Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ৭ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৭:৪৯, ৭ এপ্রিল ২০২৫

সীমান্তে শত কোটির করিডোর ইন্ডাস্ট্রি

‘র’-আওয়ামী পলাতক নেতাদের ভয়ঙ্কর বাণিজ্য

‘র’-আওয়ামী পলাতক নেতাদের ভয়ঙ্কর বাণিজ্য
ছবি: সবার দেশ

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক ভয়াবহ অবৈধ রাজনৈতিক করিডোর, যেখানে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের মধ্যে চলে আসা-যাওয়ার এক অন্ধকার চুক্তি। শুধু গত সাত মাসেই সহস্রাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ দালালচক্র ভারত অভিমুখে অবৈধভাবে পার হয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের কেন্দ্রে সীমান্তের ৭টি রুট

বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেহেরপুর, পঞ্চগড় ও বেনাপোল সীমান্ত ব্যবহার করে এ যাতায়াত পরিচালিত হচ্ছে। ভারতের BSF-এর নরম অবস্থান এবং দেশীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা পুরো চক্রটিকে কার্যত বৈধতার আবরণ দিয়ে দিয়েছে।

‘র’ কীভাবে দিকনির্দেশনা দেয়?

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ‘র’ মূলত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বা পরবর্তী বিশৃঙ্খলার ‘অ্যাসেট’ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এসব পলাতক নেতাদের ডেটা যাচাই ও ব্যবহারযোগ্যতা পর্যালোচনা করে। এরপর চিহ্নিত সীমান্ত পোস্ট দিয়ে ‘সেভ প্যাসেজ’ নিশ্চিত করে।

‘বাংলাদেশে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, ভারত সেখানে একটি ব্যাকআপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের স্টেজ প্রস্তুত করছে — এবং আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ ও বিতাড়িত নেতাদের সে স্ক্রিপ্টে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ – একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এমনটিই মনে করছেন।

ঘুষ, নিরাপত্তা ও পাচার: গড়ে উঠেছে শত কোটির ব্যবসা

প্রতিটি পলাতক নেতার জন্য ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় বলে জানা গেছে। এসব টাকার বড় অংশ পায় স্থানীয় চোরাচালান সিন্ডিকেট, সীমান্ত চৌকি ও বিএসএফ কর্মকর্তারা। একাধিক স্থানীয় প্রশাসনের অফিসার স্বীকার করে বলেছেন, আমাদের কিছু করার নেই, ওপর থেকে বলে দেয়া আছে—ওদের দেখেও দেখো না।

এতে সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে এক প্যারালাল অর্থনীতি যেখানে রাজনীতিক, দালাল, ভারতীয় গোয়েন্দা, বিএসএফ, এমনকি কিছু এনজিও এবং মিডিয়া হাউজও সংশ্লিষ্ট।

কেন পলাতক হচ্ছেন আওয়ামী নেতারা?

  • দুর্নীতির মামলা ও গণ-ধোলাই থেকে বাঁচতে
  • আসন্ন রাজনৈতিক বদলের পূর্বাভাস পেয়ে
  • নতুন রাজনৈতিক লবিং ও তত্ত্বাবধায়ক চক্রান্তে অংশ নিতে
  • 'র'-এর সহায়তায় বিকল্প রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আসার প্রস্তুতি নিতে

জাতীয় নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের হুমকি

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সীমান্ত করিডোরের মাধ্যমে রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, গোয়েন্দা কাঠামো এবং সামরিক কৌশল সরাসরি বিদেশি শক্তির নজরদারিতে চলে যাচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দলের কিছু সদস্য ব্যক্তিগত রক্ষার জন্য পুরো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে বন্ধক দিয়েছে। এটা শুধু বিশ্বাসঘাতকতা না—এটা সুস্থ রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর আঘাত– লন্ডন থেকে এক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমন মন্তব্য করেন।

সরকারি প্রতিক্রিয়া কোথায়?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সীমান্ত গার্ড বাংলাদেশ (BGB) এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (NSI) এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (DGFI) বিষয়টি জানার পরও সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, এ নিষ্ক্রিয়তার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও বিদেশমুখী নির্ভরশীলতা।

জনগণের জিজ্ঞাসা: কাদের জন্য রাষ্ট্র চলছে?

দেশ যখন অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক অসন্তোষে ভুগছে, তখন সীমান্ত দিয়ে পলাতক নেতাদের কোটি টাকার নিরাপদ যাতায়াত প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে। যদি এখনই এ সীমান্ত করিডোর এবং রাজনৈতিক পাচার বন্ধ করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেবল অভ্যন্তরীণ সংকটে নয়—একটি আন্তর্জাতিক মেরুকরণের পুতুলে রূপ নিতে পারে। রাষ্ট্র যদি দলকে ছাপিয়ে না যেতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা শুধু কাগজে থাকবে।

সবার দেশ/কেএম