তার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা কেবলই কাগুজে ও ফরমায়েশি
পুতুলের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
যোগ্যতা না থাকলেও মেয়ে পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগে তার ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন শেখ হাসিনা। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরেও সফরসঙ্গী করেছেন তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালকের পদ পাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সে দায়িত্ব নেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। আর গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।
পুতুলের দুর্নীতির বিষয়ে যে সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, যোগ্যতা না থাকলেও মেয়ে পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগে তার ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন শেখ হাসিনা। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরেও সফরসঙ্গী করেছেন তিনি।
সায়মা ওয়াজেদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে যেসব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা কেবলই কাগুজে ও ফরমায়েশি বলে দুদকের তৈরি করা সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে।
দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, পুতুলের অযোগ্যতাকে ধামাচাপা দিতে ২০২৩ সালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সাথে করে ভারত নিয়ে যান।
একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দল দিল্লিতে অবস্থান করেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এবং তার মায়ের রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছিলেন বলেও দুদকের নথিতে উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য এর আগে এ বিষয়ে বৃটেনের প্রভাবশালী মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানচেট একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক পরিচালক মুকেশ কপিলা বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদকে ঘিরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাবমূর্তিতে লেজেগোবরে অভিজ্ঞতা দেখা দিয়েছে। এটা শুধু এ অঞ্চলের জন্যই নয়, বিশ্বব্যাপী এমন প্রভাব পড়েছে। অবশ্যই এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকে খর্ব করেছে। একই সঙ্গে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মানুষদের জন্য খোরাক হয়েছে, যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ বলেন, যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো সদস্য দেশ দ্বারা বা তাদের ভিতরে অন্যায়ের অভিযোগ থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট জাতীয় কর্তৃপক্ষ এর তদন্ত করতে পারে যথার্থভাবে। এসব তদন্ত বা কোনো আইনগত বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনও মন্তব্য করবে না।
সবার দেশ/এনএম