স্টেট ডিপার্টমেন্টের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান উমামার
অনেকেই তার সিদ্ধান্তকে নৈতিক ও সাহসী বলে প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ একে কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বলে মনে করছেন। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উমামার এ অবস্থান বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নারী শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক ‘মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলেও, এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনের অন্যতম সদস্য উমামা ফাতেমা।
তিনি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ পুরস্কার গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শনিবার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি তা উল্লেখ করেন।
পুরস্কার ঘোষণা ও আনুষ্ঠানিকতা
শুক্রবার (২৮ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ বছরের বিজয়ী হিসেবে ‘উইমেন স্টুডেন্ট প্রোটেস্ট লিডারস অব বাংলাদেশ’ মনোনীত হওয়ার কথা জানানো হয়। আগামী ১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এ পুরস্কার প্রদান করবেন।
উমামা ফাতেমার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান
উমামা ফাতেমা শনিবার রাতে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে জানান, তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করছেন না। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক 'International Women of Courage (IWOC) Awards' 2025 এর পক্ষ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নারী আন্দোলনকারীদের বিশেষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এ অ্যাওয়ার্ডের অধীনে 'Madeleine Albright Honorary Group Award' হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থানের সব নারীদের এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটের লেখাটি নিচে উদ্ধৃত করছি:
Madeleine Albright Honorary Group Award
‘Women Student Protest Leaders of Bangladesh’
A valiant group of women were key drivers in the student protest movement against violent repression in Bangladesh in July-August 2024. They demonstrated extraordinary bravery, including standing between security forces and male protestors in spite of threats and violence. When male counterparts were arrested, these women found innovative ways to continue communication and lead the protests, defying censorship efforts, even during the complete shutdown of the internet. The bravery and selflessness of these women amid uncertainty was the very definition of courage.
আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৫ যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও এবং ফার্স্ট লেডি মিলানিয়া ট্রাম্প পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন।
নারী আন্দোলনকারীদের কালেক্টিভ স্বীকৃতি আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের নারকীয় হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে এন্ডোর্স করে যাওয়ার জন্য এওয়ার্ডটি ব্যবহৃত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করে পুরস্কারটি ইসরাইলের হামলাকে যে প্রক্রিয়ায় জাস্টিফাই করেছে তা পুরস্কারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের মৌলিক মানবাধিকার (ভূমির অধিকার) থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সম্মান রেখে এ পুরস্কার আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম।’
"From the River, to the Sea
Palestine will be Free’
আরও পড়ুন <<>> জুলাই কন্যারা পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাহসিকতা পুরস্কার’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যে তারা সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং পুরুষ সহযোদ্ধাদের পাশে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যান। আন্দোলন চলাকালে তারা গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন এবং সংগঠিতভাবে আন্দোলন পরিচালনা করেন। এমনকি ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও তারা বিকল্প উপায়ে যোগাযোগ বজায় রেখে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে সাহসী একদল নারী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা দমন-পীড়ন ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুরুষ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে তারা এক অনন্য সাহসিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এই নারীদের নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব ও দৃঢ় মনোবল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রামে বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণার উৎস।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
উমামা ফাতেমার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার সিদ্ধান্তকে নৈতিক ও সাহসী বলে প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ একে কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বলে মনে করছেন। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উমামার এ অবস্থান বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নারী শিক্ষার্থীদের এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু তাদের সংগ্রামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনই নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে নারী নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তবে উমামা ফাতেমার অবস্থান এ বিষয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সবার দেশ/কেএম