এবি পার্টির সমালোচনা ও দাবি
‘১৪০০ শহিদের রক্তে দেয়ালে লেখা আ. লীগের ভবিষ্যৎ’

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ১৪০০ শহিদের রক্ত দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে গেছে। এ ভবিষ্যৎ কোনো কালো কালি দিয়ে মুছে নতুন করে লেখার প্রয়োজন হবে না।
সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আহ্বান
ফুয়াদ প্রশ্ন তুলে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রশ্ন আমরা কীভাবে মোকাবিলা করবো? এটাই এখন সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার শত্রু কে, আমার স্বার্থ কী—এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতি গড়ে উঠতে হবে। তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের জন্য আওয়ামী লীগ প্রশ্নটি ‘ক্রিটিক্যাল ইস্যু’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট যে মাফিয়া কার্টেল গড়ে তুলেছিলো, তারা সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়। যারা মনে করেন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক কনভেনশন মোতাবেক সিভিল পলিটিক্যাল রাইটস পাবে, তাদের প্রথমে আদালতে প্রমাণ করতে হবে তারা রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা পূরণ করে কি না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে জনতার আদালত ও বিচারিক আদালতে আওয়ামী লীগকে নিজেদের রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। তারা যদি রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা পূরণ করতে পারে, তবেই তাদের রাজনীতিতে থাকার প্রশ্ন উঠবে।
গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি
ফুয়াদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পূর্ববর্তী আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা চারটি গণতদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এগুলো হলো—শাপলা চত্বর গণহত্যা (২০১৩), পিলখানা গণহত্যা (২০০৯), গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় মদদে গুম-খুন ও অত্যাচার, এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান (২০২৪) নিয়ে। তিনি অভিযোগ করেন, গঠিত কমিশনগুলোর ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। তিনি বলেন, পিলখানা গণহত্যার তদন্ত কমিশনকে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। তারা মামলা আলোচনা, ফাইল রিকল বা সাক্ষী তদন্ত করতে পারবে না। এটি একটি আইওয়াশ।
তিনি আরও বলেন, গুম কমিশন গঠন করা হয়েছে, কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও জনবল দেয়া হয়নি। আমরা যে গণতদন্তের কাঠামো প্রস্তাব করেছিলাম, তাও দেয়া হয়নি। তিনি দাবি করেন, এ কমিশনগুলোর টার্মস অব রেফারেন্স পুনর্বিবেচনা করে গণতদন্তের আদলে আনতে হবে।
উন্মুক্ত শুনানির প্রস্তাব
ফুয়াদ জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে উন্মুক্ত শুনানির প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আমেরিকার কংগ্রেশনাল হিয়ারিং, ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মডেলে উন্মুক্ত শুনানি হতে হবে। শহিদ পরিবাররা তাদের কষ্ট, আকাঙ্ক্ষা ও গল্প বলার সুযোগ পাবে। বিটিভি এটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ শহিদ পরিবার ও জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে, কোনও সুশীল উপদেষ্টা, শাশুড়ি বা দিল্লির কথায় নয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি হুঁশিয়ারি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে ফুয়াদ বলেন, ১৪০০ শহিদের রক্তের কারণে আপনি আজ জেল থেকে মুক্ত। আপনার মামলাগুলো আদালতের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। যাদের রক্তের কারণে আপনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের রক্তের বদলা না নিলে জনগণ আপনাকে ক্ষমা করবে না। তিনি অভিযোগ করেন, জুলাইয়ের ১১৪ শহিদের কবর জিয়ারত করতে উপদেষ্টাদের সময় নেই। তিনি বলেন, কিছু উপদেষ্টা ৭১-এর চেতনা বিক্রি করে ১৪ ডিসেম্বরের শহিদদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে জুলাইয়ের ১১৪ শহিদের কবর জিয়ারত করার সময় তাদের নেই।
অভিযোগ ও দাবি
ফুয়াদ অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দুটি শক্তি (বিডিআর ও সেনাবাহিনী) ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, এদের বিচারের আড়ালে রক্ষা করার জন্য নতুন ব্লু-কলার ক্রাইম শুরু হয়েছে। তিনি গত ১৬ বছরের গুম, খুন ও রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের বিচারের জন্য গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই, এমনকি জুলাইয়ের গণকবর জিয়ারত করতে উপদেষ্টারা যাননি।
জনগণের মতামতের ওপর জোর
ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কোটি কোটি নাগরিকের মতামত গ্রহণ করতে হবে। গণতদন্ত কমিশনে উন্মুক্ত শুনানির মাধ্যমে জনগণ নিবন্ধন করে তাদের মতামত দিতে পারবে। এ মতামতের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ প্রশ্ন ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত হবে। তিনি ইনকিলাব মঞ্চে শহিদ পরিবারদের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, তাদের কথাই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
সবার দেশ/কেএম