বিনিয়োগকারী সম্মেলন, ইসরাইলি পণ্য বয়কট এবং দেশ প্রেমিক জনতার ভাবনা

আইজুদ্দিন ভাই কেমন আছেন আপনি?
- অনেক বছর ধরে কষ্টে থাকার পরেও বেশ কয়েক মাস ভালোই কাটাচ্ছিলাম, কিন্তু এখন আবার কষ্টে আছি ভাই । আবারো বলতে পারেন ‘কষ্টে আছি আইজুদ্দিন’।
কেনো কেনো হঠাৎ আবার কি হলো?
- আর বলেন না, গতকাল দেশ-বিদেশের উদ্যোক্তাদের নিয়ে দেশের নাম করা এক হোটেলে সেমিনার হচ্ছিলো। মানবতার শত্রু বর্বর ইসরাইলিদের জুলুমের প্রতিবাদে মুসলিম মনীষীরা তাদের পণ্য বয়কটের আহবান করে। এ সুযোগে একদল সন্ত্রাসী লুটেরা দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের দোকান থেকে মালামাল লুটপাট করে। সেজন্য আমি আবার কষ্টে আছি! কেননা, এরকম অবস্থা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মনে আমাদের দেশের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ও আচ্ছা সে কথা! আপনার সাথে তো আমিও ভাই একই রকম অবস্থায় আছি, আমার এ জাতীয় কাজ একটুও ভালো লাগে না। আপনি কি বলতে পারেন এরকম দুষ্ককর্ম কারা সংগঠিত করেছে?
- ভাই পত্রিকা আর নেটের কল্যাণে কিছু লোককে দেখলাম তারা বিভিন্ন স্থানগুলো ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে। বলতে তো পারবো না এরা আসলে কে বা কারা। তবে আমার মনে হয়, যারাই করেছে তারা মোটেও দেশপ্রেমিক নয়। রাষ্ট্রের কল্যাণ তারা কামনা করে না। আসলে ২৪ এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে একটা গোষ্ঠী, যারা পরাজিত হয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে পলাতক অবস্থায় আছে এবং দেশের বিরুদ্ধে অবিরাম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তারা আর তাদের দোসররা এরকম কাজ করতে পারে।
আমারও তাই মনে হয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও বহু মানুষের মতামত এমনটিই।
দেখুন একটি কথা বলি, আমাদের বর্তমান সরকার দোষীদের বিচার করার জন্য বিভিন্ন রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একটি বিষয় আমাকে অবাক করে দেয়, সত্যিকারের দোষী যারা, যারা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে খুব নাজুক অবস্থায় ফেলেছে এবং এ মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী দেশে পলাতক আছে। বিশেষ করে যারা এখনো নিজের এলাকা বদলিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে বর্তমানে আছে, তাদের প্রতি এত নরম আচরণ সরকারের তরফ থেকে করা হয়েছে বা হচ্ছে, যে কারণে তাদের স্থানীয় দোসররা অনেকেই সাহসী হয়ে উঠেছে এবং এরকম দুষ্কর্মে নিজেদেরকে নিয়োজিত করছে।
আরও পড়ুন <<>> নিজেকে বদলালেই দিগন্ত বদলায়
সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বুলালেই দেখতে পাবেন যে, তারা বিভিন্নভাবে দেশের নাগরিক যারা বর্তমান সরকারের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানায় এবং পলাতক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন কথা লিখে, তখন তারা তার মোকাবেলায় বিভিন্ন রকমের উস্কানি এবং নেতিবাচক কথা লিখে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। মাত্র একদিন আগে শহীদ আবরার এভিনিউতে দলীয় ব্যানারে একটি ঝটিকা মিছিল তারা করেছে। তাদেরকে দমন করতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, তা না হলে এরকম কাজ চলতেই থাকবে।
এছাড়াও সদ্য পলাতক লুটেরা দলের সদস্য যারা বর্তমানে দেশে আছে এবং ফেসবুকে তাদের স্বপক্ষে বিভিন্ন মানুষকে তীর্যকভাবে লেখালেখি করে মিডিয়াকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চাচ্ছেন, তারাও তাদের দেশবিরোধী কাজ পুনরোদ্ধোমে চালিয়ে দেশকে অস্থির করে রাখবে।
আপনার কথা দেখি আমার সাথে একেবারেই মিলে যাচ্ছে। সত্যিই আমিও তাই দেখছি, প্রতিদিনই মিডিয়াতে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর বিপরীতে তর্ক বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে পড়াশোনা করেছে এমনি অনেকই বাস্তব জীবনে একে অপরের সাথে তর্ক বিতর্ক করে শত্রুতে পরিণত হচ্ছে । যার পরিণতি আগামী দিনে দুপক্ষের কারো জন্যই ভালো হওয়ার কথা নয়।
এতো গেল বর্তমান অবস্থার একটি খন্ডচিত্র, কিন্তু এ অবস্থাকে মোকাবেলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে এ সমস্ত শয়তানদের কার্যকলাপ যে কোন মূল্যে কঠোর এবং অনমনীয় মনোভাবের মাধ্যমে দমন করতে হবে।
পরিশেষে বক্তা এবং আইজুদ্দিন উভয়ই ঐক্যবদ্ধ ভাবে সরকারের প্রতি আবেদন রাখলেন এভাবে, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রক্ত, অন্ধ, পঙ্গু, বিকলাঙ্গদের অঙ্গহানি, তাদের পরিবারবর্গের কষ্টের গল্প গাঁথা স্মরণে রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিনিয়োগকারীদের জন্য এমন সুবিধা করে দিতে হবে, যাতে স্থানীয় শয়তানদের কোন কর্মে তাদের মনে এ আশঙ্কা না হয় যে, এখানে বিনিয়োগ করতে এসে তারা আবার বিপদে পড়বেন। বরং এমনটি যেন হয়, নিরাপদে তারা তাদের ব্যবসা করতে পারবেন, সে ব্যবস্থা যে কোন মূল্য বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
পরিশেষে আমাদের সাধারণ জনতাদেরকেও ভাবতে হবে যে, দেশের কল্যাণের জন্য দেশবিরোধী কাজে সংশ্লিষ্ট যে কোন অপরাধীকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়ে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেবার কথা।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।