ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ বিল ইস্যুতে সারজিস
মোদিকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই

ভারতের পার্লামেন্টে সম্প্রতি পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ বিল ঘিরে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। লোকসভায় ২৮৮-২৩২ ভোটে পাস হওয়া এ বিলকে মুসলিমদের ধর্মীয় স্বার্থের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে দেশটির বিরোধী পক্ষ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সোমবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এক পোস্টে বলেন, ওয়াকফ বিল আইনে পরিণত হওয়ায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় আর বড় ধোঁকা হয়ে থাকলো। মোদির মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক নেতাকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই।
কী আছে নতুন ওয়াকফ আইনে?
বিলটিতে মূলত দুটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে—
- মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির বিধান।
- সরকারের সরাসরি খবরদারি ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি।
বহু মুসলিম বিশিষ্টজন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা—এ আইনের মাধ্যমে পুরোনো মসজিদ, কবরস্থান, মাদরাসা, খানকা এবং ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনাগুলো সরকারি মালিকানায় চলে যেতে পারে।
আরেকটি কালো আইন
সারজিস আলম তার পোস্টে বলেন, প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিক্রমে বিলটি আইনে পরিণত হওয়ায় ভারতের ইতিহাসে আরেকটি কালো অধ্যায় যুক্ত হলো। মোদি নিজেকে আরও উগ্র সাম্প্রদায়িক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের গ্রহণযোগ্যতাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলও এ বিল নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোববার (৬ এপ্রিল) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, মোদি সরকার মুসলিমবিরোধী আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর মুসলমানদের ঐতিহাসিক অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে।
তিনি আরও আশঙ্কা করেন, এ আইন ব্যবহার করে মুসলমানদের ঐতিহাসিক ও প্রাচীন মসজিদ এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ওয়াকফ আইন নিয়ে ভারতের ভেতরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে একে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
একাধিক মানবাধিকার সংস্থা মনে করছে, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ধাপে ধাপে প্রান্তিক করে দেয়ার রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই আইনটি পাস হয়েছে।
ওয়াকফ সম্পত্তি হলো— মুসলমানদের ধর্মীয়, শিক্ষাগত ও জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে দানকৃত স্থাবর সম্পত্তি, যা সাধারণত ওয়াকফ বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হয়। এ সম্পত্তিগুলোর মূল্য ভারতের শহর ও নগরে লক্ষ কোটি রুপির সমান। অনেকেই মনে করেন, এ আইন মূলত এ সম্পদকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতেই পরিকল্পিতভাবে আনা হয়েছে।
সবার দেশ/কেএম