Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সামিউর সাগর


প্রকাশিত: ২১:২৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২১:৫৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিদেশী কোম্পানীর শেয়ার ’জয়বাংলা’ করতে উচ্চ আদালতকে ব্যবহার

মাফিয়া হাসিনার সহযোগি ব্যবসায়ী ওরিয়ন গ্রুপের সাগর চুরি

বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বেলহাসার শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি এ নিয়ে যাতে সরকারের কোন পর্যায়ে আবেদন নিবেদন করতে না পারেন সে ব্যবস্থাও করেছেন অনুগত উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে। 

মাফিয়া হাসিনার সহযোগি ব্যবসায়ী ওরিয়ন গ্রুপের সাগর চুরি
ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত মাফিয়া শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সহযোগি ব্যবসায়ী ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর অংশিদারদের শেয়ার নিজের কব্জায় নিয়েছেন। এ কাজে তিনি দেশের আদালতকেও ব্যবহার করেছেন নির্বিঘ্নে।

রাতারাতি চরিত্র পরিবর্তন করে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট হয়ে ওঠা ওবায়দুল করিম দেশি-বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার হাতিয়ে নিয়েছেন বেআইনিভাবে ক্ষমতা ও আদালতকে অপব্যবহার করে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতকেও ব্যবহার করেছেন নিজের মতো করে। এতে আইনের তোয়াক্কা না করে শুধু দেশীয় অংশিদার নয়, বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও ওবায়দুল করিমের প্রতারণা ও জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। 

বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বেলহাসার শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি এ নিয়ে যাতে সরকারের কোন পর্যায়ে আবেদন নিবেদন করতে না পারেন সে ব্যবস্থাও করেছেন অনুগত উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে। 

শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রতারণার শিকার বেলহাসা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের সাথেও এ নিয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে। এতে উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিদেশীদের কাছে। 

দুবাই ভিত্তিক খ্যাতিসম্পন্ন বিনিয়োগাকরী প্রতিষ্ঠান বেলহাসা। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসেছিলো ইনফাস্ট্রাকচার ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। অথচ, যৌথ প্রকল্পে এ কোম্পানীর শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পর সরকারকে চিঠিপত্র দিতে পারবে না, এ মর্মে উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) নিষেধাজ্ঞা নিয়েছেন।  হাইকোর্টের এ আদেশই প্রমান করে ওবায়দুল করিমদের প্রভাব কতটা বিস্তৃত ছিলো। অনুসন্ধানে পাওয়া নথিপত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।  

অনুসন্ধানে ওবায়দুল করিমের জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আরও নানা প্রমান পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার নির্মান প্রকল্প ও মতিঝিল সিটি সেন্টার নির্মান প্রকল্পে নগ্ন জাল জালিয়াতি ও প্রতারণা আশ্রয় নিয়েছেন ওবায়দুল করিম। মূল বিনিয়োগকারীদের অস্তিত্বহীন করতে এক পর্যায়ে কোম্পানীর নামও পরিবর্তন করেছেন নিজের মতো করে।  

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আইন ও বিচারকের চেয়ারের অপব্যবহার করে আদালতের বিচারকরাও ভুয়া তথ্যে নির্ভর করে ফ্যাসিবাদ সহযোগি ব্যবসায়ীর প্রতারণা ও জালিয়াতির পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বিভিন্ন প্রকল্পে ওবায়দুল করিমের ব্যবসায়ীক অংশিদার দেশীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে দেশের ইজ্জত।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালে দুবাই ভিত্তিক বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকটিং কোম্পানী এবং বাংলাদেশের অ্যাকোম ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী যৌথ উদ্যোগে অবকাঠামো,বহুতল ভবন নির্মান ও পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর মধ্যে দুবাই ভিত্তিক বেলহাসা ছিল মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।  সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকটিং কোম্পানী এবং বাংলাদেশের অ্যাকোম ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী যৌথভাবে কাজ করার জন্য নিজেদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ৩টি প্রকল্পে টেন্ডারে অংশ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকায় গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার, মতিঝিলে ৩৭ তলা সিটি সেন্টার এবং মেঘনাঘাট ৪৫০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। 

প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাছাই এবং অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে কাজের অনুমোদন পায়।  
গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারে দরপত্র দাখিলের নথি অনুযায়ী বেলহাসা ছিলো এ প্রকল্পের লিড পার্টনার বা মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন এ কোম্পানীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আর্থিক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই যোগ্য বলে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হয় তখন। 

যৌথভাবে কাজের চুক্তি অনুযায়ী এ প্রকল্পে বেলহাসার শেয়ার ছিলো ৮০ শতাংশ এবং ওবায়দুল করিম পরিবারের ছিলো ২০ শতাংশ। কিন্তু, ২০০৫ সালে ওবায়দুল করিম জাল স্বাক্ষরে নথিপত্র তৈরি করেন। এক পর্যায়ে ২০০৫ সালের দিকে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে শেয়ার পরিবর্তন করে ওবায়দুল করিম পরিবারের কব্জায় নেয়া হয় ৯৫ শতাংশ শেয়ার। বাকী ৫ শতাংশের মালিকানা দেয়া হয় বেলহাসাকে। অথচ , প্রাইভেট সেক্টর ইনফাস্ট্রাকচার-এর গাইডলাইন অনুযায়ী টেন্ডার অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পর মূল বিনিয়োগকারী পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। 

জালিয়াতির এখানেই শেষ নয়; জাল দলিলপত্র তৈরি করে শেয়ার পরিবর্তনের মাধ্যমে কোম্পানীর মালিকানা নিজেদের কব্জায় নেয়ার পর হাইকোর্ট থেকে একটি রহস্যজনক আদেশ আদায় করেন ওবায়দুল করিম। ওবায়দুল করিমের আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোট এ মর্মে আদেশ দেয়, বেলহাসা সরকারের কোন কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোন রকমের চিঠিপত্র দিতে পারবে না। এ আদেশের ফলে উচ্চ আদালতের ভূমিকাকেও বড় আকারে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যদিও ওবায়দুল করিমের পরিবারের সদস্যদের টেন্ডারের শর্তপুরনের যোগ্যতাই ছিলো না এবং তারা টেন্ডারে অংশগ্রহনও করেনি। 

টেন্ডারে লিডিং পার্টনার হিসাবে অংশগ্রহন করেছিলো বেলহাসা এবং তাদের এ কাজের যোগ্যতা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিলো। এজন্যই কাজের অনুমতিও লাভ করেছিলো। কিন্তু টেন্ডার অনুমোদনের পর সকল নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওবায়দুল করিম পরিবার কোম্পানীর মালিকানা পরিবর্তন করে নেয়। আর এতে সায় দেয় উচ্চ আদালত।  

অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোম্পানীর শেয়ার হাতিয়ে নেয়াই শেষ নয়। এক পর্যায়ে কোম্পানীর নামও পরিবর্তন করেন ওবায়দুল করিম। বেলহাসা-অ্যাকোম জেভি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটকে পরিবর্তন করে কোম্পানীর নাম রাখা হয় ওরিয়ন ইনফাস্ট্রাকচার।  

অনুসন্ধানে পাওয়া নথিপত্রের তথ্যে দেখা যায়, জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণ ওবায়দুল করিম পরিবারের কব্জায় নেয়ার পর পেইড-আপ কেপিট্যাল নিয়েও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। বেলহাসাকে কোন রকমের অবহিত না করেই ওবায়দুল করিম পরিবার পেইড আপ কেপিট্যাল বাড়িয়ে নেয়। বেলহাসার স্বাক্ষর জাল করে পেইড-আপ কেপিট্যাল ৫ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা করা হয়। যা বেলহাসা জানেই না।  

