চারজন অভিযুক্ত
মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ মামলায় পুলিশের চার্জশিট

মাগুরার চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। রোববার (১৩ এপ্রিল ২০২৫) বিকেলে মাগুরা জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশ এ চার্জশিট দাখিল করে।
চার্জশিটে প্রধান আসামি হিটু শেখসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী চার্জশিট জমার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি হিটু শেখকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নিহত শিশুর বোনের জামাই সজিব শেখ ও তার ভাই রাতুল শেখের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শিশুর বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগমের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের পর এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ মাগুরা সদর উপজেলার শিশুটি তার নিজ বাড়ি থেকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। ৫ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে শিশুটি ধর্ষণের হয়। এ নৃশংস ঘটনার পর শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৩ মার্চ দুপুরে সেখানে শিশুটির মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর ৮ মার্চ শিশুটির মা আয়েশা খাতুন বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী সজিব শেখ, শ্বশুর, শাশুড়ি জাহেদা বেগম এবং ভাশুর রাতুল শেখকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং সব আসামিকে গ্রেফতার করে। তদন্তের একপর্যায়ে প্রধান আসামি হিটু শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে সকল আসামি কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশের তদন্তে ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে হিটু শেখের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সজিব শেখ ও রাতুল শেখের বিরুদ্ধে ঘটনার সময় ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া জাহেদা বেগমের বিরুদ্ধে ঘটনার তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত শেষে পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আলোকে চার্জশিট প্রস্তুত করে এবং তা আদালতে জমা দেয়।
এ ঘটনা মাগুরাসহ সারা দেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেকে এ ঘটনাকে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার একটি জঘন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি জানান।
চার্জশিট জমা দেয়ার পর মামলাটি এখন আদালতের পরবর্তী শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে এ ধরনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। তবে, আদালতের চূড়ান্ত রায়ের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
মাগুরার এ ঘটনা শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সমাজের সব মহল এখন এ মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সবার দেশ/এমকেজে