Advertisement

প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ২০:০৫, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২০:৫২, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

নিত্যচিত্র বাংলাদেশ 

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতা

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতা
ছবি: সবার দেশ

সময় ৩.৫৯ মিনিট বিকেল, কাঁটাবন মসজিদের উত্তর পাশে অর্থাৎ সিগন্যালের উত্তর-পশ্চিম কর্নার। বাটা সিগন্যাল থেকে একটি এম্বুলেন্স পূর্ব দিকে পিজি হাসপাতাল অভিমুখে  ক্রস করছিলো হঠাৎ একজন এএসআই এক হাত ইশারা করে অ্যাম্বুলেন্সটি বাম দিকে থামাতে বললেন আর অন্য হাতে কর্তব্যরত আরেক সাব ইন্সপেক্টরকে আসতে ইশারা দিলেন।

ইতিমধ্যে এম্বুলেন্সটি রাস্তার বাম দিকে ফুটপাত ঘেঁষে পার্ক করলো, পূর্ব দিক থেকে তৃতীয় একজন ব্যক্তি এ অবস্থা দেখে ক্রমশ তাদের দিকে অগ্রসর হলেন।  
এএসআই: আপনার লাইসেন্স দিন। 
ড্রাইভার: কেন ভাইয়া 
তাদের উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা নরম সুরে থাকতে থাকতেই তা যেন গরম হতে না পারে সেজন্য এগিয়ে এসে___
তৃতীয় ব্যক্তি: ভাইয়া কি হয়েছে।
এএসআই: উনার কাগজপত্র চেক করবো, আবার ড্রাইভারকে বললেন লাইসেন্স দিন।
তৃতীয় ব্যক্তি: উনি কি সিগন্যাল অমান্য করেছেন?
এএসআই: না, 
তৃতীয় ব্যক্তি: তাহলে 
এএসআই: উনার কাগজপত্র চেক করবো 
ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে এসে কি কিছু বলতে চাওয়ার আগেই তৃতীয় ব্যক্তি ড্রাইভারকে থামিয়ে দিয়ে এএসআই এর উদ্দেশ্যে বললেন__
তৃতীয় ব্যক্তি: ভাই উনি যদি সিগন্যাল ব্রেক না করে থাকে তাহলে কাগজপত্র চেক করার কি আছে, অযথা রাস্তায় জ্যাম না বাধিয়ে উনাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। 
ইতোমধ্যে সাব ইন্সপেক্টর আসলেন (নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না) অনুরূপভাবে ড্রাইভারকে গাড়ির কাগজপত্র দিতে বললেন।
ড্রাইভার: আমি তো কোন সিগন্যাল ব্রেক করিনি, আমার কি দোষ? 
তৃতীয় ব্যক্তি: ভাই অযথা ঝামেলা করে কি লাভ? 
সাব ইন্সপেক্টর: আপনি কে, আপনি যান (একটু ধমকের সুরে)। 
ষাটোর্ধ্ব বয়সের তৃতীয় ব্যক্তি সাব ইন্সপেক্টর থেকে এরূপ ব্যবহার আশা করেননি,
তৃতীয় ব্যক্তি: ভাই আমি একজন সিনিয়ার সিটিজেন, আমার ইচ্ছে বিনা ঝামেলায় ব্যাপারটি সুরাহা হয়ে যাক, যেহেতু সে কোন আইনের লঙ্ঘন করেনি। 
সাব ইন্সপেক্টর: (মোটামুটি একটু রাগত স্বরে) ভাই আপনি আমাদের ডিস্টার্ব করছেন, আপনি আপনার কাজ করেন।
তৃতীয় ব্যক্তি: ডিস্টার্ব করার কি আছে, নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের প্রচেষ্টা করছি মাত্র।
সাব ইন্সপেক্টর: (আবারো ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে) কাগজ দেন এবং (তৃতীয় ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে) এ ভাই! আপনি যানতো, আপনি যান, আপনার কাজ করেন গিয়ে, যান।
তৃতীয় ব্যক্তি: ভাই আমি আপনাকে তো খারাপ কিছু বলিনি।
সাব ইন্সপেক্টর: খারাপ ভালো বুঝিনা আপনি আপনার কাজ করুন, যান। 
সাব ইন্সপেক্টরের এহেন ব্যবহারে বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে কিছু না বলে তিনি এএসআইকে উদ্দেশ্য করে_
তৃতীয় ব্যক্তি: ভাই কাজটা আপনারা ভালো করলেন না। আপনারা ইয়ং ম্যান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগনের সেবা করাই আপনাদের দায়িত্ব। আমি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে শুধু চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে বোঝানোর জন্য। অন্য কিছু নয়, কি আর করা দেখেন। 
একথা বলে তাদের প্রতি ঘৃণা ভরা মনে তিনি স্থান ত্যাগ করলেন। 