কোম্পানী কব্জায় নিয়ে পেইড আপ ক্যাপিটাল বৃদ্ধির পর ওবায়দুল করিম পরিবার প্রকল্পের ব্যায়ও অস্বাভাবিক বাড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের ৬৭০ কোটি টাকার প্রকল্প ছিলো। এটাকে বাড়িয়ে ২৩৭৮ কোটি টাকা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বাড়তি ১৭০৮ কোটি টাকার পুরোটাই ওবায়দুল করিম পরিবার হাতিয়ে নেয় প্রকল্প থেকে।  

যা ঘটেছে মতিঝিলে সিটি সেন্টার প্রকল্পেঃ 

গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের মতোই বেলহাসা ও অ্যাকোম জেভি লিমিটেড যৌথভাবে মতিঝিলে সিটি সেন্টার নির্মান প্রকল্পেও টেন্ডারে অংশ নেয়। সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ তলা ভবন নির্মান প্রকল্পে ২০০৩ সালের ১১ মে আর এফ পি জমা দেয়। ২০০৩ সালের ২২ জুন ঢাকার তৎকালীন সিটি কর্পোরেশন বেলহাসা ও  অ্যাকম জেভি লিমিটেডকে লেটার অব এক্সেপ্টেন্স ইস্যু করে।  

Belhasa এবং ACCOM এর Joint Venture Agreement অনুযায়ী Special Purpose Vehicle Company (SPVC) Belhasa Accom JV Ltd. registration হয় ৬ই এপ্রিল ২০০৪ হয়। অবাক ব্যাপার-ওরিয়ন ল্যাবরেটরি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ দরপত্রে অংশগ্রহণ করে নাই এবং যৌথ গ্রিমেন্টেরও কোন পার্টনারও ছিলো না। ওবায়দলু করিম অ্যাকোমের শেয়ার হোল্ডার ছিলেন মাত্র। এ সুবাদে তিনি ওরিয়ন ল্যাবরেটরিকে অবৈধভাবে শেয়ার হোল্ডার বানান।  

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, বেলহাসা অ্যাকোম জেভি লিঃ সাথে ২০০৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করে।  পরবর্তীতে অন্য শেয়ার হোল্ডারদের না জানিয়ে নিজেই কথিত একটি বোর্ড মিটিং আয়োজন করে ওবায়দুল করিম। সে মিটিংয়ে অন্যদের স্বাক্ষর জাল করে ওরিয়ন  ল্যাবরেটরীর নামের শেয়ার হস্তান্তর অনুমোদন দেখানো হয়।   

মতিঝিলের ৩৭ তলা ‘সিটি সেন্টার’ নির্মাণ কাজের জন্য সোসাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিঃ (এস.আই.বি.এল)  ব্যাংক থেকে ৪০ টাকা ঋন নেয়া হয়,  Ref: SIBL/HO/INV/2004, dated: 17th June। এ ৪০ কোটি ঋনের টাকায় সিটি সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের ফ্লোর বিক্রির টাকা দিয়েই ভবনের নির্মান কাজ শেষ হয়।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফ্লোর বিক্রির টাকা আসা শুরু হলে ঋণের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নেয় ওবায়দুল করিম। ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ এবং লোন পরিশোধের পর ওবায়দুল করিম অন্য ব্যবসার জন্য উক্ত কোম্পানীর নামে ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারী এসআইবিএল থেকে আরো ৫০ কোটি টাকা ঋন নেয় Ref.:SIBL/HO/IRMD/২০১৭/৩৮৩। ২০২৪ সালে ৩১ জুলাই লোনের পরিমান দাড়ায় ৮৬,৩৮,১৬,৯৮৫।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেলহাসার মালিক মাজেদ আহমেদ সাইফ খোজ নিয়ে জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির নাম CIB তে লিপিবদ্ধ আছে। তবে বেলহাসার নামে ব্যাংক ঋনের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বা কোনো প্রকার স্বাক্ষরও করেননি। স্বাক্ষর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ওবায়দুল করিম প্রতারণা করেছেন বলে দাবি করেন, বেলহাসার মালিক মাজেদ আহমেদ সাইফ। 

