Advertisement

সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

বসুন্ধরার মালিককে নিজ হাতে কেক খাইয়ে তোপের মুখে শফিক রেহমান

‘ছিঃ। ওয়াক থু মিষ্টার লাল গোলাপ’

‘ছিঃ। ওয়াক থু মিষ্টার লাল গোলাপ’
ছবি: সংগৃহীত

সুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বঘোষিত দোসর গ্রুপটির চেয়ারম্যান শাহ আলম ওরফে আহমদ আকবর সোবহানকে নিজ হাতে তুলে কেক খাইয়ে দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। শুধু তাই নয়, এসময় বিগত সরকারের নেপথ্য কারিগর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ভূয়সি প্রশংসা করতেও দেখা যায় লাল গোলাপ খ্যাত এ প্রবীণ সাংবাদিককে।

শফিক রেহমান এসময় আকবর সোবহানকে অমায়িক ও অসাধারণ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেন। তার এ অবাক কাণ্ড নিয়ে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক সমালোচনা।‌ গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন তার দীর্ঘদিনের ভক্ত-শুভাকাঙ্খীরা।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি বিপ্লবের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ৯০ ঊর্ধ্ব শফিক রেহমানের এমন অধঃপতনে বিস্মিত নেটিজেনরা বলছেন, ‘মুরুব্বী! মুরুব্বী! উহু! উহু!’। প্রথম দেখায় তার এমন কাণ্ড সত্য বলে বিশ্বাসই করতে পারেননি অনেকে। কেউ কেউ ভবেছিলেন ফটো ইঞ্জিনিয়ারিং। তাই ঘটনার সত্যতা জানতে অনেকেই ফোন কলে গণমাধ্যমের দারস্থ হয়েছেন।

নেটিজেনরা সমালোচনা করে লিখেছেন, ছাত্র-জনতার গণহত্যায় যেসব ফ্যাসিস্ট সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী ভূমিকা রেখেছে, দুঃখজনকভাবে শফিক রেহমান তাদেরকে সাথে নিয়ে চলছেন। হাসিনার দোসর বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে নিজ হাতে শুধু কেক খাইয়ে দেন নাই তিনি তার ভূয়সি প্রশংসাও করেছেন। তার এমন আচরণ শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার সাথে চরম বেইমানি। ওই অনুষ্ঠানে পলাতক হাসিনার চিহ্নিত দোসর সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলনও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক নাজমুস সাকিব এ ঘটনায় ‘ভূমিদস্যু বসুন্ধরার শাহ আলমের কাছে নিজেকে বিক্রি করলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

সেখানে তিনি বলেন, কৈশোরে বিটিভিতে জনপ্রিয় আট শো অনুষ্ঠান 'লাল গোলাপ' শুরু হওয়া মাত্র আমরা টিভি স্ক্রিনের সামনে সকল কাজ ফেলে ছুটে যেতাম। আমার মত একজন তরুণ সাংবাদিক বা অনলাইন অ্যাক্টিভেস্ট এর কাছে ৯১ বছর বয়সী শফিক রেহমান একজন জীবন্ত কিংবদন্তি এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। এ কারণেই বছরখানেক আগে আমারন লন্ডন সফরের সময় বহু কষ্টে তার ঠিকানা জোগাড় করে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তার সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনের নানা দিক এবং যে প্রক্রিয়াতে তার যায়যায়দিন পত্রিকাটি ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় দখল করা হয়েছিল এসব বিষয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছিলো। তার কাছ থেকেই জানতে পেরেছিলাম যায়যায়দিন কিভাবে হাতছাড়া হয়েছিল এবং কুখ্যাত ভূমিদস্য গ্রুপ বসুন্ধরা সেক্ষেত্রে কি ধরনের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা রেখেছিলো।

সাকিব আরও বলেন, বলেন, ৫ আগস্ট এর পট পরিবর্তনের পর তিনি যায়যায়দিন ফেরত পাবেন, নতুন ভাবে এর যাত্রা শুরু করবেন এটাই হল বাস্তবতা। কিন্তু আমরা কল্পনাও করিনি কুখ্যাত ভূমিদস্য এবং পতিত স্বৈরাচার হাসিনার অন্যতম দোসর ভূমিদস্য আহমদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে যায়যায়দিনের এ নবযাত্রা করবেন। 

পত্রিকাটির এ নতুন যাত্রায় তার সাথে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে আছেন তিনি মহা বাটপার শামসুল আলম লিটন। আমরা জানতে পেরেছি এ শামসুল আলম লিটনই ভূমিদস্য আহমদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের সাথে শফিক রেহমানের যোগাযোগ করে দিয়েছেন। তবে আমি এটাকে ব্যক্তিগতভাবে একমাত্র কারণ বলে মনে করি না ‌। কারণ তিনি তো কোন অবুঝ শিশু নন। আপনি জানেন যে, শাহ আলম হাসিনার অন্যতম দোসর। সে হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছিল এবং প্রকাশ্যে সে বলেছিল, মৃত্যুর আগেও শেখ হাসিনার সাথে আছে এবং মৃত্যুর পরেও হাসিনার সাথেই থাকতে চাই।

সমালোচনা করে নাজমুস সাকিব আরও বলেন, আজ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে শফিক রেহমানের মতো একজন মানুষ নিজেকে নর্দমার কিটে পরিণত করলেন। তিনি আজ বসুন্ধরার মালিকানাধীন কালের কন্ঠের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে গিয়ে নিজ হাতে এ ভূমিদস্যু শাহ আলমের মুখে কেক তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। তিনি এ অনুষ্ঠানে যেভাবে শাহ আলমের প্রশংসা করেছেন সেটা শুনে আমি আমার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারিনি। সাংবাদিকতা জগতের আইডল এ শফিক রেহমানের অধঃপতনে আমরা বিস্মিত।

সোশ্যার মিডিয়ায় শফিক রেহমানের সমালোচনার ঝড় বইছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান সমালোচনা করে বলেছেন, টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা। টাকা কথা রাখে, সারা পৃথিবীতেই টাকা কথা রাখে। কিন্তু আমাদের সমাজে একটু বেশি রাখে। পৃথিবীতে সবকিছুই টাকা চাইলে কিনতে পারে না। সারা পৃথিবীতে বাস্তবে সে অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শফিক রেহমান ৯০ বছর বয়সে বিক্রি হয়ে যান। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করে গেছেন সে শফিক রেহমান কালের কণ্ঠে গেলেন এবং ভুইসী প্রশংসা করলেন।

আলোচিত প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের কড়া সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, নিজ ইনসটিংক্টের প্রতি আমার সব সময়ই আস্থা ছিলো, থাকবে। সে কারণে, পরিচিত অনেকেরই শফিক রেহমানের প্রতি ব্যাপক সম্মান থাকলেও আমি কখনোই এ লোককে সিরিয়াসলি রিগার্ড করিনি। প্রতি সন্ধ্যায় গলা দিয়ে বাধ্যতামূলক এক-দুই গ্লাস লাল পানি পড়লেই যিনি খিস্তি আওড়ান, এমন লোককে বিশেষ কিছু ভাবা, অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা, হবেও না।

কাগুজে গোলাপ শফিক, আজ তার অওকাদ বা অবস্থান আবারো পরিস্কার করলো। ভূমিদস্যু, স্বৈরাচারের দোসর শাহ আলমকে মুখে তুলে কেক খাইয়ে দিয়ে এ লোক তার নোংরা ব্যক্তিত্বই আবার প্রকাশ করলো।

ফেস দ পিপলের সাইফুর রহমান সাগর লিখেছেন, জনাব শফিক রেহমান সাহেব আর সাংবাদিক নেতা কাদের গনি সাহেব। গনি সাহেবকে আগের সরকারের আমলে কখনো কথা বলার জন্য পাইনি। ভয়ে কথাই বলতেন না। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান সাহেব, আপনি কিসের বদৌলতে বসুন্ধরার মালিককে পাশে নিয়ে কথা বলছেন? শাহআলম সাহেবের আন্দোলনকালীন সময়ের কথাগুলি এখনো সবার মনে দাগ কেটে রেখেছে। আপনারা বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক করার জন্য কি ধরণের সন্ধি করেছেন জাতি জানতে চায়।

খন্দকার আকবর হোসেন লিখেছেন, কৈশোর থেকেই আপনাকে একজন চিরসবুজ আপোষহীন সাংবাদিক, লেখক আর তরুণদের আইডল মনে করতাম। সত্যের পক্ষে থাকার জন্য আপনার মতো একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষকেও পতিত অবৈধ সরকারের জেল-জুলুমের স্বীকার হতে হয়েছে। অথচ এ আপনিই যখন পতিত স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট মাফিয়া শেখ হাসিনার একজন অলিগার্কের আমন্ত্রন গ্রহন করে তার পাশে দাঁড়ান, তখন জুলাই-আগষ্টের রক্তঝরা বিপ্লবে শহীদের আত্মারা, হাজারো আহতরা, তাঁদের আত্মীয়-স্বজনরাসহ আমাদের মতো আম-জনতারা প্রচন্ড কষ্ট পায়। নিজের প্রতি বিশ্বাসও উঠে যায়। শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান, এ কষ্ট দেবার কোন অধিকার আপনার নেই। খুব বাজে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন।

আলমগীর হোসাইন শাহিন লিখেছেন, মিঃ শফিক রেহমান আপনি উচ্ছিষ্ট ভোগীর প্রথম কাতারে সামিল। দুঃখ জনক, লজ্জাজনক!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ। ওয়াক থু মিষ্টার লাল গোলাপ, আপনি এখন থেকে ধুতরা ফুলের অনুষ্ঠান করেন। বাংলাদেশ, গনতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং স্বাধীনতার শত্রু, বৈষম্যের মদদদাতা শিল্প পরিবারের প্রধান সমর্থক এবং সহোযোগীকে কেক খাইয়ে আপনি বুড়ো বয়সে জাতীর সাথে মসকারা নামক বেয়াদবি করলেন।

জিহাদ আল ফয়সাল লিখেছেন, আমি এভারগ্রীন বলতে যা বুঝতাম তা ছিলো শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান। উনার এই অধ:পতন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব!!!

মাহবুবুর রশিদ নামে একজন লিখেছেন, শফিক রেহমান আমরা আপনাকে কিন্তু মাথায় তুলেছি। নিচে নামাতে সময় লাগবে না।

সবার দেশ/কেএম

সম্পর্কিত বিষয়: