স্যুটিং নয়, বাস্তব: অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানকে মারধর করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল ২০২৫) রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
ঘটনার বিবরণ:
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল যুবক সিদ্দিকুর রহমানকে দুপাশ থেকে ধরে টানাহেঁচড়া করছেন এবং তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ভিডিওতে একজন যুবককে বলতে শোনা যায়, আমরা সিদ্দিককে, আওয়ামী লীগের একজন দালালকে আমরা পুলিশে হস্তান্তর করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে, যুবকদের এ দলটি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে গঠিত ছিলো, যদিও এ বিষয়ে সরকারি বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো নিশ্চিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, সিদ্দিককে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রমনা থানায় নিয়ে আসা হয়। এসআই বলেন, তিনি বর্তমানে রমনা থানাতেই আছেন। তবে, সিদ্দিককে কোনো নির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচেষ্টা:
ঘটনার বিষয়ে জানতে সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তার ঘনিষ্ঠজনরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারেননি।
সিদ্দিকুর রহমানের পটভূমি:
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় জন্ম নেয়া সিদ্দিকুর রহমান দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ১৯৯৯ সালে আরামবাগ থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চে কাজ শুরু করেন এবং ‘রাজারগল্প’, ‘পেজগি’, ‘বলদ’সহ বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন। ২০০৫ সালে দীপংকর দীপনের ‘রৌদ্র ও রোদেলার কাব্য’ নাটকে ‘কাউয়া সিদ্দিক’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেন।
ইফতেখার আহমেদ ফাহমি ও রেদওয়ান রনির ‘হাউসফুল’ নাটকে ‘সিদ্দিক’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়া ‘কবি বলেছেন’, ‘গ্র্যাজুয়েট’, ‘মাইক’, ‘চৌধুরী সাহেবের ফ্রি অফার’, ‘জাপানি ভিসা’, ‘হাই প্রেশার’সহ বিভিন্ন নাটক ও ‘এইতো ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও বিতর্ক:
সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ঢাকা-১৭ এবং টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ও ধনবাড়ি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একাধিকবার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু সফল হননি। ২০২৩ সালে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে, সিদ্দিক আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বিএনপি এবং তার নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ও সমালোচনা করেছিলেন, যা তার বিরুদ্ধে এ হামলার কারণ হতে পারে। তবে, এ দাবিগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে হামলার কারণ সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি।
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া:
সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ ছাত্রদলের এ পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও, অনেকে এটিকে সহিংসতা ও বিচারহীনতার উদাহরণ হিসেবে সমালোচনা করেছেন। একজন নেটিজেন লিখেছেন, অভিনেতাদের রাজনীতিতে জড়ানো এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতি অন্ধ সমর্থন দেয়া এ ধরনের পরিণতির কারণ হতে পারে।
সবার দেশ/কেএম