বৈষম্যবিরোধী সরকার আসার পর বেলহাসা তার ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য ওবায়দুল করিমের উপরোক্ত জালিয়াতি উল্লেখ করে হাই কোর্ট বিভাগে ১১১৮/২০২৪ নং মামলাটি দায়ের করেন। আদালত (বিচারপতি সোহেল আহমেদের বেঞ্চ) মামলাটি গ্রহণ করেন এবং সিটি সেন্টার বিল্ডিং এর ফ্লোর স্পেস বিক্রি করার উপর ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেন। কিন্তু হঠাৎ করে বেঞ্চ পরিবর্তন হয়ে যাওয়াতে নতুন বেঞ্চে ওবায়দুল করিমের সে বিতর্কিত আইনজীবী আহসানুল করিম তার পক্ষে শুনানী করতে আসায় বাদীপক্ষের মনে ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যপারে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। 

ACCOM ইঞ্জিনিয়ারিং দখল:  

২০০২ সালে ওবায়দুল করিম (ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিনিধি) এবং কে.এম. মুজিবুল হক (শাহ গ্রুপের প্রতিনিধি) যৌথভাবে অ্যাকোম ইঞ্জিনিয়ারিং কোং লিমিটেড গঠন করেন। কোম্পানী গঠনের সময় অ্যাকোম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শেয়ার অংশিদারের মধ্যে ওবায়দুল করিম ৫০%, মুজিবুল হক ও তার স্ত্রী ৪০% এবং রবিউল ইসলাম ১০%।  

জালিয়াতি: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সমঝোতার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর ওবায়দুল করিম রং বদল করেন। বিএনপি’র অতি ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত ওবায়দুল করিম রাতারাতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন। শেয়ার হোল্ডারদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়া শুরু করেন। ওবায়দুল করিমের জালিয়াতি প্রক্রিয়ায় শুরু হলে অ্যাকোম-এর শেয়ার 
হোল্ডার মালিকানায় থাকা মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। তাদের সরিয়ে সব শেয়ার নিজের কব্জায় নিয়ে কোম্পানীর পুরো মালিকা হওয়ার অপচেষ্টা চালান। এতে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণাই শুধু নয়, তিনি সরকারি আনুকূল্য নিয়ে রাষ্টীয় বাহিনী ব্যবহার শুরু করেন মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। 

এক পর্যায়ে আদালতকে প্রভাবিত করে মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীর শেয়ার পুরোটা আত্মসাতের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেন।  

মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও হয়রানি: 

অ্যাকোমনের পুরো মালিকানা নিজের কব্জায় নিতে মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীর শেয়ার দখলের প্রক্রিয়া শুরু করার সময় ওবায়দুল করিম তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ  প্রকাশ করেন। উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দেয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ আনা হয় মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে। এছাড়া, সন্ত্রাস ও অন্যান্য অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হয় তাকে।  পত্রিকাগুলোতে প্রতিবাদ প্রকাশ করার চেষ্টা করেন মুজিবুল হক। তিনি জানান পত্রিকার সম্পাদক ও সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হলে, গোয়েন্দা সংস্থার চাপের কথা উল্লেখ করে প্রতিবাদ প্রকাশ না করার নির্দেশনার কথা জানানো হয়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন পরিচালক এ ঘটনার সাথে জড়িত এবং ওবায়দুল করিমের পক্ষে সার্বক্ষণিক তদারকিতে ছিলেন। মুজিবুল হক তখন জেলজুলুম ও অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে নিরূপায় হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।  প্রায় দুই বছর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। 

ওবায়দুল করিম অ্যাকোম ইঞ্জিনিয়ারিং এ মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীর ৪০% শেয়ার ৭ বছর পর ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করেন।

