আশিক-খলিল ড. ইউনূসের টিমে মেসি-রোনালদো

বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছেন বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ হারুন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।
সম্প্রতি দেশের উন্নয়ন, বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালুর বিভিন্ন উদ্যোগে সরাসরি সম্পৃক্ত এ দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘নীতিনির্ধারণী স্তরের কৌশলী খেলোয়াড়’ বলেও অভিহিত করছেন নীতিনির্ধারকরা।
স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরুর মাইলফলক
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ জানান, এ উদ্যোগ বাংলাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আমরা স্টারলিংককে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছি এবং ২৯ মার্চ বিডার বিনিয়োগ নিবন্ধন প্রদান করেছি। বিটিআরসি ইতোমধ্যে লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে।
১০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি
বিডা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০০ কোটি ডলার আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের নদী ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা ও যোগাযোগ খাতে বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে বিডা ও বেজা। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান পুর্বাচলে উন্নতমানের হাসপাতাল তৈরিতে দুই হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে।
নতুন কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অঞ্চল
বর্তমানে বিডা ও বেজা মিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০টি বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে কাজ করছে। এসব অঞ্চলে কমপক্ষে এক লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমরা টেকসই শিল্পায়ন এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গঠনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য সবধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, মিয়ানমার এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মতি প্রকাশ করেছে। ড. ইউনূসের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব এবং ড. খলিলুর রহমানের যোগ্য সাপোর্টের কারণেই গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শোয়ে পথম ধাপে এক লক্ষ আশি হাজার রোহিঙ্গা শিগগির ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিগত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রক্তাক্ত সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেও, মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছিলো।
নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি ঢাকার
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন এ চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেন। এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্রুতগতির ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর সম্ভাবনা, আন্তর্জাতিক মানের ৪টি বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশকে আঞ্চলিক লজিস্টিকস হাবে রূপান্তর—এ সবই চলছে বিডা ও বেজার পরিকল্পনায়।
বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক মাসের উদ্যোগগুলো যদি ধারাবাহিকতা পায়, তবে বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা: স্টারলিংক, ইকোনমিক জোন, ১ লাখ কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো বিপ্লব
তাদের লক্ষ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আসা এ দেশে। যা দেশের ৩ কোটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিবে। কম হলেও ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনায় স্টারলিংক, ইকোনমিক জোন, লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো বিপ্লব ঘটবে নিঃসন্দেহে।
সবার দেশ/কেএম