসীকে নির্যাতিত নিষ্পেষিত করার আখড়াস্থল। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঘটতো এখান থেকে। গত ৪ আগস্ট এ বাড়িটি ছাত্র-জনতা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলো। কিন্তু এর কাঠামো দাঁড়িয়েছিলো। ফ্যাসিবাদের দোসররা বাড়িটি রক্ষা করতে দুই প্রবেশ পথে বাঁশ টিনের বেড়া দিয়েছিলো। এ কাঠামোর ওপর ভর করে তারা আবারও বাংলার মাটিতে পুনর্বাসিত হতে চায়। এ মাটি থেকে আজও শহীদদের রক্তের দাগ শুকায়নি। আমরা আর কোন ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেবো না।

উল্লেখ্য- শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাই সাবেক এমপি শেখ হেলাল, সাবেক এমপি শেখ জুয়েল, বিসিবির সাবেক পরিচালক শেখ সোহেলসহ পাঁচ ভাই এ বাড়িতে প্রায়ই বসবাস করতেন এবং এ বাড়ি থেকে রাজনীতি, চাকরি বাকরি, নিয়োগ বদলি, নির্বাচনে নমিনেশন, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার শেষ সময় পর্যন্ত দুটো বুলডোজার বাড়ি ভাঙার কাজ চলছিলো। সেখানে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।

সিলেট উত্তপ্ত, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল

ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার হামলা ও ভাঙচুরের খবরে সিলেটের রাস্তায় নেমে পড়েছে ছাত্র-জনতা। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজপথ। বৈষম্যবিরোধী শত শত জনতা রাত সাড়ে ৯টায় ঐতিহাসিক কীনব্রিজের সামনে জড়ো হয়ে বুলডোজার নিয়ে মিছিল বের করে।

এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে বিরাট মিছিলটি এগিয়ে যায় সিলেটের জেলা প্রশাসকের অফিসের দিকে। সেখানে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের অবশিষ্টাংশ ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

কীনব্রীজের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেটের প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবের নেতৃত্বে শত শত ছাত্র-জনতা বুলডোজার নিয়ে মিছিল শুরু করে।

‘ফ্যাসিবাদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিবাদের আস্তানা বাংলাদেশে হবে না’ শ্লোগানে মুখরিত মিছিল এগিয়ে যায় বন্দর বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। সেখানে বুলডোজার দিয়ে আগে কিছুটা ভেঙে ফেলা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল পুরোপুরি ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে।

এখানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, বাংলাদেশের কোথাও ফ্যাসিবাদের স্মৃতিচিহ্ন থাকতে দেয়া হবে না। সিলেটেও ফ্যাসিবাদের কোন স্মৃতিচিহ্ন থাকবে না।

যারা আবার ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছেন তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, মুজিববাদ ফিরবে না, হাসিনাকেও ফিরতে দেয়া হবে না। তাদের স্বপ্ন ধুলিস্মাত করে দেবে এদেশের লড়াকু জনতা। এরপরও যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে, তাদেরও এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে উপস্থিত ছাত্র-জনতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

রাত সোয়া ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার পর্যন্ত স্লোগান আর ভাঙচুর চলছিলো।

রাবির স্থাপনায় মুজিব পরিবারের নাম মুছে দিতে শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থাপনায় মুজিব পরিবারের নাম মুছে দিতে ভাঙচুর কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বোহা চত্বরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম ফলক ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে 'বিজয়-২৪' নামকরণ করেন তারা।

এদিকে, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল, কামরুজ্জামান হল, শেখ রাসেল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে থাকা নাম ফলক ভেঙে ফেলেন। এছাড়াও ক্যাম্পাস জুড়ে থাকা মুজিব পরিবারের নামে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে ফেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা।

এসময় শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ফাতিমা আল ফাহরিয়া ও কামরুজ্জামান হলের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আলি রায়হান হল এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী, শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কনিষ্ঠ শহীদ রিয়া গোপ নামকরণ করেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?' 'ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না' 'আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ' 'শেখ হাসিনার গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে', 'অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও' এমন স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, খুনি হাসিনা মনে করেছে আমরা সব ভুলে গেছি। খুনি হাসিনার হাতে হাজারো ছাত্র সমাজের রক্তের দাগ লেগে আছে। খুনি হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অস্তিত্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর থাকবে না। অতিদ্রুত শেখ হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসি দিতে হবে বলে সরকারের জোর দাবি জানান তিনি।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, গতকাল শেখ হাসিনা লাইভে এসে ছাত্র জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। আমার ভাইদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনি হাসিনার খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখায় কেমনে? আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া পদচিহ্ন ও রাবি থেকে তাদের শেকড় মুছে দিতে আমাদের আজকের এ আন্দোলন।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের বাহিরে বসে দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করে দেশে এনে ফাঁসি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

এসময় প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী ভাঙচুর কর্মসূচিতে অংশ নেন।

বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি

কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর এ বাড়িতে হামলা করা হয়েছিল।