ভারতের নতুন কৌশল
বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সে রেল প্রকল্প স্থগিত

ভারত বাংলাদেশের মাধ্যমে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টার্স) সংযোগের জন্য পরিকল্পিত রেল প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছে। ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ ও ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা’র কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ২০ এপ্রিল দ্য হিন্দু জানিয়েছে।
ভারতের এমন সিদ্ধান্তের ফলে তিনটি চলমান প্রকল্প ও পাঁচটি জরিপ কাজ বন্ধ হয়েছে, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সের সংযোগ পরিকল্পনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।
স্থগিত প্রকল্পগুলো
স্থগিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ: ৪০০ কোটি রুপির এই প্রকল্পে ১২.২৪ কিমি রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছিলো, যার ৬.৭৮ কিমি বাংলাদেশে ও ৫.৪৬ কিমি ত্রিপুরায়।
- খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন: ৩,৩০০ কোটি রুপির এই প্রকল্পে ৬৫ কিমি ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে মোংলা বন্দরকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিলো।
- ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ: ১,৬০০ কোটি রুপির এ প্রকল্পের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া, পাঁচটি জরিপ কাজও বন্ধ রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো শিলিগুঁড়ি করিডরের (চিকেন নেক) ওপর নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
ভারতের বিকল্প কৌশল
বাংলাদেশের প্রকল্প স্থগিত করায় ভারত এখন বিকল্প পথে মনোযোগ দিচ্ছে:
- অভ্যন্তরীণ রেল অবকাঠামো উন্নয়ন: উত্তর প্রদেশ ও বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।
- নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সংযোগ: ৩,৫০০-৪,০০০ কোটি রুপির প্রকল্পে নেপাল ও ভুটান হয়ে সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। উদাহরণস্বরূপ, বিরাটনগর-নিউ মাল (১৯০ কিমি) ও গালগালিয়া-ভদ্রপুর রেললাইন নির্মাণের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
- পশ্চিমবঙ্গে নতুন রেললাইন: শিলিগুঁড়ি করিডরে কুমেডপুর-আম্বারি ফালাকাতা (১৭০ কিমি) ও পশ্চিমবঙ্গ-বিহার সংযোগে ২৫ কিমি নতুন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক
২০২৪ সালে ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের মূল্য ছিলো ১২.৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশে নির্মাণ সামগ্রী পাঠানো বন্ধ রয়েছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্প পুনরায় শুরু করতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
প্রভাব
এ সিদ্ধান্ত ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা। তবে ভারত অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক কৌশলের মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। সূত্র: দ্য হিন্দু, এমটিআই
সবার দেশ/কেএম