Advertisement

সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:০১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৩:০২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বলী

‘বাদল সিং’ হয়ে কত আর জেল খাটবেন বাদল ফরাজী?

‘বাদল সিং’ হয়ে কত আর জেল খাটবেন বাদল ফরাজী?
ছবি: সবার দেশ

ভারতীয় নাগরিক ‘বাদল সিং’ ছিলেন হত্যা মামলার আসামি। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সেখানকার আদালত যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয় বাদল সিংকে। কিন্তু নামের আংশিক মিল থাকায় গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশী নাগরিক বাদল ফরাজীকে। 

কিশোর বাদল ফরাজী ভারত গিয়েছিলেন আগ্রার তাজমহল দেখতে। হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে বহুবছর তাকে কারাগারে আটক রাখে ভারত সরকার। পরে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় বাদল ফরাজীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বাংলাদেশেও তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। 

২০০৮ সালের আলোচিত এ ঘটনার ভারতের কাছে ১ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন ১৬ বছর ধরে কারাগারে বন্দী  ভুক্তভোগী বাদল ফরাজীর মা। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো: মাহমুদুল হাসান ও মহিউদ্দিন জুয়েল গতকাল (২৯ ডিসেম্বর) তার পক্ষে এ নোটিশ দেন। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইন্সপেক্টর  জেনারেল অব  প্রিজন, সুপারিনটেনডেন্ট ও কাশিমপুর  কেন্দ্রীয় কারাগারের  জেলারকে বিবাদী করা হয়েছে। এছাড়া, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যেহেতু মামলার বিষয়বস্তুর সঙ্গে ভারত জড়িত; তাই ভারতীয় সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারকে  মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আশু পদক্ষেপ না নিলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে নোটিশে। 

নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজী বাংলাদেশের  বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে ভারত ভ্রমণে যান। ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করেন। এ প্রেক্ষিতে  ২০০৮ সালের ৯ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশন তাকে এক মাস মেয়াদী ভিসা ইস্যু করে। পরে  বাদল ফরাজী  বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতের হরিদাসপুর (বাংলাদেশের  বেনাপোল স্থলবন্দর) দিয়ে ভারতে যান। একই বছরের ২১ জুলাই ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাদল ফরাজীকে  গ্রেফতার করে।  তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও খুনের মামলা দায়ের করে। 

২০০৮ সলের ৫ মার্চ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংঘটিত একটি ডাকাতি ও খুনের মামলায় আসামি ‘বাদল সিং’ নামে এক ভারতীয় নাগরিকের জায়গায় বাংলাদেশী নাগরিক ‘বাদল ফরাজীকে’ গ্রেফতার দেখায় তারা। যদিও ‘বাদল সিং’ ও ‘বাদল ফরাজী’ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি। দু’জন দুইটি ভিন্ন দেশের নাগরিক। এ ছাড়া বাদল সিং যখন ভারতে ডাকাতি ও খুন সংঘটিত করেন তখন বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজীর অবস্থান ছিলো বাংলাদেশে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজীকে ২০০৮ সালের ২১ জুলাই  গ্রেফতার করে। পরে তার ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে  ওই ডাকাতি ও  হত্যা মামলায় তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন বাদল ফরাজীর ব্যাপারে ভারত সরকারকে সঠিক তথ্য প্রদানে অবহেলা করে। এছাড়া নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ভারতের প্রতি নতজানু বাংলাদেশ হাইকমিশন বাদল ফরাজীর ন্যায়বিচার ও মুক্তির জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলশ্রুতিতে ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট ভারতের আদালত বাংলাদেশী নাগরিক বাদল ফরাজীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়।  পরে ভারত সরকার বাদল ফরাজীর নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই ভারত-বাংলাদেশ বন্দী প্রত্যর্পণ  চুক্তি অনুযায়ী বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশে প্রত্যার্পণ করেন। 

উল্লেখ করার বিষয় এই যে, ভারতের দিল্লির জেলকোড অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত কোনো বন্দী ১৪ বছর কারাভোগ করলে তাকে ‘ সেন্টেন্স রিভিউ  বার্ড’র সিদ্ধান্তে মুক্তি  দেয়া হয়। এ হিসেবে বাদল ফরাজী এতদিনে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের কথা। যেহেতু প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশের কারাগারে রাখা হয়েছে তাই বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকারকে ওই ‘সেন্টেন্স রিভিউ  বোর্ডে’র কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের চরম অবহেলার কারণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে ১৬ বছরেরও অধিক সময় কারাভোগ করার পরও বাদল ফরাজীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। 

বাদল ফরাজীকে মুক্তিদানের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে ১  কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। 

সবার দেশ/এওয়াই