মুজিবুল হকের স্ত্রী কাজী কামরুন্নাহার জেবা হক এ প্রেক্ষিতে হাই কোর্টে ১৭১/২০১০ নং মামলা দায়ের করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানীকালে মাননীয় বিচারক এম.আর. হাসান অন্য বেঞ্চে ট্রান্সফার হয়ে যান। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার বাদীপক্ষের বক্তব্য না শুনেই একতরফাভাবে ওবায়দুল করিমের পক্ষে রায় দিয়ে দেন।

বাদীপক্ষ আপীল বিভাগে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন। আপীল বিভাগ শুনানী শেষে হাই কোর্টের রায় বাতিল করে হাই কোর্ট বেঞ্চের বিচারপতি আব্দুর রহমানের কোর্টে ৬ মাসের মধ্যে বিচারটি নিষ্পত্তি করার জন্য ২০১৩ সালে আদেশ দেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে গত ১০ বছরেও মামলাটির শুনানী শুরু সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে আব্দুর রহমান সাহেব অবসরে চলে যান। 

জনাব মুজিবুল হকের স্ত্রী উক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুডিশিয়া কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

একই বিচারপতি ও আইনজীবীর সহায়তায় ফ্লাইওভার কোম্পানিতে মুজিবুল হকের স্ত্রীর শেয়ার কব্জায় নিতে আইন ও আদালতকে প্রভাবিত করা: 

মুজিবুল হক ও তার স্ত্রীর শেয়ার নিজের কব্জায় নিয়ে কোম্পানী থেকে তাদেরকে উধাও করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। এজন্য জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার পাশাপাশি অনুগত আদালতকেও ব্যবহারের অপচেষ্টা চালিয়েছেন। উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান ফ্লাইওভার প্রকল্পে বেলহাসা-অ্যাকোম জেভি অ্যান্ড এসোসিয়েট লিমিটেড কোম্পানীতে মুজিবুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহারের ১ লাখ ১৩ হাজার শেয়ার ছিলো। ২০১১ সাল পর্যন্ত এজিএম এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানীতে শেয়ার হোল্ডার হিসাবে তার নামও ছিলো। অথচ, তাকে কোন রকমের বিবাদী না করেই আদালতে ৩১৮/২০১০ নং মামলা দায়ের করেন ওবায়দুল করিম। মামলায় দাবী করা হয়, মুজিবুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহারের শেয়ার গুলো যেন বাতিল করা হয়। কামরুন নাহারকে বিবাদী না করেই মামলায় দাবি করা হয়, ২০০৬-২০১১ সময়ে অনুষ্ঠিত ১ম -৬ষ্ঠ এজিএম ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর দলিলে কামরুন নাহারের নামে পেইডআপ শেয়ার ভুলে উঠেছে।  
আদালতে ওবায়দুল করিমের আবেদনে হচ্ছে ৫/৬ বছরের এজিএম, অডিট রিপোর্ট, সিডিউল ১০-এ উল্লেখিত কামরুন নাহারের শেয়ারগুলো যেনো বাতিল করা হয়।  

অনুগত আদালত ২০১২ সালের ২ জুলাই, আবেদন মঞ্জুর করে নতুন করে এজিএম করার অুনমতি দেন।  
আশ্চযের্র বিষয় কামরুন নাহার হকের শেয়ার বাতিলের আবেদনে আদালত তার বক্তব্য শোনার প্রয়োজনই মনে করেনি। একরতফা শুনেই এ আদেশ দেন আদালত।  পরবর্তীতে একতরফা শুনানীর ভিত্তিতেই হাইকোর্ট বিভাগের একই বিচারক এম আর হাসান কামরুন্নাহারের শেয়ার বাতিল করে রায় দেন।

অন্যন্য মামলা গুলোতেও ওবায়দুল করিম ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব কাজে লাগায় ওবায়দুল করিম।  এমন কি প্রতিপক্ষের আইনজীবীদের মামলা পরিচালনা থেকে দূরে রাখতে নানাভাবে হুমকি দেন।