Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৬ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১৪:৩৯, ২৬ মার্চ ২০২৫

বিশ্বকাপে খেলার টিকেট নিশ্চিত মেসিদের

ব্রাজিলকে খেলে দিলো আর্জেন্টিনা

ব্রাজিলকে খেলে দিলো আর্জেন্টিনা
ছবি: সংগৃহীত

২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। এ জয়ের ফলে আর্জেন্টিনা পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে খেলার টিকেট নিশ্চিত করেছে। বুয়েনস আইরেসের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ব্রাজিলকে একতরফা করে ফেলেছে।

অবশ্য, মাঠে নামার আগেই সুখবরটা পেয়ে গিয়েছিলো আর্জেন্টিনা। নিজেদের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে পেয়ে যায় বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে খেলার টিকেট। তবু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ব্রাজিলের সঙ্গে ‘নির্মম’ আচরণটাই করল লিওনেল মেসি, পাওলো দিবালা, লাওতারো মার্তিনেসদের মতো তারকাদের ছাড়াই খেলতে নামা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

এদিনই আগের ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে বলিভিয়া গোলশূন্য ড্র করলে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ ছয়ে জায়গা পাকা হয়ে যায় আর্জেন্টিনার। পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপে খেলার টিকেট পেয়ে যায় তারা।

ম্যাচের প্রথম থেকেই আর্জেন্টিনা ব্রাজিলকে চাপে ফেলতে শুরু করে। কিক অফের প্রথম দুই মিনিটে ব্রাজিল বল স্পর্শই করতে পারেনি। এর পরেই, মাত্র ৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মধ্যে আর্জেন্টিনার তরুণ ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেস প্রথম গোলটি করেন, যা ছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে তৃতীয় দ্রুততম গোল। এরপর ৮ মিনিটেই আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার এনসো ফের্নান্দেস দ্বিতীয় গোলটি করে আর্জেন্টিনাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন।

এত দ্রুত দুটি গোল হজম করার পর, ব্রাজিলের রক্ষণে একটা অস্বস্তি দেখা দেয়, যা তাদের ম্যাচে ফিরে আসতে দুর্বল করে দেয়। এ দুটি গোলই ছিল ব্রাজিলের জন্য নতুন এক রেকর্ড, কারণ এর আগে কখনো তারা এমন দ্রুত দুটি গোল খায়নি।

ব্রাজিল তাদের প্রথম গোলটি পায় ম্যাচের ২৬তম মিনিটে। আর্জেন্টিনার ক্রিস্তিয়ান রোমেরো একটি ভুল করে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ব্রাজিলের মাথিয়াস কুনিয়া সুযোগ নিয়ে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে গোল করেন। এটি ছিল কুনিয়ার জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোল। একই সঙ্গে, এটি ২০১৯ কোপা আমেরিকা সেমিফাইনালের পর ব্রাজিলের জন্য আর্জেন্টিনার জালে প্রথম গোল ছিল।

প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর্জেন্টিনা আবারও ব্রাজিলকে চেপে ধরে এবং স্কোরলাইন ৩-১ করে ফেলে। এনসো ফের্নান্দেসের দারুণ ক্রস থেকে আলেক্সিস মাক আলিস্তের দুর্দান্ত ভলি শটে গোল করেন। এতে আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধেই তিনটি গোল দিয়ে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এক নতুন ইতিহাস রচনা করে, কারণ এর আগে কখনও ব্রাজিল প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তিন গোল খায়নি।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল কোচ তিতি তিনটি পরিবর্তন আনেন। মুরিলো, জোয়েলিনতন এবং রদ্রিগোকে তুলে নিয়ে ওরচিজ, জোয়াও গোমেজ এবং এন্দ্রিককে মাঠে নামান। তবে এ পরিবর্তনগুলোও ব্রাজিলের পারফরম্যান্সে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। আর্জেন্টিনা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে এবং ৬৮তম মিনিটে গোল করেন আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড জুলিয়ানো সিমেওনে। সিমেওনেকে মাঠে নামানোর মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই তিনি গোল করে আর্জেন্টিনার পক্ষে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন।

ব্রাজিলের পক্ষে রাফিনিয়া কয়েকটি চেষ্টা করলেও, আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ তাতে কাজ করতে দেয়নি। তিনি একটি ফ্রি-কিকে মানব দেয়ালের ওপর বল মারেন এবং এরপর পোস্টেও মেরে ব্যর্থ হন। ম্যাচ শেষে ব্রাজিলের খেলায় কোনো বড় ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের জয় খরা বেড়ে যায়।

এদিনের জয়ে আর্জেন্টিনার ১৪ ম্যাচে ১০ জয় ও ১ ড্রয়ে ৩১ পয়েন্ট হয়েছে, যা তাদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। এ জয়ের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করেছে যে তারা ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশ নেবে। একই দিনে, উরুগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করার ফলে বলিভিয়া আরেকটি পয়েন্ট সংগ্রহ করে এবং আর্জেন্টিনার পক্ষে জয় নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

ব্রাজিলের জন্য এটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা আগের পাঁচ ম্যাচে একের পর এক হারলো। এ ম্যাচের পর তাদের অবস্থান পয়েন্ট টেবিলে মাঝখানে থেকে গেছে, যেখানে তারা ২১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এ হার তাদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আরও কিছুটা পিছিয়ে দিলো।

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের টিকেট পেয়ে যাওয়ার পরও তাদের মনোযোগ থাকবে নিজেদের প্রস্তুতি এবং অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ব্রাজিলের জন্যও এ হারের পর নিজেদের খেলার মান বাড়ানোর জন্য তৎপর হতে হবে।

এটি ছিল লিওনেল স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনার একটি শক্তিশালী প্রদর্শনী এবং এভাবে তারা বিশ্বকাপে যোগ দেয়ার পথে আরও একটি বড় ধাপ এগিয়ে গেল।

সবার দেশ/এমকেজে