Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১৮ মার্চ ২০২৫

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য এক অনন্য আশ্রয়স্থল

টাইম ম্যাগাজিনে আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ

চতুর্ভুজ আকৃতির এ মসজিদের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ। প্রাকৃতিক আলো ও বাতাসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেয়ালজুড়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। ফলে এটির ভেতরে ঠাণ্ডা পরিবেশ বজায় থাকে। এখানে কোনো এসি বা বৈদ্যুতিক পাখা বসানোর প্রয়োজন হয়নি।

টাইম ম্যাগাজিনে আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ
ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো বিশ্বের ১০০টি সেরা স্থাপনার তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের একটি মসজিদ। প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস ২০২৪’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ার দরগার পাড় এলাকায় অবস্থিত জেবুন নেসা মসজিদ।

গত ১৩ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্থপতিরা দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক মসজিদ ডিজাইনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে আসছেন, তবে ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত এ গোলাপি রঙের স্থাপনাটি তার শিল্প পরিবেশের সঙ্গে একটি অনন্য চিত্র তুলে ধরে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য এক অনন্য আশ্রয়স্থল

জেবুন নেসা মসজিদটি আইডিএস গ্রুপের ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থিত। এটি নির্মাণ করেছেন কারখানার মালিক, যার প্রয়াত মায়ের নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদ ৬৫০০ পোশাক শ্রমিকের জন্য একটি প্রশান্তির স্থান হিসেবে কাজ করে, যেখানে তারা নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পান।

স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী

চতুর্ভুজ আকৃতির এ মসজিদের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজ। প্রাকৃতিক আলো ও বাতাসের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেয়ালজুড়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। ফলে এটির ভেতরে স্বাভাবিকভাবেই ঠাণ্ডা পরিবেশ বজায় থাকে, যার ফলে এখানে কোনো এসি বা বৈদ্যুতিক পাখা বসানোর প্রয়োজন হয়নি।

মসজিদের সামনে রয়েছে কাঁচে ঘেরা সরু লেক। এ লেকের পানি বায়ু প্রবাহকে শীতল করে মসজিদের ভেতরে নিয়ে আসে, যা পরিবেশবান্ধব নকশার অনন্য দৃষ্টান্ত।

নারী শ্রমিকদের জন্য এক স্বস্তির স্থান

মসজিদটির সহ-স্থপতি ও স্টুডিও মরফোজেনেসিসের পরিচালক সায়কা ইকবাল মেঘনা বলেন, একজন নারীর নামে মসজিদের নামকরণ থেকেই আমি এমন একটি স্থাপনা নির্মাণের ধারণা পাই, যা পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি সফট শেল্টার (বিকল্প আশ্রয়স্থল) হতে পারে।

নারী মুসল্লিরাও মসজিদের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, গরমের মধ্যেও ফ্যান ছাড়া নামাজ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে, যা একটি অনন্য অভিজ্ঞতা।

ইমামের ভাষ্য

মসজিদের ইমাম হাফেজ মুফতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদিন গার্মেন্টসে কাজের পর বিরতির সময় শ্রমিকরা এখানে এসে নামাজ আদায় করলে তাদের মন প্রফুল্ল থাকে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এত সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলীর স্বীকৃতি

টাইম ম্যাগাজিনের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প ও পরিবেশবান্ধব নকশার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দৃষ্টিনন্দন ও কার্যকরী এ মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থানই নয়, বরং শ্রমিকদের জন্য একটি মানসিক প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠেছে।

এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের গৌরবময় দিককে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে।

সবার দেশ/কেএম

সম্পর্কিত বিষয়: