Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

১৫ বছর পর সচিব পর্যায়ের বৈঠক, সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় 
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১৫ বছর পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে বুধবার (১6 এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান। 

এটি ২০১০ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রথম সচিব পর্যায়ের বৈঠক, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈঠকের বিস্তারিত:

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আগামী ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন-এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন, আর পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্বে থাকবেন আমনা বালুচ। বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজের পর আমনা বালুচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

আলোচনার বিষয়বস্তু:

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আকাশপথে যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, সংস্কৃতি, এবং খেলাধুলা খাতে সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এছাড়া, সার্ক, ওআইসি, এবং ডি-৮-এর মতো আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়েও আলোচনার সুযোগ থাকবে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি যৌথ কমিশন পুনর্বহাল এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য বিশেষায়িত কর্মসূচির প্রস্তাব উঠতে পারে।

অমীমাংসিত ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান: 

বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে আন্তরিক হলেও, ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, ১৯৭১-পূর্ব সম্পদের হিস্যা, এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রাপ্ত বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অমীমাংসিত ইস্যুগুলো যতোদিন সমাধান না হবে, ততোদিন আলোচনার টেবিলে উঠবে। আমরা চাই পাকিস্তান এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করুক।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সম্পর্কের গতিপথ: 

২০১০ সালে ইসলামাবাদে সর্বশেষ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং ২০০৫ সালে অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে দীর্ঘ স্থবিরতা ছিলো। তবে, গত বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে সম্পর্ক উন্নয়নে দুই পক্ষই আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ৫০ হাজার টন চালের চালানের মাধ্যমে সরাসরি বাণিজ্য শুরু, সরাসরি বিমান যোগাযোগ, এবং ভিসা নীতি শিথিলকরণ এরই ইঙ্গিত দেয়। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের চলতি মাসের শেষে ঢাকা সফরের বিষয়টিও এই বৈঠকে আলোচনায় আসবে।

বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক:  

আমনা বালুচের ঢাকা সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ সাক্ষাৎ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একই দিনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানালেও, প্রধান উপদেষ্টার অস্পষ্ট সময়সীমা (ডিসেম্বর থেকে জুন) নিয়ে দলটি হতাশা প্রকাশ করেছে। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: 

কূটনৈতিক সূত্রমতে, এ বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করবে। পাকিস্তান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী, বিশেষ করে পাকিস্তানি এয়ারলাইন্স ফ্লাই জিন্নাহ এবং এয়ার সিয়ালের ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। তবে, বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান অগ্রাধিকার। একজন কূটনীতিক মন্তব্য করেন, ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। পাকিস্তানকে এখন নতুন কিছু প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

এ সফর ও আলোচনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে, অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা না হলে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সবার দেশ/এমকেজে