আজ সকাল বেলা রমনা পার্ক থেকে নিয়মিত শরীর চর্চা শেষে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল ক্রসিং এ অনুরূপ একটি ঘটনায় আমি নিজেই সাক্ষী । সেখানেও দুজন সাব ইন্সপেক্টর এবং একজন এএসআই তিন তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের ডিউটি চলাকালীন সময়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না করে একজন গাড়ির ড্রাইভারের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত দেখে কৌতুহলী মনে আমি তাদের সাথে কথা বলতে যাই । আশেপাশের দুজন পথচারীও এসে যোগ দেয় আমার সাথে, তারপরেও দেখি তারা বুঝতে চাচ্ছে না যে, এত ছোট ব্যাপার নিয়ে রাস্তায় ঝামেলা করা উচিত নয়। এতে যানজট হয়ে জনসাধারণের কষ্ট বাড়ে। 
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে যে, জনসাধারণের ভোগান্তিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের কোন খেয়াল নেই। তাদের চিন্তা কিভাবে এ ড্রাইভারকে জব্দ করা যায়, মামলা ঠুকে দেয়ার ব্যাপারেই তাদের আগ্রহ বেশি। আমরা অনুরোধ করলাম ভাই বাদ দেন অযথা ঝামেলা করেন না, আপনারা নজর রাখুন যাতে জন ভোগান্তি না হয় সেদিকে। 

বিগত দিনের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ তাই একই রকম, মাঝখানে কিছুদিন তারা একটু সাবধান ছিল। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, তাদের ব্যবহার আগের মতোই। ভেবেছিলাম ২৪ এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে তারা কিছুটা সাবধান হবে। সাবধান হয়েও ছিলো, কিন্তু আজকের দুটি ঘটনায় মন কোনভাবেই শান্ত হতে পারল না। যারা রাষ্ট্রের জনগণের সেবা করবে, তারা এ ধরনের আচরণ  কিভাবে করে এই ভেবে বড়ই কষ্ট পেলাম। জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে উল্টো জনগণকেই ভোগান্তি দেয়। পুলিশের প্রথম অক্ষরটি ‘পি’ দিয়ে শুরু তার মানে পোলাইট এ পোলাইট আচরণের কোন কিছুই তাদের মধ্যে দেখতে পেলাম না, খুব কষ্টের বিষয়। 

আসলে আমার মনে হয় সকালবেলা যে রকম আমার সাথে দু’জন ব্যক্তি পথচারী শামিল হয়ে তাদেরকে বারণ করেছিল যানজট না তৈরি করতে। 

ঠিক সেভাবে এরকম ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে অন্যান্য নাগরিকদেরও উচিত হবে এগিয়ে আসা, তাতে করে পুলিশ সদস্যদের আত্মোপলব্ধি হবে। এ সমস্ত ঘটনা মিটিয়ে দেয়ার জন্য তাদের উপরস্থ একদম শীর্ষের কর্মকর্তা কর্তৃক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, নাগরিকদের সাথে আপনারা সব সময় ভালো ব্যবহার করবেন । কারন পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য তা অতীব জরুরী । জনগণ এরকম পুলিশ দেখতে চায় যারা হবে জনগণের সত্যিকারের বন্ধু, যাতে জনগণ তাদের কাছে ভিড়তে চায় সহজে। 

আমার এ লেখাটি পড়ছেন এর মধ্যে আমার কিছু পুলিশ অফিসার বন্ধুরাও পড়বে আমার বন্ধু লিস্টে ইন্সপেক্টর থেকে আরম্ভ করে এডিশনাল আইজি পর্যন্ত আছেন।
 
আমার পুলিশ বন্ধুরা সহ অন্যান্য পুলিশ ভাই যারা যেই পদমর্যাদায় থাকেন না কেন তাদের সকলের প্রতি আবেদন, জাতিকে সেবা দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ আপনাদের আছে । সঠিক পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের মাধ্যমে জনগণকে সন্তুষ্ট করে আপনারা তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিন।

লেখক: 
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন: