Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২০ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১৮:৩৪, ২০ মার্চ ২০২৫

আসুন নাগরিক হই

আসুন নাগরিক হই
ছবি: সবার দেশ

জেলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা: রহিম সাহেব আপনি কি জানেন আপনার এলাকাতে ডাকাতি হয়েছে?
অফিসার: না স্যার, ডাকাতি না তো, ছিনতাই হয়েছে।
___আরে ভাই ঐ একই কথা, যা করার দ্রুত করুন। এদিকে এডিশনাল ডিআইজি স্যার আমাকে বারংবার চাপ দিচ্ছেন । কেননা স্যারের বন্ধু মিলিটারি অফিসার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল উনাকে ফোন দিয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাচ্ছেন। 
___স্যার আমরা তথ্য নেয়ার এবং অপরাধীকে গ্রেফতার করার বন্দোবস্ত করছি।
টেবিলের অপর পাশ থেকে আমি শুনলাম আমার বন্ধু এ কথা তার অধঃস্থন কর্মকর্তার সাথে বলছে। 

তাদের কথোপকথন শেষ হবার পরে আমার বন্ধুটি আমাকে উদ্দেশ্য করে
___ আর বলো না, এ হলো আমাদের ডিউটি! খালি ঠেলার ওপর ঠেলা।
আমি বললাম___ ধরে নিচ্ছি সকল প্রকার আইনি পদক্ষেপ নিয়েই তোমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তোমাকে আদেশ করেছেন আসামি ধরার জন্য, আর তুমিও  কাজ এগিয়ে নিচ্ছো, বেশ ভালো। 

কৌতূহল বসত: আমি আমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম আবারও
___আচ্ছা বলতো ঘটনার ভুক্তভোগী ওই বিগ্রেডিয়ার সাহেবের নিকট আত্মীয় না হয়ে যদি একজন সাধারণ মানুষের হতো, তাহলে কি তোমরা এতটা সোচ্চার হতে?

কিছুক্ষণ নিরব থেকে বন্ধু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। 

নীরবতা ভেঙ্গে আমিই বলতে শুরু করলাম,
___শোন, স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছর পর্যন্ত আমরা কেউ নাগরিক হতে পারিনি। আমরা সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যে বলতে পারিনি। আমাদের করের টাকায় যাদের বেতন হয়, তারা সরকারি কর্মচারী, তারা মানে তোমরা আমাদেরকে সম্মান করতে বাধ্য। সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুসারে প্রত্যেক নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে, সে একজন ঠেলাগাড়ি চালক, রিক্সাওয়ালা  অথবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার যাই হোক না কেন। তাহলে আমরা কেন একজন বিগ্রেডিয়ার সাহেবের ঠেলায় এত তৎপর, আর অন্যের বেলায় সাধারণ ভঙ্গিতে চলাফেরা করব, এ কেমন বৈষম্য! এটা সরাসরি অন্যায়। 

আসলে বিগত দশকের পর দশক আমরা এ রকম ভাবেই চলছি । আমাদেরকে কোন রাজনীতিবিদ কখনও শেখাইনি আমাদের অধিকার কি কি? দেশে কি নাগরিকরা শক্তিশালী, নাকি রাজনীতিবিদ অথবা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা? দেশের মূল শক্তি হলো তার জনগণ, এ জনগণ না থাকলে রাষ্ট্র হবে না, রাষ্ট্র না হলে সরকার হবে না, সরকার না হলে কর্মকর্তা কর্মচারী কিছুই থাকবেনা

জেলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা বন্ধু আমার কথাগুলো গিলছে আর কি যেন ভাবছে।
হঠাৎ বলে উঠলো___ তাইতো বন্ধু, তুমি ঠিকই বলেছো। 

নাগরিক হিসেবে আমাদের এক রকমের দায়িত্ব, আর যখন আমরা সরকারি চাকরিতে যাই তখন নাগরিকদের জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি, যদিও একজন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী নিজেও একজন নাগরিক। 

আরও পড়ুন: ভদ্র ব্যবহার সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার

রাগ-বিরাগ, স্বজনপ্রীতি অথবা আত্মীয় বাৎসল্যতা ইত্যাদির উর্ধ্বে উঠে একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার প্রধান কাজ হচ্ছে তার চাকুরী বিধি অনুযায়ী নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যতক্ষণ পর্যন্ত বিধি অনুযায়ী ন্যায় আদেশ দিবেন ততক্ষণ যথাযথভাবে পালন করবেন, আর বিপরীত হলে তা করতে তিনি সম্মত হবেন না। সকল নাগরিক তিনি যত ছোটই হোন অথবা মান মর্যাদায় যত বড়ই হোন না কেন, সকলেই সমান সুবিধা প্রাপ্ত হবেন তার থেকে । কখনও যথাযথ সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হলে নাগরিকরা যদি কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতেন, তাদেরকে সঠিক পথে চালিত করতে বাধ্য করতেন তবেই বলা যেত যে, রাষ্ট্রের জনগণ নাগরিকে রূপান্তরিত হয়েছে।

কিন্তু বিগত সময়ে আমরা তা কখনোই বাস্তবে হতে দেখতে পাইনি। 
আজ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সময় এসেছে রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছেন। এখন আমাদের সবার  উচিত নাগরিক আচরণ পালন করা।  কর্মচারীদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া__ আমাদের সকলের মৌলিক অধিকার সমান, কেউ কারো চেয়ে বড় নয়, ছোটও নয়। সত্যিকারের নাগরিক হলে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা সকলেই সমীহ করবে। আসুন সচেতন হই, সুনাগরিক হই।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: