এক আতঙ্কিত প্রস্থানের গল্প
জীবনের ভয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন হাথুরুসিংহে

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, যিনি দুই দফায় ছয় বছর দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বহু সাফল্য এনেছেন, তাকে জীবন বাঁচাতে আতঙ্কের মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ তাকে বরখাস্ত করেন। এরপর তিনি যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন, সে অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’-এর সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করেছেন, যা প্রকাশিত হয়েছে ক্রিকবাজে।
আতঙ্কের শুরু: বিসিবি সিইওর সতর্কতা
হাথুরুসিংহে জানান, বরখাস্তের পর বিসিবি সিইও তাকে গোপনে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সিইও আমাকে বললেন, ‘বোর্ডের কাউকে না জানিয়ে চলে যান। আপনার টিকিট আছে?’ এটা আমার জন্য সতর্কতার সংকেত ছিলো। তখনই আমি ভয় পেয়ে যাই। এ কথোপকথন তাকে নিরাপত্তাহীনতায় ডুবিয়ে দেয়। সাধারণত তিনি বাইরে বের হলে ড্রাইভার ও গানম্যান সঙ্গে থাকতেন, কিন্তু সেদিন সিইও জানতে চান, ‘আজ গানম্যান আছে?’ হাথুরু জানান, শুধু ড্রাইভার ছিলো। এ প্রশ্ন তার মনে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।
ব্যাংকে ভীতিকর মুহূর্ত
দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি হিসেবে হাথুরু ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। সেখানে টিভিতে ব্রেকিং নিউজে তার বরখাস্তের খবর প্রচার হচ্ছিলো: ‘চন্ডিকাকে একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে।’ এ মিথ্যা অভিযোগ তাকে আরও বিপাকে ফেলে। ব্যাংক ম্যানেজার তাকে সতর্ক করে বলেন, কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। রাস্তায় মানুষ আপনাকে দেখলে নিরাপদ হবে না। এ ঘটনা তার ভয়কে আরও তীব্র করে।
বিমানবন্দরে গোপন প্রস্থান
বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সময় হাথুরু নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমি টুপি আর হুডি পরে ছিলাম। নিজেকে অনিরাপদ লাগছিলো। তখন বিমানবন্দরে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছিলো, যা তার মনে উদ্বেগ জাগায়। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, দেশ ছাড়ার চেষ্টায় তাকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, একজন সাবেক মন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে পালানোর চেষ্টাকালে রানওয়ে থেকে বিমান থামিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ ঘটনা তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
অবশেষে, এক বন্ধুর সহায়তায় তিনি মধ্যরাতের সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ওঠেন। তবে, প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনে যাচাইয়ের সময়ও তিনি আতঙ্কে ছিলেন। সেখানে বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা তাকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন। আপনি আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এ কথা হাথুরুকে মিশ্র অনুভূতির মধ্যে ফেলে—একদিকে জীবনের ভয়, অন্যদিকে তার অবদানের স্বীকৃতি।
প্রেক্ষাপট ও প্রভাব
হাথুরুসিংহে ২০১৪-২০১৭ এবং ২০২৩-২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে কোচিং করান। তার অধীনে দল ওয়ানডে ও টেস্টে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। তবে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিসিবির নেতৃত্বে পরিবর্তন তার ক্যারিয়ারে ছায়া ফেলে। নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদের অধীনে তাকে বরখাস্ত করা হয়, এবং মিথ্যা অভিযোগে জনরোষের ঝুঁকিতে পড়েন।
এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব শুধু রাজনীতি নয়, ক্রীড়াঙ্গনেও কীভাবে পড়তে পারে, তার একটি উদাহরণ। হাথুরুসিংহের অভিজ্ঞতা দেশের তৎকালীন পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং বিদেশি পেশাদারদের উপর এর প্রভাব তুলে ধরে। সূত্র: কোড স্পোর্টস, ক্রিকবাজ
সবার দেশ/কেএম