Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সংগীত কুমার, সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:০১, ১ এপ্রিল ২০২৫

শৈশবের ঈদ বনাম বর্তমানের ঈদ: বদলে যাওয়া সময় ও অনুভূতি 

শৈশবের ঈদ বনাম বর্তমানের ঈদ: বদলে যাওয়া সময় ও অনুভূতি 
ছবি: সবার দেশ

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটানো দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত ও স্মৃতি। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঈদ উদযাপনের ধরনেও এসেছে নানা ভিন্নতা। এক সময় ঈদ মানে ছিলো চিরচেনা কিছু অনুভূতি—‘চাঁদ দেখার অপেক্ষা, নতুন পোশাকের উন্মাদনা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আনন্দ’। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষ, নগরায়ণ ও ব্যস্ত জীবনের কারণে এখন ঈদের সে আবহ অনেকটাই বদলে গেছে।


শৈশবের ঈদ: স্মৃতির ঝাঁপি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার ইমরান রাজু বলেন, শৈশবের ঈদ কাটত গ্রামে, এক অন্যরকম আনন্দে। ঈদের আগের রাতেই বাড়ি উৎসবের আমেজে ভরে যেত। চাচা-চাচি, ভাই-বোন সবাই মিলে ঈদের প্রস্তুতি নিতাম। সকালে উঠে সবাই নামাজের জন্য প্রস্তুত হতো, যেন কে আগে নামাজে যেতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলতো! ঈদগাহে যাওয়ার পর নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, মেলায় খেলনা কেনা, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া ছিল অন্যতম আকর্ষণ। সবাই মিলে একসঙ্গে টিভিতে নতুন নাটক দেখা, খাবার খাওয়া, হাসি-ঠাট্টায় সময় কাটানো–এসবই ছিল ঈদের আসল আনন্দ। কিন্তু এখন ব্যস্ততা এত বেড়েছে যে আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎও কমে গেছে। ঈদের আনন্দ এখন মূলত মোবাইল স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ। তবে আমরা চাইলে সেই পুরোনো আবহ কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারি।

বর্তমানের ঈদ: বদলে যাওয়া সময়, অনুভূতির পরিবর্তন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মোশারফ মুসা বলেন, শৈশবের ঈদের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রাণবন্ত। ঈদের আগে বাবার কাছ থেকে নতুন পোশাক পাওয়ার অপেক্ষা, চাঁদ দেখার উচ্ছ্বাস, ঈদের দিন সকালবেলা নামাজের জন্য প্রস্তুতি–এসব ছিলো এক অবর্ণনীয় আনন্দ। এখন সে সময়টা শুধুই স্মৃতি। এখন মনে হয় ঈদ যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। মোবাইল ফোনে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আগে ঈদ মানে ছিলো এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়ানো, আত্মীয়দের বাসায় গিয়ে সালামি নেয়া। এখন প্রযুক্তির কারণে সে আবেগ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। তবুও, সময় যতই বদলাক, ঈদের মূল অনুভূতি যেন হারিয়ে না যায়।

পরিবর্তন, কিন্তু আবেগ এখনো অমলিন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া ইয়াসমিন তিশা বলেন, একসময় ঈদের আগের রাত কাটত নতুন জামার অপেক্ষায়, চাঁদ দেখার আনন্দে। ঈদের দিন সকালেই বাবা-মায়ের হাত ধরে ঈদগাহে যেতাম, নামাজ শেষে কোলাকুলি করতাম, সালামি সংগ্রহ করতাম। এখন ঈদ এসেছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। নতুন জামা কেনাকাটা হচ্ছে অনলাইনে, শুভেচ্ছা পাঠানো হচ্ছে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে। আগে আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়ানোর যে উৎসাহ ছিলো, তা এখন কমে গেছে। অনেকেই নিজের ঘরে বসে টিভি দেখে, ভিডিও গেম খেলে সময় কাটায়। ঈদের খাবারও এখন অনেকটাই রেডিমেড, আগে যেখানে মা-খালারা একসঙ্গে রান্নার আয়োজন করতেন, সেখানে এখন হোম ডেলিভারির চল বেড়েছে। তবুও, ঈদ আসলে মিলেমিশে আনন্দ করার উৎসব। চাইলে পুরোনো আবেগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

নগরজীবনের ব্যস্ততা বনাম শৈশবের সারল্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন আরমান বলেন, শৈশবের ঈদের সে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, সারা মহল্লা জুড়ে ছুটোছুটি, নতুন পোশাকের আনন্দ, বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়ার অপেক্ষা– এসবই এখন মনে হয় এক সোনালি অতীত।আগে ঈদের আগের দিন রাতভর বাড়িতে মিষ্টি তৈরির প্রস্তুতি চলত, মা-খালারা একসঙ্গে রান্নার আয়োজন করতেন, আমরা ছোটরা বারবার উঁকি দিতাম কখন খাবার প্রস্তুত হবে। এখন প্রযুক্তির কারণে অনেক কিছু সহজ হয়েছে, কিন্তু সে ঘরোয়া পরিবেশের উষ্ণতা যেন কমে গেছে। ঈদের দিনে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে খোলা মাঠে ছুটোছুটি করা এখন কেবল স্মৃতির পাতায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, ঈদের আনন্দ এখনো আগের মতোই হতে পারে, যদি আমরা ইচ্ছে করে সে মিলেমিশে থাকার সংস্কৃতি ধরে রাখি।

বদলে যাওয়া সময়, বদলে যাওয়া ঈদ, কিন্তু চেতনা অটুট

সময় বদলেছে, ঈদের উদযাপনও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন ঈদের আনন্দের বড় অংশই প্রযুক্তিনির্ভর, তবে এর আবেগ-উত্তেজনা হারিয়ে যায়নি। ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য মিলেমিশে থাকার মধ্যে, সে হারানো অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার একসঙ্গে সময় কাটানোর প্রচেষ্টা। ঈদ মানেই ভালোবাসা ভাগ করে নেয়া, শৈশবের উচ্ছ্বাস মনে রাখা এবং পরস্পরকে আরও কাছাকাছি আনার সুযোগ।

যে ঈদ একসময় একসঙ্গে কাটানোর আনন্দে মুখর ছিলো, তা যেন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতায় হারিয়ে না যায়। বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গেও আমরা চাইলে ঈদের সে সারল্য ও প্রাণবন্ত অনুভূতি ধরে রাখতে পারি। ঈদ শুধু একটি দিন নয়, এটি অনুভূতির উৎসব।

সবার দেশ/কেএম